Tuesday, 31 December 2013


সালাম অস্ত 'রবি'

কাব্য-গীতির শ্রেষ্ঠ স্রষ্ঠা, দ্রষ্ঠা, ঋষি ও ধ্যানী
মহাকবি রবি অস্ত গিয়াছে! বীণা, বেণুকা ও বাণী
নীরব হইল। ধুলির ধরণী জানিনা সে কত দিন
রস- যমুনার পরশ পাবেনা। প্রকৃতি বাণীহীন
মৌন বিষাদে কাঁদিবে ভুবনে ভবনে ও বনে একা;
রেখায় রেখায় রুপ দিবে আর কাহার ছন্দ লেখা?
অপ্রাকৃত মদনে মাধবী চাঁদের জ্যোৎস্না দিয়া
রূপায়িত রসায়িত করিবে কে লেখনী, তুলিকা নিয়া?

ব্যাস, বাল্মীকি,কালিদাস, খৈয়াম, হাফিজ ও রুমী
আরবের ইমরুল কায়েস যে ছিলে এক সাথে তুমি!
সকল দেশের সক্ল কালের সকল কবিরে ভাঙ্গি'
তাঁহাদের রুপে রসে রাঙ্গাইয়া, বুঝি কত যুগ জাগি'
তোমারে রচিল রসিক বিধাতা, অপরুপ সে বিলাস,
তব রুপে গুনে ছিল যে পরম সুন্দরের আভাস।

এক সে রবির আলোকে তিমির- ভীত এ ভারপ্তবাসী
ভেলেছিল প্রাধীনতা- পিড়ন দুঃখ- দৈন্যরাশি।
যেন উর্ধ্বের বরাভয় তুমি আল্লাহর রহমত,
নিত্য দিয়াছ মৃত এ জাতিরে অমৃত শরবত,
সকল দেশের সব জাতির সকল লোকের তুমি
অর্ঘ্য আনিয়া ধন্য করিলে ভারত- বঙ্গভুমি।।

তোমার মরুতে তোমার আলোকে ছায়া- তরু ফুল-লতা
জমিয়া চির স্নিগ্ধ করিয়া রেখেছিল শত ব্যথা।
অন্তরে আর পাইনা যে আলো মানস-গগন-কবি,
বাহিরের রবি হেরিয়া জাগে যে অন্তরে তব ছবি।
গোলাব ঝরেছে, গোলাবি আতর কাঁদিয়া ফিরিছে হায়।
আতরে কাতর করে আরো প্রান, ফুলেরে দেখিতে চায়।

ফুলের, পাখির, চাঁদ-সুরুজের নাহি ক' যেমন জাতি,
সকলে তাদেরে ভালোবাসে, ছিল তেমনি তোমার খ্যাতি।
রস-লোক হতে রস দেয় যারা বৃষ্টিধারার প্রায়
তাদের নাহি ক' ধর্ম ও জাতি, সকলে ঘরে যায়
অবারিত দ্বার রস- শিল্পীর, হেরেমেও অনায়াসে
যায় তার সুর কবিতা ও ছবি আনন্দে অবকাশে।

ছিল যে তোমার অবারিত দ্বার সকল জাতির গেহে,
তোমারে ভাবিত আকাশের চাঁদ, চাহিত গভীর স্নেহে।
ফুল হারাইয়া আঁচলে রুমালে তোমার সুরভি মাখে
বক্ষে নয়নে বুলায়ে আতর, কেঁদে ঝরাফুল ডাকে।

আপন জীবন নিঙ্গাড়ি' যেজন তৃষাতুর জনগণে
দেয় প্রেম রস, অভয় শক্তি বসি' দূর নির্জনে,
মানুষ তাহারি তরে কাঁদে, কাঁদে তারি তরে আল্লাহ,
বেহেশত হতে ফেরেশ্তা কহে তাহারেই বাদশাহ।

শত রুপে রঙ্গে লীলা- নিকেতন আল্লার দুনিয়াকে
রাঙ্গায় যাহারা, আল্লার কৃপা সদা তাঁরে ঘিরে থাকে।
তুমি যেন সেই খোদার রহম, এসেছিল রুপ ধরে,
আর্শের ছায়া দেখাইয়া ছিলে রুপের আর্শি ভরে।

কালাম ঝরেছে তোমার কলমে, সালাম লইয়া যাও
উর্দ্ধে থাকি' এ পাষান জাতিরে রসে গলাইয়া দাও।।

কাজী নজরুল ইসলাম ।

Monday, 30 December 2013


SONG OF BANGLADESH
Joan Baez.

Bangladesh, Bangladesh
Bangladesh, Bangladesh
When the sun sinks in the west
Die a million people of the Bangladesh

The story of Bangladesh
Is an ancient one again made fresh
By blind men who carry out commands
Which flow out of the laws upon which nation stands
Which is to sacrifice a people for a land

Bangladesh, Bangladesh
Bangladesh, Bangladesh
When the sun sinks in the west
Die a million people of the Bangladesh

Once again we stand aside
And watch the families crucified
See a teenage mother’s vacant eyes
As she watches her feeble baby try
To fight the monsoon rains and the cholera flies

And the students at the university
Asleep at night quite peacefully
The soldiers came and shot them in their beds
And terror took the dorm awakening shrieks of dread
And silent frozen forms and pillows drenched in red


Bangladesh, Bangladesh
Bangladesh, Bangladesh
When the sun sinks in the west
Die a million people of the Bangladesh

Did you read about the army officer’s plea
For donor’s blood? It was given willingly
By boys who took the needles in their veins
And from their bodies every drop of blood was drained
No time to comprehend and there was little pain

And so the story of Bangladesh
Is an ancient one again made fresh
By all who carry out commands
Which flow out of the laws upon which nations stand
Which say to sacrifice a people for a land

Bangladesh, Bangladesh
Bangladesh, Bangladesh
When the sun sinks in the west
Die a million people of the Bangladesh

তুমি বলেছিলে

দাউ দাউ পুড়ে যাচ্ছে নতুন বাজার।
পুড়ছে দোকান-পাট, কাঠ,
লোহা-লক্কড়ের স্তূপ, মসজিদ এবং মন্দির।
দাউ দাউ পুড়ে যাচ্ছে নতুন বাজার।


বিষম পুড়ছে চতুর্দিকে ঘর-বাড়ি।
পুড়ছে টিয়ের খাঁচা, রবীন্দ্র রচনাবলি, মিষ্টান্ন ভাণ্ডার,
মানচিত্র, পুরনো দলিল।
মৌচাকে আগুন দিলে যেমন সশব্দে
সাধের আশ্রয় ত্যাগী হয়
মৌমাছির ঝাঁক,
তেমনি সবাই
পালাচ্ছে শহর ছেড়ে দিগ্গি্বদিক। নবজাতককে
বুকে নিয়ে উদ্ভ্রান্ত জননী
বনপোড়া হরিণীর মতো যাচ্ছে ছুটে।
অদূরে গুলির শব্দ, রাস্তা চষে জঙ্গী জীপ। আর্ত
শব্দ সবখানে। আমাদের দু’জনের
মুখে খরতাপ। আলিঙ্গনে থরো থরো
তুমি বলেছিলে,
‘আমাকে বাঁচাও এই বর্বর আগুন থেকে, আমাকে বাঁচাও,
আমাকে লুকিয়ে ফেলো চোখের পাতায়
বুকের অতলে কিংবা একান্ত পাঁজরে
আমাকে নিমেষে শুষে নাও
চুম্বনে চুম্বনে।’

