Saturday, 22 February 2014

ভাষাবৈচিত্র্যে রাঙানো ইসলাম 

মাহমুদা আক্তার নীনা
প্রকাশ : ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪

নিঃসন্দেহে মানুষের জীবন বিধান হিসেবে আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য একমাত্র দ্বীন বা ধর্ম হচ্ছে ‘ইসলাম’ (সূরা আলে ইমরান-১৯ আয়াত)। এ ছাড়াও পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘যে কেউ ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো দ্বীন বা ধর্ম অন্বেষণ করবে, কখনও তা তার থেকে কবুল বা গ্রহণ করা হবে না। আর আখিরাতে সে হবে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত (সূরা আলে ইমরান-৮৫ আয়াত)। এ আয়াত দুটি প্রমাণ করে দেয়, আল্লাহর সব নবী-রাসূলদের দ্বীন বা ধর্মই ছিল ইসলাম। কেননা সৃষ্টির আদি থেকে আল্লাহ যত নবী-রাসূল প্রেরণ করেছেন তাদের সবাইকেই আল্লাহ তার একাত্মবাদ প্রচারের জন্য এবং মানুষের জীবন বিধান হিসেবে দ্বীন ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্যই পাঠিয়েছেন। তাই তো আল্লাহর সব নবী-রাসূলই ছিল আল্লাহর একাত্মবাদে দৃঢ় বিশ্বাসী ও আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণকারী। আর যেহেতু আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য দ্বীন একমাত্র ইসলাম তাই আল্লাহর সব নবী-রাসূলের ধর্মই ইসলাম এবং তারা সবাই মুসলমান। তাই তো আল্লাহ কোরআনে বলেছেন, আপনি (মুহাম্মদ) তো কেবল একজন সতর্ককারী মাত্র। আর প্রত্যেক জাতির জন্যই এসেছে সতর্ককারী (পথপ্রদর্শক, নবী-রাসূল) সূরা রাদের-৭ আয়াত। এ ছাড়াও আল্লাহ বলেন, প্রত্যেক রাসূলকেই আমি স্বজাতির ভাষা দিয়ে প্রেরণ করেছি যেন তাদের (জাতিকে) পরিষ্কারভাবে বুঝাতে পারে (সূরা ইব্রাহিম-৪ আয়াত)। যেহেতু আল্লাহ পৃথিবীর প্রত্যেক জাতিতে রাসূল পাঠিয়েছেন এবং তাদের কণ্ঠে মাতৃভাষা দিয়ে বা জাতিসত্তার ভাষা দিয়েই পাঠিয়েছেন, সেহেতু প্রমাণ হয়েই যায় যে এ পৃথিবীর যে কোনো ভাষাই কোনো না কোনো নবী-রাসূলেরই জাতিসত্তার ভাষা এবং নবী রাসূলেরই ভাষা। আর যেহেতু সব নবী-রাসূলদের ধর্মই ছিল ইসলাম সুতরাং পৃথিবীর যে কোনো ভাষা অর্থাৎ প্রতিটি ভাষাই দ্বীন ইসলামের ভাষা বা ইসলামী ভাষা এবং এটাও সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ হয়েই যায় যে পৃথিবীর সব জাতিতে যেহেতু নবী-রাসূলের আগমন ঘটেছে সেহেতু দূর অতীতে নবী-রাসূলদের যুগে বাঙালি জাতিতেও এক বা একাধিক নবী-রাসূলের আগমন ঘটেছে এবং তাদের জাতিসত্তার ভাষা বা মাতৃভাষা বাংলা ভাষা দিয়েই পাঠানো হয়েছে এবং তারা মাতৃভাষা বা জাতিসত্তার ভাষা বাংলা ভাষা দ্বারাই আল্লাহর একাত্মবাদ প্রচার করেছেন এবং নিজেরাও মাতৃভাষা দ্বারাই নামাজ-কিতাব পাঠ করেছেন। এটাই যুক্তির কথা এবং কোরআনের বাণীর মর্মার্থ ও শিক্ষা। যুক্তিই যাদের চলার পথের শ্রেষ্ঠ পাথেয়। যুক্তির আলোকেই যারা করে থাকেন বিচার-বিশ্লেষণ তারা এ আয়াতগুলো নিয়ে গভীরভাবে ভেবে