Wednesday, 31 December 2014


আল্লাহ’র মহান কবিতা 

-মুহিববুল্লাহ জামী

তাঁকে নিয়ে লেখা যায় কি আর কবিতা,
যিনি নিজে কবিতার ঝাঁঝালো দুপুর
আঁধার বিদীর্ণকারী মধ্যাহ্ণ রোদ্দুর?
সাধ্যমত লিখি তবু তাঁর যতো কথা।
রব-নীরবতা
বাজিয়ে চলেছে যার গুণের নূপুর
কবিতার নাগালের তিনি বহু দূর
শুদ্ধতম নূর
নিজেই তো আল্লা’র মহান কবিতা !!!
[সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]

Tuesday, 30 December 2014

একে একে একে হায়!                     দিনগুলি চলে যায়,
                 কালের প্রবাহ পরে প্রবাহ গড়ায়,
সাগরে বুদ্বুদ্ মত                            উন্মত্ত বাসনা যত
                  হৃদয়ের আশা শত হৃদয়ে মিলায়,
                               আর দিন চলে যায় |
জীবনে আঁধার করি,                      কৃতান্ত সে লয় হরি
              প্রাণাধিক প্রিয়জনে, কে নিবারে তায়?
শিথির হৃদয় নিয়ে,                      নর শূণ্যালয়ে গিয়ে,
              জীবনের বোঝা লয় তুলিয়া মাথায়,
                            আর দিন চলে যায় |
নিশ্বাস নয়নজল                           মানবের শোকানল
              একটু একটু করি ক্রমশঃ নিবায়,
স্মৃতি শুধু জেগে রহে,                   অতীত কাহিনী কহে,
              লাগে গত নিশীথের স্বপনের প্রায় ;
                                      আর দিন চলে যায়!

কামিনী রায়: (১৮৬৪ - ১৯৩৩)

Monday, 29 December 2014


পরোপকার



নদী কভু পান নাহি করে নিজ জল,
তরুগণ নাহি খায় নিজ নিজ ফল,
গাভী কভু নাহি করে নিজ দুগ্ধ পান,
কাষ্ঠ, দগ্ধ হয়ে, করে পরে অন্নদান,
স্বর্ণ করে নিজরূপে অপরে শোভিত,
বংশী করে নিজস্বরে অপরে মোহিত,
শস্য জন্মাইয়া, নাহি খায় জলধরে,
সাধুর ঐশ্বর্য শুধু পরহিত-তরে।

[রজনীকান্ত সেন (১৮৬৫ - ১৯১০)]

অধিভুক্ত হই আবারও মুক্তিযুদ্ধে -


এই এক দেশ-যেখানে রক্তাক্ত হাইড্রোজেনের ভেতর
মেঘজমাট বেঁধে সৃষ্টি হয়েছিল
-এক চন্দ্রধারা
সেই চন্দ্রধারার নামই দেদীপ্যমান মুক্তিযুদ্ধ।

সৃষ্টির সময়ে ছিল
এক একেকটি আগুনের গোলক
যার সমবেত নাম বিদ্রোহী-জনতা
যেন এক আগ্নেয়গিরির যাদুঘর
টকবক হয়ে ফুটেছিল-দিগনড়রেখায়
উড়ছিল ধোঁয়ার কুÊলি
ঘনমেঘ-নীরদপুঞ্জ
কুড়ুলে মেঘ-আঁধিঝড়
তার মধ্যে থেকে উপচে উঠলো আমাদের স্বপ্নভূমি!

বিস্ময়কর রাসায়নিক মিশ্রণে
মরিয়া হয়ে উঠেছিল জনগণ
পাথরখণ্ডে সপ্তমুখী জবা ফুটলো
অসীম সাহসে-
একেকটি বরফের চাঁই গলে গলে
ফল্গুধারা তৈরি হলো !

রঙের ভিন্নতা ছিল না-
শরীরের যেকোনো স্হানে-মুখমণ্ডল, গলা, কাঁধ
হাত, পা, বুক অথবা পিঠে
সকল ধমনিতে একই রক্তের ধারা প্রবাহিত হয়েছিল
মস্তিষ্কের নিউরণে একই বাদ্যের দ্রিমি-দ্রিমি তাল ছিল
আমাদের দৃষ্টিহীনতা ছিল না
এমন কি আমরা একচক্ষু হরিণও ছিলাম না
আমাদের রক্ত জমাট বাঁধেনি
বিপন্ন সময়ে আমরা পরস্পর থেকে দূরে সরে থাকেনি
-শিরদাঁড়া উঁচু ছিল
আমাদের ছিল না পতঙ্গ-পতন !
রক্তক্ষরণের মধ্যে দিয়েও রক্তের প্রবহমানতা
-আনড়ঃনদী হয়ে জেগেছিল !