দাউ দাউ পুড়ে যাচ্ছে নতুন বাজার,
আমাদের চৌদিকে আগুন,
গুলির ইস্পাতী শিলাবৃষ্টি অবিরাম।
তুমি বলেছিলে,
আমাকে বাঁচাও।
অসহায় আমি তাও বলতে পারিনি।


#শামসুর রাহমান

বাংলা ছাড়ো 

রক্তচোখের আগুন মেখে ঝলসে যাওয়া আমার বছরগুলো
আজকে যখন হাতের মুঠোয় কণ্ঠনালীর খুন পিয়াসী ছুরি
কাজ কি তবে আগলে রেখে বুকের কাছে কেউটে সাপের ঝাপি
আমার হাতেই নিলাম আমার নির্ভরতার চাবি
তুমি আমার আকাশ থেকে সরাও তোমার ছায়া
তুমি বাংলা ছাড়ো

অনেক মাপের অনেক জুতোর দামে তোমার হাতে
দিয়েছি ফুল হৃদয় সুরভিত
সে ফুল খুঁজে পায়নি তোমার চিত্তরসের ছোঁয়া
পেয়েছে শুধু কঠিন জুতোর তলা
আজকে যখন তাদের স্মৃতি অসন্মানের বিষে
তিক্ত প্রানে শ্বাপদ নখের জ্বালা
কাজ কি চোখের প্রসন্নতায় লুকিয়ে রেখে প্রেতের অট্টহাসি
আমার কাঁধেই নিলাম তুলে আমার যত বোঝা
তুমি আমার বাতাস থেকে মুছো তোমার ধূলো
তুমি বাংলা ছাড়ো


একাগ্নতার স্বপ্ন বিনিময়ে মেঘ চেয়েছি
ভিজিয়ে নিতে যখন পোড়া মাটি
বারে বারেই তোমার খরা আমার খেতে বসিয়ে গেছে ঘাঁটি
আমার প্রীতি তোমার প্রতারনা
যোগ বিয়োগে মিলিয়ে
নিলে তোমার লাভের জটিল অন্কগুলো
আমার কেবল হাড় জুড়ালো হতাশ শ্বাসের ধূলো

আজকে যখন খুঁড়তে গিয়ে নিজের কবরখানা
আপন খুলির কোদাল দেখে সর্বনাশা বজ্র দিয়ে গড়া
কাজ কি দ্বিধায় বিষন্নতায় বন্দী রেখে ঘৃনার অগ্নিগিরি
আমার বুকেই ফিরিয়ে নেব ক্ষীপ্ত বাঘের থাবা
তুমি আমার জল স্থলের মাদুর থেকে নামো
তুমি বাংলা ছাড়ো

# সিকান্দার আবু জাফর

আমার পরিচয়

আমি জন্মেছি বাংলায়
আমি বাংলায় কথা বলি।
আমি বাংলার আলপথ দিয়ে, হাজার বছর চলি।
চলি পলিমাটি কোমলে আমার চলার চিহ্ন ফেলে।
তেরশত নদী শুধায় আমাকে, কোথা থেকে তুমি এলে ?

আমি তো এসেছি চর্যাপদের অক্ষরগুলো থেকে
আমি তো এসেছি সওদাগরের ডিঙার বহর থেকে।
আমি তো এসেছি কৈবর্তের বিদ্রোহী গ্রাম থেকে
আমি তো এসেছি পালযুগ নামে চিত্রকলার থেকে।

এসেছি বাঙালি পাহাড়পুরের বৌদ্ধবিহার থেকে
এসেছি বাঙালি জোড়বাংলার মন্দির বেদি থেকে।
এসেছি বাঙালি বরেন্দ্রভূমে সোনা মসজিদ থেকে
এসেছি বাঙালি আউল-বাউল মাটির দেউল থেকে।

আমি তো এসেছি সার্বভৌম বারোভূঁইয়ার থেকে
আমি তো এসেছি ‘কমলার দীঘি’ ‘মহুয়ার পালা’ থেকে।
আমি তো এসেছি তিতুমীর আর হাজী শরীয়ত থেকে
আমি তো এসেছি গীতাঞ্জলি ও অগ্নিবীণার থেকে।

এসেছি বাঙালি ক্ষুদিরাম আর সূর্যসেনের থেকে
এসেছি বাঙালি জয়নুল আর অবন ঠাকুর থেকে।
এসেছি বাঙালি রাষ্ট্রভাষার লাল রাজপথ থেকে
এসেছি বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর থেকে।

আমি যে এসেছি জয়বাংলার বজ্রকণ্ঠ থেকে
আমি যে এসেছি একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ থেকে।
এসেছি আমার পেছনে হাজার চরণচিহ্ন ফেলে
শুধাও আমাকে ‘এতদূর তুমি কোন প্রেরণায় এলে ?

তবে তুমি বুঝি বাঙালি জাতির ইতিহাস শোনো নাই-
‘সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই।’
একসাথে আছি, একসাথে বাঁচি, আজো একসাথে থাকবোই
সব বিভেদের রেখা মুছে দিয়ে সাম্যের ছবি আঁকবোই।

পরিচয়ে আমি বাঙালি, আমার আছে ইতিহাস গর্বের-
কখনোই ভয় করিনাকো আমি উদ্যত কোনো খড়গের।
শত্রুর সাথে লড়াই করেছি, স্বপ্নের সাথে বাস;
অস্ত্রেও শান দিয়েছি যেমন শস্য করেছি চাষ;
একই হাসিমুখে বাজায়েছি বাঁশি, গলায় পরেছি ফাঁস;
আপোষ করিনি কখনোই আমি- এই হ’লো ইতিহাস।

এই ইতিহাস ভুলে যাবো আজ, আমি কি তেমন সন্তান ?
যখন আমার জনকের নাম শেখ মুজিবুর রহমান;
তারই ইতিহাস প্রেরণায় আমি বাংলায় পথ চলি-
চোখে নীলাকাশ, বুকে বিশ্বাস পায়ে উর্বর পলি।

সৈয়দ শামসুল হক

সংগ্রাম চলবেই

জনতার সংগ্রাম চলবেই,
আমাদের সংগ্রাম চলবেই। 
হতমানে অপমানে নয়, সুখ সম্মানে 
বাঁচবার অধিকার কাড়তে 
দাস্যের নির্মোক ছাড়তে 
অগণিত মানুষের প্রাণপণ যুদ্ধ 
চলবেই চলবেই, 
আমাদের সংগ্রাম চলবেই। 

প্রতারণা প্রলোভন প্রলেপে 
হ’ক না আঁধার নিশ্ছিদ্র 
আমরা তো সময়ের সারথী 
নিশিদিন কাটাবো বিনিদ্র। 

