Monday, 16 December 2013




কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ

মুক্তিযুদ্ধের সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন আমাদের স্বাধীন ভূখণ্ড


~ কর্নেল (অব.) আবু ওসমান চৌধুরী ~

মহান মুক্তিযুদ্ধের সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন আমাদের স্বাধীন ভূখণ্ড এবং এ দেশের লাল-সবুজ পতাকা।


১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ আমাদের জন্য অনিবার্য ছিল। দেশমাতৃকার জন্য সেদিন আমি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছি একজন সেক্টর কমান্ডার হিসেবে। আমি সৌভাগ্যবান। দেশের জন্য, আমাদের জীবনে এ রকম দায়িত্ব পালনের সুযোগ আর কখনো আসবে না। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন, আমাদের কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ ছিল সমষ্টিগত মুক্তি। সবার সমান অধিকার, সমান সুযোগ। স্বাধীনতার চার দশক পর যদি মূল্যায়ন করতে যাই, তাহলে সাফল্য-ব্যর্থতা দুই-ই লক্ষ্য করব। যে স্বপ্ন নিয়ে যুদ্ধ করেছি তার মধ্যে রাজনৈতিক ব্যাপারটা মোটামুটি সফল হয়েছে। আমরা একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র পেয়েছি। আমাদের নিজস্ব মানচিত্র আছে। আছে সংবিধান। আমরা স্বশাসিত জাতি। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু এ জাতির কাঙ্ক্ষিত অর্থনৈতিক মুক্তি এখনো আসেনি। কেন আসেনি, এটা যারা প্রতিষ্ঠিত অর্থনীতিবিদ তারা ভালো বলতে পারবেন। তবে আমার মনে হয়, সরকারি ও বিরোধী দলের মধ্যে বিশ্বাস ও সহযোগিতার দারুণ অভাবই এর প্রধানতম কারণ। পারস্পরিক সহযোগিতা ছাড়া একটি দেশ ভালোভাবে এগোতে পারে না। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত আমাদের এ দেশটাকে এগিয়ে নিতে হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে। কিন্তু স্বাধীনতাবিরোধীদের যদি সুযোগ করে দেওয়া হয় তাহলে দেশ তার কাঙ্ক্ষিত স্বপ্নে পৌঁছাতে পারবে না। এর আগে যেমনটি হয়েছে। আমাদের অর্থনৈতিক মুক্তি না আসার অন্যতম কারণ স্বাধীনতাবিরোধীদের ষড়যন্ত্র। এরা কখনো চায়নি, এখনো চায় না আমাদের দেশটা প্রতিষ্ঠিত হোক। দেশটা এগিয়ে যাক। আর এই অর্থনৈতিক মুক্তি না আসার কারণে আমাদের দেশে অনেক সমস্যা বিরাজ করছে। দেশের সব মানুষ সমান সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সাম্প্রদায়িক জঙ্গি গোষ্ঠীগুলো এর সুযোগ নিচ্ছে। অথচ আমি এমন এক বাংলাদেশ দেখতে চাই, যেখানে থাকবে না দারিদ্র্য, দেশটা হবে সাম্প্রদায়িকতামুক্ত, রাজাকারমুক্ত, সন্ত্রাসমুক্ত, চাঁদাবাজিমুক্ত একটি সুখী-সমৃদ্ধ দেশ। যদিও আমাদের শিক্ষার হার বেড়েছে, জাতীয় আয়ের প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। আমাদের স্বাস্থ্য খাতে আশাতীত সাফল্য অর্জন করেছে। আমাদের ছেলেমেয়েরা বিজ্ঞান-প্রযুক্তির চর্চায় এগিয়ে যাচ্ছে। তরুণ প্রজন্ম তাদের দক্ষতার প্রমাণ করছে বার বার। দেশের কর্মসংস্থান বাড়ছে। দেশের জনসংখ্যা অনুযায়ী আগামীতে আরও সুযোগ সৃষ্টি হবে, এটা আমার বিশ্বাস। উন্নয়নের এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে আমাদের অবকাঠামো, নতুন নতুন ইন্ডাস্ট্রি প্রতিষ্ঠা পাবে। উৎপাদন বাড়বে। মানুষের ঘরে শান্তি আসবে। আর তখনই বাংলাদেশ আরও সুখী ও সমৃদ্ধ হবে। অনুলিখন : শেখ মেহেদী হাসান

- See more at: http://www.bd-pratidin.com/2013/12/10/31240#sthash.QwIqLTRg.dpuf