Sunday, 5 January 2014

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পোড়ানোর দায় কেউ এড়াতে পারেন না


শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পোড়ানোর দায় কেউ এড়াতে পারেন না

শিক্ষাঘাতী রাজনীতি

ভোটের রাজনীতির রোষে এবার পুড়ল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ভোট ঠেকাতে শনিবার ২৫ জেলায় শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুড়িয়ে দিয়েছে নির্বাচনবিরোধীরা। গানপাউডার ও পেট্রল ছিটিয়ে আগুন দেওয়ায় মুহূর্তেই সবকিছু গ্রাস করে নেয় আগুনের লেলিহান শিখা। পুড়ে ছাই হয়ে গেছে চেয়ার-টেবিল, বেঞ্চ, আসবাবপত্র, বই-খাতা, শিক্ষা উপকরণসহ প্রায় সবকিছু। সদ্যবিতরণ করা নতুন বইও বাদ যায়নি নাশকতাকারীদের হিংসার আগুন থেকে। সহায় হতে পারেনি সরকারও।

শুধু স্কুলই নয়, নির্বাচনবিরোধীদের আক্রোশ থেকে রেহাই পায়নি মাদ্রাসাও। চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অনেক মাদ্রাসায়ও পুড়িয়ে দেওয়া হয়। দেশ ও মানুষের প্রতি সামান্যতম দায়িত্ববোধ থাকলে এই ঘৃণ্যতম কাজ কখনও করতে পারত না তারা। এ ধরনের ন্যক্কারজনক কাজের নিন্দা জানানোর ভাষা আমাদের জানা নেই।

একতরফা নির্বাচন যেমন কোনও সমাধান নয়, তেমনি সংঘাত-সহিংসতাও আন্দোলনের ভাষা হতে পারে না। নির্বাচন যাবে, নির্বাচন আসবে। কিন্তু নির্বাচনকেন্দ্রিক রাজনৈতিক সংকটে যে প্রাণহানি ও সম্পদ ধ্বংস হল, এর কী হবে? ক্ষমতা আঁকড়ে থাকা যেমন গণতান্ত্রিক মানসিকতার পরিচয় বহন করে না, তেমনি ক্ষমতায় যাওয়ার আশায় দেশের সম্পদ ধ্বংসও রাজনীতি হতে পারে না। ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য যারা নির্বিচারে স্কুল পোড়াতে পারে, পেট্রলবোমায় মানুষ হত্যা করতে পারে, ক্ষমতায় গেলে তাদের কাছ থেকে মানুষ যে সুশাসন পাবে না, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

নির্বাচনি সহিংসতা যে মাত্রায় বেড়েছে, ভবিষ্যতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভোটকেন্দ্র করার ব্যাপারেও সরকার ও ইসিকে ভাবতে হবে। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেড় মাস ধরেই সহিংসতা চলে আসার পরও কেন ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়নি, সেটাই একটা বড় প্রশ্ন।

প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ ১৮-দলীয় জোট দশম সংসদ নির্বাচন বয়কট করার পর থেকেই নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছে। তফসিল ঘোষিত হওয়ার পর নির্বাচনি সহিংসতায় এ পর্যন্ত শতাধিক মানুষের প্রাণ গেছে। এ প্রেক্ষাপটে ভোটের দিন নির্বাচনবিরোধীরা যে সর্বোচ্চ মাত্রায় সহিংসতা চালাতে পারে সেটি তো নির্বাচন কমিশনের আগেই বোঝা উচিত ছিল। নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব থাকে নির্বাচন কমিশনের ওপর। যদি ভোটকেন্দ্রগুলোয় পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা থাকত, তাহলে হয়তো নির্বাচনি নাশকতা থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বাঁচানো যেত। কমিশন এ ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ব্যর্থ। ধারাবাহিক নৈরাজ্য-নাশকতা ঠেকাতেও ব্যর্থ হয়েছে সরকার।

শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ শনিবার জরুরি এক প্রেসব্রিফিংয়ে অশুভ শক্তির হাত থেকে স্কুল-কলেজগুলো বাঁচানোর আকুতি জানিয়ে বলেন, ভোটকেন্দ্র একদিনের জন্য, কিন্তু স্কুল-কলেজ চিরদিনের জন্য। এই আকুতি আসলে প্রতিটি মানুষেরই। আমরা এই সম্পাদকীয় স্তম্ভে বারবার বলে আসছি— একতরফা নির্বাচন যেমন গ্রহণযোগ্য নয়, তেমনি নির্বাচন ঠেকানোর জন্য নৈরাজ্য, নাশকতা, প্রাণহানি, সম্পদ ধ্বংসও মেনে নেওয়া যায় না।

নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকেই টানা হরতাল-অবরোধে নৈরাজ্য-নাশকতায় দেশ প্রায় অচল। পেট্রল বোমাহামলায় পুড়ে মরছে মানুষ। ধ্বংস হচ্ছে রাষ্ট্রের সম্পদ। রাস্তার পাশে শতবর্ষী গাছকাটা হয়েছে হাজার-হাজার। উপড়ে ফেলা হয়েছে রেললাইন। এরই ধারাবাহিকতায় বিনামূল্যে বিতরণের পাঠ্যবই ছাপা-পৌঁছনো বাধাগ্রস্ত হয়েছে। সর্বশেষ ভোটকেন্দ্র স্থাপিত হওয়ায় পুড়ে ছাই হয়েছে শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। শিক্ষার ওপর এই আঘাত কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না।

এ দায় জামায়াত-যুক্ত বিরোধী জোটেরই বেশি। সরকারও দায় এড়াতে পারে না।

curtesy:- amader shomoy.