দিয়েছি তো শান্তি আরও দেবো স্বস্তি 
দিয়েছি তো সম্ভ্রম আরও দেবো অস্থি 
প্রয়োজন হ’লে দেবো একনদী রক্ত। 
হ’ক না পথের বাধা প্রস্তর শক্ত, 
অবিরাম যাত্রার চির সংঘর্ষে 
একদিন সে-পাহাড় টলবেই। 
চলবেই চলবেই 
আমাদের সংগ্রাম চলবেই 

মৃত্যুর ভর্ৎসনা আমরা তো অহরহ শুনছি 
আঁধার গোরের ক্ষেতে তবু তো’ ভোরের বীজ বুনছি। 
আমাদের বিক্ষত চিত্তে 
জীবনে জীবনে অস্তিত্বে 
কালনাগ-ফণা উৎক্ষিপ্ত 
বারবার হলাহল মাখছি, 
তবু তো ক্লান্তিহীন যত্নে 
প্রাণে পিপাসাটুকু স্বপ্নে 
প্রতিটি দণ্ডে মেলে রাখছি। 
আমাদের কি বা আছে 
কি হবে যে অপচয়, 
যার সর্বস্বের পণ 
কিসে তার পরাজয় ? 
বন্ধুর পথে পথে দিনান্ত যাত্রী 
ভূতের বাঘের ভয় 
সে তো আমাদের নয়। 

হতে পারি পথশ্রমে আরও বিধ্বস্ত 
ধিকৃত নয় তবু চিত্ত 
আমরা তো সুস্থির লক্ষ্যের যাত্রী 
চলবার আবেগেই তৃপ্ত। 
আমাদের পথরেখা দুস্তর দুর্গম 
সাথে তবু অগণিত সঙ্গী 
বেদনার কোটি কোটি অংশী 
আমাদের চোখে চোখে লেলিহান অগ্নি 
সকল বিরোধ-বিধ্বংসী। 
এই কালো রাত্রির সুকঠিন অর্গল 
কোনোদিন আমরা যে ভাঙবোই 
মুক্ত প্রাণের সাড়া জানবোই, 
আমাদের শপথের প্রদীপ্ত স্বাক্ষরে 
নূতন সূর্যশিখা জ্বলবেই। 
চলবেই চলবেই 
আমাদের সংগ্রাম চলবেই। 

# সিকান্দার আবু জাফর

Sunday, 29 December 2013


আমরা সেই সে জাতি


ধর্মের পথে শহীদ যাহারা আমরা সেই সে জাতি।
সাম্য মৈত্রী এনেছি আমরা বিশ্বে করেছি জ্ঞাতি।
আমরা সেই সে জাতি।।

পাপবিদগ্ধ তৃষিত ধরার লাগিয়া আনিল যারা
মরুর তপ্ত বক্ষ নিঙ্গাড়ি শীতল শান্তিধারা,
উচ্চ- নীচের ভেদ ভাঙ্গি দিল সবারে বক্ষ পাতি।
আমরা সেই সে জাতি।।

কেবল মুসলমানের লাগিয়া আসেনি ক ইসলাম
সত্যে যে চায়, আল্লায় মানে, মুসলিম তারি নাম।
আমির- ফকিরে ভেদ নাই সবে সব ভাই এক সাথী
আমরা সেই সে জাতি।।

নারীরে প্রথম দিয়াছি মুক্তি নর- সম অধিকার
মানুষে গড়া প্রাচীর ভাঙ্গিয়া করিয়াছি একাকার,
আঁধার রাতের বোরখা উতারি এনেছি আশায় ভাতি।
আমরা সেই সে জাতি।।

-কাজী নজরুল ইসলাম-

স্লোগান


স্লোগান দিতে গিয়ে
আমি চিনতে শিখি নতুন মানুষজন, স্লোগান,
স্লোগান দিতে গিয়ে
আমি বুঝতে শিখি কে ভাই, কে দুশমন, স্লোগান।
হাট মিটিঙে চোঙা ফুঁকেছি,
গেট মিটিঙে গলা ভেঙেছি,
চিনছি শহরগ্রাম,
স্লোগান দিতে গিয়েই আমি সবার সাথে আমার দাবি
প্রকাশ্যে তুললাম, স্লোগান।
স্লোগান দিতে গিয়ে আমি ভিড়ে গেলাম গানে,
গলায় তেমন সুর খেলে না, হোক বেসুরো পর্দাবদল,
মিলিয়ে দিলাম সবার সাথে মিলিয়ে দিলাম গলা,
ঘুচিয়ে দিয়ে একলষেঁড়ে চলা।
জুটলো যত আমার মত,
ঘরের খেয়ে বনের ধারে, মোষতাড়ানো উলটো স্বভাব,
মোষতাড়ানো সহজ নাকি, মোষের শিঙে মৃত্যু বাঁধা,
তবুও কারা লাল নিশানে উস্কে তাকে চ্যালেঞ্জ ছোঁড়ে,
স্লোগান।
স্লোগান দিতে গিয়ে, আমি বুঝেছি এই সার,
সাবাস যদি দিতেই হবে, সাবাস দেবো তার,
ভাঙছে যারা, ভাঙবে যারা খ্যাপা মোষের ঘাড়।

প্রতুল মুখোপাধ্যায় 

মানবানল

হেলাল হাফিজ
আগুন আর কতোটুকু পোড়ে?
সীমাবদ্ধ তার ক্ষয় সীমিত বিনাশ,
মানুষের মতো আর অতো নয় আগুনের সোনালী সন্ত্রাস।
আগুন পোড়ালে তবু কিছু রাখে
কিছু থাকে,
হোক না তা ধূসর শ্যামল রঙ ছাই,
মানুষে পোড়ালে আর কিছুই রাখে না
কিচ্ছু থাকে না,
খাঁ খাঁ বিরান, আমার কিছু নাই।

Saturday, 28 December 2013

২৪
স্বদেশ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
           সার্থক জনম আমার জন্মেছি এই দেশে।
           সার্থক জনম, মা গো, তোমায় ভালোবেসে॥
       জানি নে তোর ধনরতন  আছে কি না রানীর মতন,
       শুধু    জানি আমার অঙ্গ জুড়ায় তোমার ছায়ায় এসে॥
       কোন্‌ বনেতে জানি নে ফুল  গন্ধে এমন করে আকুল,
           কোন্‌ গগনে ওঠে রে চাঁদ এমন হাসি হেসে।
       আঁখি মেলে তোমার আলো  প্রথম আমার চোখ জুড়ালো,
           ওই আলোতেই নয়ন রেখে মুদব নয়ন শেষে॥

২৫ স্বদেশ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
        যে তোমায়   ছাড়ে ছাড়ুক,  আমি তোমায় ছাড়ব না মা!
                   আমি  তোমার চরণ—
  মা গো, আমি  তোমার চরণ করব শরণ,  আর কারো ধার ধারব না মা॥
          কে বলে তোর দরিদ্র ঘর,  হৃদয়ে তোর রতনরাশি—
  আমি   জানি গো তার মূল্য জানি,    পরের আদর কাড়ব না মা॥
     মানের আশে দেশবিদেশে  যে মরে সে মরুক ঘুরে—
  তোমার   ছেঁড়া কাঁথা আছে পাতা,  ভুলতে সে যে পারব না মা!।
     ধনে মানে লোকের টানে   ভুলিয়ে নিতে চায় যে আমায়—
  ও মা,    ভয় যে জাগে শিয়র-বাগে,  কারো কাছেই হারব না মা॥