দেখুন। যুক্তির আলোকেই না হয় চলুক সত্যের প্রমাণে বিতর্কপ্রেমীদের যুক্তির প্রতিযোগিতা। বিতর্কচর্চা ও যুক্তির প্রতিযোগিতা যেমন আত্মবিশ্বাস ও আত্মপ্রত্যয় বাড়িয়ে দেয় তেমনি এনে দেয় সফলতাও। যুক্তির জোয়ারে ভেসে যায় মিথ্যা ও বিভ্রান্তি। সত্যের হয় জয়। তাই তো ইসলামের বিধিবিধান যুক্তির কষ্টিপাথরে ঘষা। আল্লাহ মানুষের ভাষা বৈচিত্র্যতাকে যেমন তার সৃষ্টির নিদর্শন করেছেন তেমনি তার নবী-রাসূলদের কণ্ঠে বিচিত্র ভাষা দিয়ে এবং তারই বিভিন্ন কিতাব ও সহিফা বিভিন্ন ভাষায় নাজিল করে দ্বীন ইসলামের বুকে ভাষা বৈচিত্র্যতার নিদর্শন প্রতিষ্ঠিত করেছেন। মানুষের ভাষার অধিকার ও মর্যাদাকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন এবং দ্বীন ইসলামকে ভাষাবৈচিত্র্যতার রঙে রাঙিয়ে দিয়েছেন এবং বান্দাদের মাতৃভাষা চেতনায় সমৃদ্ধ করে দিয়েছেন ইসলামকে। তাই তো দ্বীন ইসলাম মাতৃভাষা চেতনাকে সমৃদ্ধ করেছে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, (হে মানুষ) আল্লাহতায়ালা তোমাদের জন্য সেই দ্বীনকেই নির্ধারিত করেছেন, যার আদেশ তিনি দিয়েছেন নুহকে এবং যা আমি তোমার (মুহাম্মদ) কাছে ওহি করে পাঠিয়েছি। উপরন্তু যার আদেশ ইব্রাহিম, মুসা ও ঈশাকে (আ.) দিয়েছিলাম। এদের সবাইকেই আমি বলেছিলাম, তোমরা এ জীবন বিধান (সমাজে) প্রতিষ্ঠিত কর এবং কখনও এতে অনৈক্য সৃষ্টি কর না। (সূরা শুরা, আয়াত-১৩)। এখানে স্পষ্ট হয়েই যায় এদের সবাইকেই আল্লাহ দ্বীন ইসলাম প্রচার ও প্রতিষ্ঠার জন্য পাঠিয়েছিলেন। সুতরাং নুহ, ইব্রাহিম, মুসা, ঈশা ও রাসূলুল্লাহর কাছে নাজিল করা সব কিতাবই ইসলামী কিতাব। তবে এসব কিতাব একেকটি একেক ভাষায় অর্থাৎ যার যার কাছে তার ভাষায় কিতাব নাজিল করা হয়েছে একেক কিতাব একেক ভাষায় নাজিল করার কারণে দ্বীন ইসলামের ঐক্য নষ্ট হয়নি। দ্বীন ইসলামের বুকে আল্লাহ ভাষাগত ঐক্যের প্রাচীর গড়ে দেননি। তিনি দ্বীন ইসলামকে সব জাতির ও সব ভাষার জন্য মুক্ত করে দিয়েছেন। দ্বীন ইসলামকে তিনি আরবি ভাষার প্রাচীরে রুদ্ধ করেননি। তাই তো তার কিতাবের মাঝে আরবি ভাষার ঐক্য সৃষ্টি করেননি।
নুহ, ঈসা, মুসা, ইব্রাহিম, রাসূল্লাহ তারা সবাই যারযার ভাষায় নামাজ-কোরআন পাঠ করেছেন। কাজেই ইসলামের ভাষাগত ঐক্যের কোনো বাধ্যতা ও অপরিহার্যতা নেই। আল্লাহর নবী-রাসূলরা যদি তাদের কণ্ঠের আরবি ভাষা দিয়েই নামাজ-কিতাব পড়তে পেরেছেন, তবে আমরা পারব না কেন? ইসলামের প্রচলিত উম্মাহর ভাষাগত ঐক্যের কোনো যুক্তি ভিত্তি নেই। এ ঐক্য অন্যায় অবৈধ এবং অযৌক্তিক ও অকল্যাণকর। তাই তো স্বয়ং আল্লাহই ভাষাগত ঐক্যের পথকে পরিহার করেছেন। কিন্তু মানবতার ভাষাগত ঐক্য যদি কল্যাণকরই হতো তবে আল্লাহ তার সব কিতাবই এক আরবি ভাষায় নাজিল করতেন এবং কিতাবের মাঝে (আরবি ভাষা) ভাষাগত ঐক্য সৃষ্টি করতেন এবং রাসূলদের কণ্ঠেও আরবি ভাষার ঐক্য সৃষ্টি করতেন।
mahmuda1959@yahoo.com

www.jugantor.com/islam-and-life/2014/02/21/71081#sthash.N50vZUQ3.dpuf