ইতালিতে গত মঙ্গলবার চরম জনবিক্ষোভের মুখে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সাজাপ্রাপ্ত এক যুদ্ধাপরাধীর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠান পণ্ড হয়ে গেছে। ওই দিন ইতালির রাজধানী রোমের কাছে আলবারো লাজিলা শহরে এরিখ প্রিবকে নামের ওই যুদ্ধাপরাধীর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল।
মঙ্গলবার এরিখ প্রিবকের লাশ বহনকারী গাড়িটি শহরের রক্ষণশীল ক্যাথলিক চার্চের সেন্ট পিউস সম্প্রদায়ের গোরস্থানের প্রধান ফটকে পৌঁছলে শত শত বিক্ষোভকারী গাড়িটির গায়ে লাথি মারেন। এ সময় তাঁরা বলেন, ‘আমাদের শহরে এই কসাইয়ের জায়গা হবে না।’ এ ছাড়া ‘যুদ্ধাপরাধীর ঠাঁই নেই’ সংবলিত একটি ব্যানারও লাশবাহী গাড়িটিতে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। পরে পুলিশের সহযোগিতায় লাশবহনকারী গাড়িটি রোমের একটি সামরিক বিমানবন্দরে ছাউনির হিমাগারে রাখা হয়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে ফ্যাসিস্ট জার্মানির এসএস কমান্ডার ছিলেন এরিখ প্রিবকে। তিনি ১৯৪৪ সালের ২৪ মার্চ রোমের কাছে নািসবিরোধী ৩৩৫ জন ইতালীয় যোদ্ধার হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিলেন।
প্রথম জীবনে হোটেল কর্মকর্তা হিসেবে ইউরোপের নানা নামীদামি হোটেলে চাকরি করেন প্রিবকে। ইতালীয় ভাষায় পারদর্শী প্রিবকে ১৯৩৬ সালে হিটলারের গোয়েন্দা সংস্থা গেস্টাপোর হয়ে কাজ করার জন্য ইতালিতে যান। সেখানে দ্রুতই তিনি ইতালির ফ্যাসিস্ট পুলিশের কমান্ডার হিসেবে কাজ শুরু করেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্রায় তিন বছর ইতালির রিমিনিতে মিত্র বাহিনীর হাতে বন্দী থাকেন প্রিবকে। ১৯৪৮ সালে একটি ক্যাথলিক চার্চের সহযোগিতায় ভিন্ন পরিচয়ে আর্জেন্টিনা পালিয়ে যান।
১৯৯৩ সালে আর্জেন্টিনায় এরিখ প্রিবকের আসল পরিচয় ফাঁস হয়ে গেলে দেশটির সরকার তাঁকে গৃহবন্দী করে রাখে। ১৯৯৫ সালে ইতালির অনুরোধে প্রিবকেকে রোমে ফেরত পাঠানো হয়। রোমের একটি সামরিক আদালত ১৯৯৬ সালে ৮৩ বছর বয়সী এই যুদ্ধবন্দীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেন।
চলতি মাসের ১১ তারিখ ১০০ বছর বয়সে এরিখ প্রিবকে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর মৃত্যুর পর থেকেই অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার অনুষ্ঠান নিয়ে জটিলতা শুরু হয়। প্রিবকের অন্তিম ইচ্ছা ছিল আর্জেন্টিনায় তাঁর স্ত্রীর কবরের পাশে কিংবা তাঁর জন্মস্থান বার্লিনের কাছে হেনিংসডর্ফে শেষ শয্যায় শায়িত হওয়া। তবে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ তা অনুমোদন করেনি।
| আপডেট: ২০:৫৮, অক্টোবর ১৭, ২০১৩