৪০ স্বদেশ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
            শুভ  কর্মপথে ধর’ নির্ভয় গান।
            সব   দুর্বল সংশয় হোক অবসান॥
চির- শক্তির নির্ঝর নিত্য ঝরে লহ’ সে অভিষেক ললাট ’পরে। তব জাগ্রত নির্মল নূতন প্রাণ ত্যাগব্রতে নিক দীক্ষা, বিঘ্ন হতে নিক শিক্ষা— নিষ্ঠুর সঙ্কট দিক সম্মান। দুঃখই হোক তব বিত্ত মহান। চল’ যাত্রী, চল’ দিনরাত্রি— কর’ অমৃতলোকপথ অনুসন্ধান। জড়তাতামস হও উত্তীর্ণ, ক্লান্তিজাল কর দীর্ণ বিদীর্ণ— দিন-অন্তে অপরাজিত চিত্তে মৃত্যুতরণ তীর্থে কর’ স্নান॥
২০
স্বদেশ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
     বাংলার মাটি, বাংলার জল,  বাংলার বায়ু, বংলার ফল—
     পুণ্য হউক, পুণ্য হউক, পুণ্য হউক হে ভগবান॥
     বাংলার ঘর, বাংলার হাট,  বাংলার বন, বাংলার মাঠ—
     পূর্ণ হউক, পূর্ণ হউক, পূর্ণ হউক হে ভগবান॥
     বাঙালির পণ, বাঙালির আশা,  বাঙালির কাজ, বাঙালির ভাষা—
     সত্য হউক, সত্য হউক, সত্য হউক হে ভগবান॥
     বাঙালির প্রাণ, বাঙালির মন,  বাঙালির ঘরে যত ভাই বোন—
     এক হউক, এক হউক, এক হউক হে ভগবান॥



২১ স্বদেশ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
        আজি           বাঙলাদেশের হৃদয় হতে   কখন আপনি
তুমি এই অপরূপ রূপে বাহির হলে জননী! ওগো মা, তোমায় দেখে দেখে আঁখি না ফিরে! তোমার দুয়ার আজি খুলে গেছে সোনার মন্দিরে॥ ডান হাতে তোর খড়্গ জ্বলে, বাঁ হাত করে শঙ্কাহরণ, দুই নয়নে স্নেহের হাসি, ললাটনেত্র আগুনবরণ। ওগো মা, তোমার কী মুরতি আজি দেখি রে! তোমার দুয়ার আজি খুলে গেছে সোনার মন্দিরে॥ তোমার মুক্তকেশের পুঞ্জ মেঘে লুকায় অশনি, তোমার আঁচল ঝলে আকাশতলে রৌদ্রবসনী! ওগো মা, তোমায় দেখে দেখে আঁখি না ফিরে! তোমার দুয়ার আজি খুলে গেছে সোনার মন্দিরে॥ যখন অনাদরে চাই নি মুখে ভেবেছিলেম দুঃখিনী মা আছে ভাঙা ঘরে একলা পড়ে, দুখের বুঝি নাইকো সীমা। কোথা সে তোর দরিদ্র বেশ, কোথা সে তোর মলিন হাসি– আকাশে আজ ছড়িয়ে গেল ওই চরণের দীপ্তিরাশি! ওগো মা, তোমার কী মুরতি আজি দেখি রে! তোমার দুয়ার আজি খুলে গেছে সোনার মন্দিরে॥ আজি দুখের রাতে সুখের স্রোতে ভাসাও ধরণী– তোমার অভয় বাজে হৃদয়মাঝে হৃদয়হরণী! ওগো মা, তোমায় দেখে দেখে আঁখি না ফিরে! তোমার দুয়ার আজি খুলে সোনার মন্দিরে॥


স্বদেশ


রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
             আমরা   মিলেছি আজ মায়ের ডাকে।
        ঘরের হয়ে পরের মতন ভাই ছেড়ে ভাই ক’দিন থাকে?।
        প্রাণের মাঝে থেকে থেকে   ‘আয়’ ব’লে ওই ডেকেছে কে,
সেই    গভীর স্বরে উদাস করে—আর কে কারে ধরে রাখে?।
        যেথায় থাকি যে যেখানে   বাঁধন আছে প্রাণে প্রাণে,
সেই    প্রাণের টানে টেনে আনে—সেই   প্রাণের বেদন জানে না কে?।
        মান অপমান গেছে ঘুচে,  নয়নের জল গেছে মুছে—
সেই    নবীন আশে হৃদয় ভাসে ভাইয়ের পাশে ভাইকে দেখে॥
        কত দিনের সাধনফলে   মিলেছি আজ দলে দলে—
আজ    ঘরের ছেলে সবাই মিলে   দেখা দিয়ে আয় রে মাকে॥


শহীদদের প্রতি 

তোমাদের যা বলার ছিল
বলছে কি তা বাংলাদেশ ?
শেষ কথাটি সুখের ছিল ?
ঘৃণার ছিল ?
নাকি ক্রোধের,
প্রতিশোধের,
কোনটা ছিল ?
নাকি কোনো সুখের
নাকি মনে তৃপ্তি ছিল
এই যাওয়াটাই সুখের।
তোমরা গেলে, বাতাস যেমন যায়
গভীর নদী যেমন বাঁকা
স্রোতটিকে লুকায়
যেমন পাখির ডানার ঝলক
গগনে মিলায়।
সাঁঝে যখন কোকিল ডাকে
কারনিসে কি ধুসর শাখে
বারুদেরই গন্ধস্মৃতি
ভুবন ফেলে ছেয়ে
ফুলের গন্ধ পরাজিত
স্লোগান আসে ধেয়ে।
তোমার যা বলার ছিল
বলছে কি তা বাংলাদেশ ?
– আসাদ চৌধুরী

আগমনী


আজ তুমি আসিবে যে মেয়ে,
সেই ডোবা পুকুরের পানা পুকুরের, কলমীলতার
জাল দিয়ে ঘেরা পানি- সেই সে পানিতে নেয়ে।
মনে যদি হয় কলমী ফুলের কতকটা রঙ
লইও অধরে মেখে,
ঠোটেতে মাখিও আর একটুকু হাসি
লাল সাপলার ফোটা ফুলগুলি দেখে।
যদি মনে হয় সিক্ত বসনে একটু দাঁড়িও
ও অঙ্গ বেয়ে ঝরিবে সজল সোনা,
দোষ নিওনাক ডাহুকের ডাকে হয় যদি কিছু
ছোট ছোট গীতি বোনা।
দোষ দিওনাক হে লাজ-শোভনা! বক্ষে তোমার
যুগল কমল ফুল,
সিক্ত বসন শাসন না মানি
যদি উকি দেয় নিমেষে করিয়া ভুল;
যদি আকাশের সোনা সোনা রোদ
সেখানে ছড়ায়ে পড়ে,
তুমি খুব ভাল মেয়ে!
কোন অপরাধ রাখিও না অন্তরে।
রঙিন বসন আজ না পরিলে,
পদ্ম পাতার সবুজ শাড়ীটি
তোমারে মানায় ভাল।
শ্রী অঙ্গ হতে তারি ভাজে ভাজে হাসিবে খেলিবে
বিজলী লতার আলো।
সামনে দেখিবে ধান খেতগুলি,
অঙ্গ হইতে ছড়াইও কিছু সোনা,
ধান ছড়াগুলি নাচিয়া উঠিবে
বাতাসের দোলে হয়ে চঞ্চল মনা।
সাবধানে তুমি চলিও কন্যা!
সামনে রয়েছে মটরশুটির খেত;
পাতায় পাতায় রাঙা বউগুলি
ফুল হয়ে ওরা হেসে কুটি কুটি
স্বপ্নের ঘোরে কোন সে বধুর
পেয়ে যেন সঙ্কেত।
এখনো রাতের শিশিরের ফোটা শুকায়নি কারো গায়ে,
এখনো রাতের জড়িত জড়িমা লাগিয়া রয়েছে দুইটি আঁখির ছায়ে।
অতি সাবধানে চলিও কন্যা দুপায়ে সোনার
নূপুর যেন না বাজে;
এ মধু-স্বপন ভাঙিলে তাদের
কোথায় লুকাবে সে অপরাধের লাজে!
আরো সাবধান হইও কন্যা!
যদি কেউ ভুল ভরে,
সে ফুলের মাঝে তুমিও একটি
আর কোন কেহ লয় বা গননা করে।
আরো একটুকা এগিয়ে গেলেই সরষে খেতের পরে,
তোমারে আমার যত ভাল লাগে,
সে অনুরাগের হলুদ বসন
বিছাইয়া আছে দিক দিগন্ত ভরে।
ক্ষণেক সেখানে দাঁড়াও যদি বা
ভোমর ভোমরী ফুল হতে ফুলে ঘুরে,
যে কথা তোমারে বলিবার ভাষা খুঁজিয়া পাইনা,
সে সব তোমারে শোনাইবে সুরে সুরে।
মাঝে মাঝে সেথা উতল পবন ফুলের সুবাসে ঢুলে,
হেথায় সেথায় গড়ায়ে পড়িতে
বিলি দেবে সুখে তাদের মাথার চুলে।
মনে হবে তব, মাঠখানি যেন হেলিছে দুলিছে।
হলুদ স্বপন ভরে,
সাবধান হয়ো, সুগন্ধ বায়ে ছড়িয়ে যেয়ো না
আর কোন দেশ পরে।
যদি মনে লয় সেইখান হতে
কিছুটা হলুদ মাখিও তোমার গায়,
সারা মাঠখানি জীবন পাইবে
তোমার অঙ্গে জড়াইয়া আপনায়।
দুধারে অথই সরিষার বন
মাঝখান দিয়ে সরু বাঁকা পথখানি,
দোষ নিওনাক ফুলেরা তোমার
ধরিলে আঁচল টানি।
অতি সাবধানে ছাড়িও আঁচল,
যেন তাহাদের সুকোমল দলগুলি;
ভাঙিয়া না যায়, নিঠুর হয়োনা
যদি বা তাহার স্বগোত্র বলি
তোমরে বা ভাষে ভুলি।
আরো কিছু পথ চলিতে পাইবে কুসুম ফুলের খেত,
হলুদে লালেতে মেশামেশী যেন
মাঠের কবির অলিখিত সঙ্কেত।
যদি মনে লয় সেখানে হোছট
খাইও ইচ্ছা ভরে,
তোমার শাড়ীতে রঙ দিয়ে নিও,
কুসুম ফুলের খেতখানি তুমি
সারাটি অঙ্গে ধরে।
সামনে দেখিবে আম কাঁঠালের ছায়ায় শীতল
কৃষাণীর ছোট বাড়ি,
শাখায় শাখায় নানা পাখি ফেরে
সুনাম গাহিয়া তারি।
সেইখান দিয়ে চলিতে যদি বা
আমার মনের বাসনা হইয়া কুটুম পাখিরা,
তোমারে হেরিয়া কুটুম কটুম ডাকে,
খানিক থামিও, তুমি ও এমন সুন্দর মেয়ে!
কেমনে এড়াবে সেই ভালবাসাটাকে।
চোখ গেল বলি কোন পাখি যদি
কেঁদে ওঠে উভরায়,
দোষ নিওনাক, আমিও দৃষ্টি কবে হারায়েছি
ও রূপের ধূপছায়।
যেদিন তোমারে দেখিছি কন্যা!
আন কানো রূপ পশে না পরাণে আর,
আমার স্বর্গ মর্ত্ত্য বেড়িয়া তোমার বালিকা
কান্তির যেন স্নানশেষে বারিধার।
আরা কিছুদূর চলিলে হেরিবে
জাঙলা ভরিয়া কন্যা সাজানী সীমলতাগুলি
হইয়া নীলাম্বরী,
তোমার লাগিয়া অপেক্ষমাণ,
যদি কোনদিন অঙ্গে লওব পরি।
যেখানে কন্যা, খনেক দাঁড়িও!
কিবা রূপ মরি মরি!
দেহ রামধনু হতে বিছরিছে
উছলিত রুপ ছিরি।
সেখানে হয়ত কোন গেঁয়ো কবি সারিন্দা সুরে,
কাহিনীর কোন নায়ীকার রূপ দিয়ে,
তোমার নামটি বাজায়ে বাজায়ে নদী তীরে তীরে
ফেরে যদি তার আপন ব্যথারে নিয়ে;
কিছুটা তাহারে দিও প্রশ্রয়
ইচ্ছা হইলে তাহার কাহিনী জালে;
নিজেরে জড়ায়ে বাঁচিয়া রহিও
অনাগত কোন দূর ভবিষৎ কালে।
- জসীমউদ্দীন -

হে স্বদেশ হে আমার বাংলাদেশ// মোহাম্মদ রফিক

তোমার দেহের মতো খর-কৃপাণের মতো
দীর্ঘ ও উদ্যত ঋজু সারি সারি
শাল-তরু শ্রেণী দাঁড়িয়ে রয়েছে দুই পাশে;
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর চুমু খেলে ভয়ে ও বিহ্বলতায়
যেমন কম্পন জাগে তোমার দু’গালে ঠোঁটে, আজকে রাত্রেও তেমনি
উদগ্রীব অপেক্ষার রুদ্ধ শিহরন সাড়া
শাখে শাখে; শকুনের ডানার ঝাপটে যেন
ঢেউ উঠে ভয়াল সাগরে;
তোমার গায়ের রং যেন
তপ্ত কাঞ্চনের মতো
লেগে আছে সড়কের প্রতি ধুলিকণা সাথে,
চোখের মণির মতো সজল নিবিড় কালো
জমছে খণ্ড খণ্ড মেঘ সারাটা আকাশময়
হয়তো নামবে বৃষ্টি একটু পরে,
যেমন শোনিত চুঁয়ে চুঁয়ে পড়ছে তোমার পথে পথে
তাল ও তমাল শাখে, শত্রুর সৈন্যের বেয়নেটে
তোমার প্রাণের মতো উষ্ঞ লাল রক্ত
যেমন ঝরছে মাঠে মাঠে গঞ্জে বাটে;
ক’জন চলেছি আমরা সড়কের ‘পর দিয়ে এই
একটি ট্রাকে ঠাসাঠাসি উচিঁয়ে সঙীন দৃপ্ত
আমরা চলেছি এই নীরন্ধ্র রাতের মাঝামাঝি
তোমার প্রেমের ঋণ রক্ত ঋণ
রক্ত দিয়ে শোধ করে দিতে;
শুধু আলো হাওয়া চাঁদ বা সূর্যকিরণ নয়
তোমার শরীরে মাগো বিকট দুর্গন্ধ আছে,
ক্লান্ত শ্রান্ত অবসন্ন সব কচি কচি যোদ্ধাদের
ঘামে ভেজা ছেঁড়া গেঞ্জি ময়লা বিছানা হ’তে
বিবমিষা ছুটে আসে;
তোমার দেহের সাথে এ দুর্গন্ধে মাগো
আমাদের ভবিষ্যত যেন নবজাতকের মতো
হাত পা বাতাসে ছুঁড়ে খেলা করছে;
শুধু খালে বিলে মাঠে নদীতে নালায় জলে
বা সীতাকুণ্ডুর পর্বতমালায় নয়,
এইসব বৃষ্টিভেজা কাঁদামাখা তাঁবুতে তাঁবুতে যেন
তোমার মানচিত্রখানি কতগুলি
ছোট ছোট জারুল চারার মতো উষ্ঞ তাজা
হৃদয়ের সাথে লেপ্টে আছে।
বিভিন্ন টিলায় ট্রেঞ্চে রাইফেলে ট্রিগারে হাত চেপে
দেখছি প্রতিদিন হাজার হাজার জীর্ণ অবসন্ন ধর্ষিতা নারী
পুরুষের সাথে শত্রুর সন্ত্রাস গুলি বেয়নেট বেড়াজাল
কি করে এড়িয়ে মা আমার
হেঁটে চলেছে দল থেকে দলে দৃপ্ত পায়ে
কুয়াশার আস্তরণ ছিঁড়ে ভেঙেপড়া
প্রথম সূর্যের ক্ষীণ আলোর রেখার মতো
কম্পমান সম্ভাবনার দিকে! বহু পরে
অনেক রাতের শেষে আঁধারের আস্তরণ ভেঙে
নির্দয় নিশ্চিত সূর্য জরাজীর্ণ দেয়াল ফাটলে বট
বৃক্ষের চারার মতো যখন বেরিয়ে আসবে
ফেটে পড়বে বহু প্রতীক্ষিত
সেই আনন্দিত ক্ষণে
হয়তো দেখবে তোমার ঘরের পাশে
উজ্জ্বল পৈঠার ‘পর দু’একটি ফোঁটা
পুরনো মলিন রক্ত লেগে আছে,
তখন কি মনে পড়বে প্রিয়তমা
আমরা ক’জন মিলে অবিচল প্রত্যাশায়
তোমার প্রেমের ঋণ রক্ত-ঋণ
সহস্র সহস্র কোটি হায়েনার চিৎকারের মতো
সেই এক পৈশাচিক অন্ধকার রাতে
চলে গেছি রক্ত দিয়ে শোধ করে!



স্বদেশ

 রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

ও আমার         দেশের মাটি, তোমার ’পরে ঠেকাই মাথা।
তোমাতে          বিশ্বময়ীর,   তোমাতে   বিশ্বমায়ের আঁচল পাতা॥
তুমি                 মিশেছ মোর দেহের সনে,
তুমি                 মিলেছ মোর প্রাণে মনে,
তোমার ওই     শ্যামলবরন কোমল মূর্তি মর্মে গাঁথা॥
ওগো মা,          তোমার কোলে জনম আমার, মরণ তোমার বুকে।
                        তোমার ’পরে খেলা আমার দুঃখে সুখে।
তুমি                 অন্ন মুখে তুলে দিলে,
তুমি                 শীতল জলে জুড়াইলে,
তুমি যে            সকল-সহা সকল-বহা মাতার মাতা॥
ও মা,               অনেক তোমার খেয়েছি গো, অনেক নিয়েছি মা—
তবু                  জানি নে-যে কী বা তোমায় দিয়েছি মা!
আমার             জনম গেল বৃথা কাজে,
আমি               কাটানু দিন ঘরের মাঝে—
তুমি                বৃথা আমায় শক্তি দিলে শক্তিদাতা॥

2




Thursday, 26 December 2013

বাংলার গা থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে


বাংলার গা থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে,
রক্ত
গড়িয়ে পড়ছে…
কেউ ছুটে গেল খালের ওদিকে
বুক ফাটা গলায় কার মা ডাকল : “রবি রে…”
উত্তরের পরিবর্তে, অনেকের স্বর মিলে একটি প্রকাণ্ড হাহাকার
ঘুরে উঠল…
কে রবি? কে পুষ্পেন্দু? ভরত?
কাকে খুঁজে পাওয়া গেছে? কাকে আর পাওয়া যায় নি?
কাকে শেশ দেখা গেছে
ঠেলাঠেলি জনতাগভীরে?
রবি তো পাচার হচ্ছে লাশ হয়ে আরও সর লাশেদের ভিড়ে…

…বাংলার গা থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়েছে
রক্ত
গড়িয়ে পড়েছে
রক্ত
গড়িয়ে পড়েছে…
পিছনে কুকুর ছুটছে
ধর্, ধর্…
পিছনে শেয়াল
তার পিছু পিছু আসছে ভাণ্ড হাতে
রাজ অনুচর
এই রক্ত ধরে রাখতে হবে
এই রক্ত মাখা হবে সিমেন্টে বালিতে
গড়ে উঠবে সারি সারি
কারখানা ঘর
তারপর
চারবেলা ভোঁ লাগিয়ে সাইরেন বাজবে
এ কাজ না যদি পার, রাজা
তাহলে
বণিক এসে তোমার গা থেকে
শেষ লজ্জাবস্ত্রটুকু খুলে নিয়ে যাবে

আমার গুরুত্ব ছিল মেঘে
প্রাণচিহ্নময় জনপদে
আমার গুরুত্ব ছিল…
গা ভরা নতুন শস্য নিয়ে
রাস্তার দুপশ থেকে চেয়ে থাকা আদিগন্ত ক্ষেতে আর
মাঠে
আমার গুরুত্ব ছিল…
আজ
আমার গুরুত্ব শুধু রক্তস্নানরত
হাড়িকাঠে!

অনেক কিছুর মধ্য দিয়ে
সূর্য উঠে আসে
বন্ধ থাকা ইশ্কুলের গায়ে ও মাথায়
রোদ পড়ে
রোদ পড়ে মাটি খুড়ে চলা
কোদালে, বেলচায়
রোদ পড়ে নিখোঁজ বাচ্চার
রক্তমাখা স্কুলের পোশাকে…

…না, না, না, না, না—
না বলে চিত্কার করছে গাছ
না বলে চিত্কার করছে এই গ্রীষ্ম দুপুরের হাওয়া
না বলে চিত্কার করছে পিঠে লাশ বয়ে নিয়ে চলা
ভ্যান গাড়ি
আর আমরা শহরের কয়েকজন গম্ভীর মানুষ
ভেবে দেখছি না বলার ভাষারীতি ঠিক ছিল কিনা তাই নিয়ে
আমরা কি বিচারে বসতে পারি?

তুমি কি খেজুরি? তুমি ভাঙাবেড়া?
সোনাচূড়া তুমি?
বার বার প্রশ্ন করি । শেষে মুখে রক্ত উঠে আসে ।
আমার প্রেমের মতো ছাড়খার হয়ে আছে আজ গোটা দেশ
ঘোর লালবর্ণ অবিশ্বাসে ।

আমরা পালিয়ে আছি
আমরা লুকিয়ে আছি দল বেঁধে এই
ইটভাটায়
মাথায় কাপড় ঢেকে সন্ধ্যেয় বেরোই
মন্টুর আড়তে—
মল্লিকের
বাইকের পিছন-সিটে বসে
আমরা এক জেলা থেকে অপর জেলায়
চলে যাই,
যখন যেখানে যাই কাজ তো একটাই ।
লোক মারতে হবে ।
আপাতত ইটভাঁটায়
লুকিয়ে রয়েছি…
অস্ত্র নিয়ে…
কখন অর্ডার আসে, দেখি ।

পিছু ফিরে দেখেছি পতাকা ।
সেখানে রক্তের চিহ্ন, লাল ।
ক’বছর আগে যারা তোমাকে সাহায্য করবে বলে
ক’বছর আগে যারা তোমার সাহায্য পাবে বলে
রক্তিম পতাকটিকে নিজের পতাকা ভেবে কাঁধে নিয়েছিল
তাঁদের সবাইকে মুচড়ে দলে পিষে ভেঙে
দখল করেছ মুক্তাঞ্চল
পতাকাটি সেই রক্তবক্ষ পেতে ধারণ করলেন ।
তোমার কি মনে পড়ছে রাজা
শেষ রাত্রে ট্যাঙ্কের আওয়াজ?
মনে পড়ছে আঠারো বছর আগে তিয়েন-আন-মেন?

ভাসছে উপুর হয়ে । মুণ্ডু নেই । গেঞ্জি পড়া কালো প্যান্ট ।
কোন বাড়ির ছেলে?
নব জানে । যারা ওকে কাল বিকেলে বাজারে ধরেছে
তার মধ্যে নবই তো মাথা ।
একদিন নব-র মাথাও
গড়াবে খালের জলে,
ডাঙায় কাদার মধ্যে উলটে পড়ে থাকবে স্কন্ধকাটা
এ এক পুরনো চক্র ।
এই চক্র চালাচ্ছেন যে-সেনাপতিরা
তাঁদের কি হবে?
উজ্জ্বল আসনে বসে মালা ও মুকুট পরবে
সেসব গর্দান আর মাথা
এও তো পুরনো চক্র । কিন্তু তুমি ফিরে দেখ আজ
সে চক্র ভাঙার জন্যে উঠে দাঁড়িয়েছে গ্রাম—
ঘুড়ে দাঁড়িয়েছে কলকাতা ।
১০
অপূর্ব বিকেল নামছে ।
রোদ্দুর নরম হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে সারা মাঠে ।
রোদ্দুর, আমগাছের ফাঁক দিয়ে নেমেছে দাওয়ায় ।
শোকাহত বাড়িটিতে
শুধু এক কাক এসে বসে ।
ডাকতে সাহস হয় না তারও ।
অনেক কান্নার পর পুত্রহারা মা বুঝি এক্ষুনি
ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়লেন ।
যদি ঘুম ভেভে যায় তাঁর!
© জয় গোস্বামী ।



এই বাংলার মাটি 

আদর্শ বর্গ আয়তনে
সর্বাপেক্ষা ক্ষুদ্র পরিমাপের
একখন্ড মাটি নিয়ে হাতে তুলতেই সন্দেহ হলো
লাল নাকি ! মাটির মতো লোহাও লবন !

নানান চেহারা ছবি নানান ভঙ্গি
একটুকরো মাটির বর্গে
একেক আলোর নিয়মে একেক ঘটনা ফোটায়

অজ্ঞান হতে হতে মানুষেরা বিস্মিত হতে পারে
তবু, মাটি ধরে রাখে
আকাশের নীচের সকল ঘটনা

মাটি মাটিতে রাখলে মাটি
হাতে তুলে নিলে এই বাংলার মাটি
রক্তে ভিজে যায় ।

# সমুদ্র গুপ্ত

Monday, 23 December 2013

মুক্তিযুদ্ধের সারাংশ

# মিজানুর রহমান তরুণ

মুক্তিযুদ্ধের ভাবনা ভেবেছি
                ভাষা নিয়ে বায়ান্নে
মুক্তিযুদ্ধের প্লট এঁকেছি
                ছ’ দফার আন্দোলনে।
মুক্তিযুদ্ধের শোভা দেখেছি
               ঊনসত্তরের গণআন্দোলনে
তখন মুক্তিযুদ্ধের মিছিল হত
               গণতন্ত্রের আবরণে,
আবার ভোট-যুদ্ধেও জয় এনেছে
               বাংলার জনগণে।
মুক্তিযুদ্ধ অটুট থেকেছে
               যোদ্ধার আহ্বানে
মুক্তিযুদ্ধ মহান হয়েছে
              জীবনযৌবন দানে।
মুক্তিযুদ্ধ ইতিহাস লিখেছে
             শহীদের রক্তদানে
মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছে
            বজ্রকন্ঠের আহ্বানে।
মুক্তিযুদ্ধের কবিতা লিখেছি
           একাত্তরে স্টেনগানে
মুক্তিযুদ্ধ সুরে ভরেছে
               জয় বাংলা স্লোগানে
মুক্তিযুদ্ধের জয় হয়েছে
          জয় বাংলার জয়গানে।



হে মহাজীবন

© সুকান্ত ভট্টাচার্য  

হে মহাজীবন, আর এ কাব্য নয়
এবার কঠিন, কঠোর গদ্যে আনো,
পদ-লালিত্য-ঝঙ্কার মুছে যাক,
গদ্যের কড়া হাতুড়িকে আজ হানো ।
প্রয়োজন নেই, কবিতার স্নিগ্ধতা,
কবিতা তোমায় দিলাম আজকে ছুটি
ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী-গদ্যময়:
পূর্ণিমা-চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি ।


Monday, 16 December 2013


তোরা সব জয়ধ্বনি কর

# কাজী নজরুল ইসলাম

তোরা সব জয়ধ্বনি কর!

ঐ নূতনের কেতন ওড়ে কালবোশেখির ঝড়

তোরা সব জয়ধ্বনি কর!!

আস্‌ল এবার অনাগত প্রলয়–নেশায় নৃত্য–পাগল,

সিন্ধু–পারের সিংহ–দ্বারে ধমক হেনে ভাঙল আগল!

মৃত্যু–গহন অন্ধকুপে, মহাকালের চন্ড–রূপে ধূম্র–ধূপে

বজ্র–শিখার মশাল জ্বেলে আসছে ভয়ংকর!

ওরে ওই হাসছে ভয়ংকর!

তোরা সব জয়ধ্বনি কর!!

দ্বাদশ রবির বহ্নি–জ্বালা ভয়াল তাহার নয়ন–কটায়,

দিগন্তরের কাঁদন লুটায় পিঙ্গল তার ত্রস্ত জটায়!

বিন্দু তাহার নয়ন –জলে

সপ্ত মহাসিন্ধু দোলে

কপোল–তলে!

বিশ্ব –মায়ের আসন তারই বিপুল বাহুর ‘পর –

হাঁকে ঐ “জয় প্রলয়ংকর!”

তোরা সব জয়ধ্বনি কর!!

মাভৈঃ, ওরে মাভৈঃ, মাভৈঃ, মাভৈঃ জগৎ জুড়ে প্রলয় এবার ঘনিয়ে আসে

জরায়–মরা মুমূর্ষুদের প্রাণ–লুকানো ঐ বিনাশে।

এবার মহা–নিশার শেষে

আসবে ঊষা অরুণ হেসে

করুণ্ বেশে!

দিগম্বরের জটায় লুটায় শিশু–চাঁদের কর!

আলো তার ভরবে এবার ঘর!

তোরা সব জয়ধ্বনি কর!!


শহীদ স্মরণে

কবিতায় আর কি লিখব?
যখন বুকের রক্তে লিখেছি
একটি নাম
বাংলাদেশ।

গানে আর ভিন্ন কি সুরের ব্যঞ্জনা?
যখন হানাদারবধ সংগীতে
ঘৃণার প্রবল মন্ত্রে জাগ্রত
স্বদেশের তরুণ হাতে
নিত্য বেজেছে অবিরাম
মেশিনগান, মর্টার, গ্রেনেড।

কবিতায় কি লিখব?
যখন আসাদ
মনিরামপুরেরর প্রবল শ্যামল
হৃদয়ের তপ্ত রুধিরে করেছে রঞ্জিত
সারা বাংলায় আজ উড্ডীন
সেই রক্তাক্ত পতাকা।
আসাদের মৃত্যুতে আমি
অশ্রুহীন; অশোক; কেননা
নয়ন কেবল বজ্রবর্ষী; কেননা
আমার বৃদ্ধ পিতার শরীরে
এখন পশুদের প্রহারের
চিহ্ণ; কেননা আমার বৃদ্ধা মাতার
কণ্ঠে নেই আর্ত হাহাকার, নেই
অভিসম্পাত- কেবল
দুর্মর ঘৃণার আগুন; কোন
সান্ত্বনা বাক্য নয়, নয় কোন
বিমর্ষ বিলাপ; তাঁকে বলি নি
‘তোমার ছেলে আসল ফিরে
হাজার ছেলে হয়ে
আর কেঁদো না মা’; কেননা
মা তো কাঁদে না;
মার চোখে নেই অশ্রু, কেবল
অনলজ্বালা, দু চোখে তাঁর
শত্রুহননের আহ্বান।
আসদের রক্তধারায় মহৎ
কবিতার, সব মহাকাব্যের,
আদি অনাদি আবেগ-
বাংলাদেশ-জাগ্রত।

আমি কবিতায় নতুন আর
কি বলব? যখন মতিউর
করাচীর খাঁচা ছিঁড়ে ছুটে গেল
মহাশূন্যে টি-৩৩ বিমানের দুর্দম পাখায় তার স্বপ্নের
স্বধীন স্বদেশ মনে করে-
ফেলে তার মাহিন তুহিন মিলি
সর্বস্ব সম্পদ; পরম আশ্চর্য এক
কবিতার ইন্দ্রজাল স্রষ্টা হল-
তার অধিক কবিতা আর
কোন বঙ্গভাষী কবে লিখেছে কোথায়?
আমি কোন শহীদের স্মরণে লিখব?
বয়ান্ন, বাষট্টি, উনসত্তর, একাত্তর;
বাংলার লক্ষ লক্ষ আসাদ মতিউর আজ
বুকের শোণিতে উর্বর করেছে এই
প্রগাঢ় শ্যামল।

শহীদের পূণ্য রক্তে সাত কোটিবাঙালির প্রাণের আবেগ আজ
পুষ্পিত সৌরভ। বাংলার নগর, বন্দর
গঞ্জ, বাষট্টি হাজার গ্রাম
ধ্বংস্তুপের থেকে সাত কোটি ফুল
হয়ে ফোটে। প্রাণময় মহৎ কবিতা
আর কোথাও দেখি না এর চেয়ে।

শব্দভূক পদ্যব্যবসায়ী ভীরু বঙ্গজ পুঙ্গব সব
এই মহাকাব্যের কাননে খোঁজে
নতুন বিস্ময়। কলমের সাথে আজ
কবির দুর্জয় হাতে নির্ভুল স্টেনগান কথা বলে।
কবিতায় আর নতুন কি লিখব।
যখন বুকের রক্তে
লিখেছি একটি নাম
বাংলাদেশ।
© মোহম্মদ মনিরুজ্জামান ।

অস্ত্র সমর্পণ 

মারণাস্ত্র মনে রেখো ভালোবাসা তোমার আমার।
নয় মাস বন্ধু বলে জেনেছি তোমাকে, কেবল তোমাকে।
বিরোধী নিধন শেষে কতোদিন অকারণে
তাঁবুর ভেতরে ঢুকে দেখেছি তোমাকে বারবার কতোবার।

মনে আছে, আমার জ্বালার বুক
তোমার কঠিন বুকে লাগাতেই গর্জে উঠে তুমি
বিস্ফোরণে প্রকম্পিত করতে আকাশ, আমাদের ভালবাসা
মুহূর্তেই লুফে নিত অত্যাচারী শত্রুর নি:শ্বাস।

মনে পড়ে তোমার কঠিন নলে তন্দ্রাতুর কপালের
মধ্যভাগ রেখে, বুকে রেখে হাত
কেটে গেছে আমাদের জঙ্গলের কতো কালো রাত!
মনে আছে, মনে রেখো
আমাদের সেই সব প্রেম-ইতিহাস।

অথচ তোমাকে আজ সেই আমি কারাগারে
সমর্পণ করে, ফিরে যাচ্ছি ঘরে
মানুষকে ভালোবাসা ভালোবাসি বলে।

যদি কোনোদিন আসে আবার দুর্দিন,
যেদিন ফুরাবে প্রেম অথবা হবে না প্রেম মানুষে মানুষে
ভেঙে সেই কালো কারাগার
আবার প্রণয় হবে মারণাস্ত্র তোমার আমার।

হেলাল হাফিজ

নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়


এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়
এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়
মিছিলের সব হাত কন্ঠ পা এক নয় ।

সেখানে সংসারী থাকে, সংসার বিরাগী থাকে,
কেউ আসে রাজপথে সাজাতে সংসার ।
কেউ আসে জ্বালিয়ে বা জ্বালাতে সংসার
শাশ্বত শান্তির যারা তারাও যুদ্ধে আসে
অবশ্য আসতে হয় মাঝে মধ্যে
অস্তিত্বের প্রগাঢ় আহ্বানে,
কেউ আবার যুদ্ধবাজ হয়ে যায় মোহরের প্রিয় প্রলোভনে
কোনো কোনো প্রেম আছে প্রেমিককে খুনী হতে হয় ।

যদি কেউ ভালোবেসে খুনী হতে চান
তাই হয়ে যান
উৎকৃষ্ট সময় কিন্তু আজ বয়ে যায় ।

এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়
এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময় ।


# হেলাল হাফিজ