হৃদয়তন্ত্র কোন্‌ মন্ত্র নিয়ে জেগে উঠেছিল সেদিন ?
আমাদের কাঙ্ক্ষিত ছিল-
পরাধীনতার শৃংখলে-পরশাসিত থাকবো না
বশংবদ থাকবো না
দাসানুদাস হয়ে-পরনির্ভর থাকবো না
মেহনতি, শ্রমজীবী, কৃষিজীবীর ইশতেহার নিয়ে
শোষকশ্রেণির কব্জা থেকে বের হয়ে
-নিজের চারণভূমিতে
বৈষম্যহীন অবস্হায় সংহত হয়ে বেঁচে থাকবো !

অহিংস পথ দিয়ে আমরা যেতে চেয়েছিলাম
তবে সে পথে যেতে পারিনি-
রক্তাক্ত যুদ্ধের পথেই যেতে হয়েছিল !
ক্ষমতালোভী, সমরবণিক, যুদ্ধবাজ, ধর্মান্ধ-কালজ্ঞ শক্তি
ও সামাজ্যবাদ-
সোনার খাঁচায় আমাদের আটকে রাখতে পারেনি
আমরা হয়েছিলাম বালিহাঁস
ডাকপাখি
নীলকণ্ঠ
সোনাচড়াই !

বীতরাগ থেকে
নিঃস্পৃহতা ভেঙে আমরা জেগে উঠেছিলাম,
দ্বিধাহীনতা থেকে
অকুণ্ঠচিত্তে গীতি-নৃত্যে জেগে উঠেছিলাম,
মায়ামুগ্ধ থেকে
নিজের কোকিল সুরে জেগে উঠেছিলাম,
মনসড়াপ থেকে
ধ্যানমগ্ন হয়ে জেগে উঠেছিলাম,
ভয়গ্রসড় থেকে
দুঃসাহসে জেগে উঠেছিলাম,
শোকবিহ্বল থেকে
প্রাণপ্রাচুর্য নিয়ে জেগে উঠেছিলাম!

আর এখন-
আমরা কোন্‌ বিনষ্টির মধ্যে ?
আর এখন-
আমরা কোন্‌ কপটভাষ্যের মধ্যে ?
আর এখন-
আমরা কোন্‌ স্বভাবদোষের মধ্যে ?
আর এখন-
আমরা কোন্‌ অশ্রুলোচনের মধ্যে ?

আমাদের অলোকসামান্য মুক্তিযুদ্ধ
আমাদের দেদীপ্যমান মুক্তিযুদ্ধ
ম্রিয়মান হয়ে যাবে ?
হারাবে তার স্বভাব-সৌন্দর্য
হারাবে তার উজ্জ্বলন
ও আকাশদিউটি !
যারফলে আমাদের দৃষ্টি জ্বালানোর পিলসুজ পর্যনড় থাকবে না ?

এত অকুঞ্চিত অন্ধকার
এত ছায়া-প্রচ্ছায়া
এত অন্ধকূপ
ধূপ জ্বালানোর লতাগৃহ নেই-
রাত্রি নামে-তমসাবৃত দিন !

চলো-অধিভুক্ত হই আবারও মুক্তিযুদ্ধে
চলো-কুণ্ঠামুক্ত হই আবারও মুক্তিযুদ্ধে
চলো-নবাঙ্কুর হই আবারও মুক্তিযুদ্ধে
চলো-প্রসববন্ধন হই আবারও মুক্তিযুদ্ধে।

-গোলাম কিবরিয়া পিনু

Saturday, 27 December 2014

এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ না


যে পিতা সন্তানের লাশ সনাক্ত করতে ভয় পায়
আমি তাকে ঘৃণা করি-
যে ভাই এখনও নির্লজ্জ স্বাভাবিক হয়ে আছে
আমি তাকে ঘৃণা করি-
যে শিক্ষক বুদ্ধিজীবী কবি ও কেরাণী
প্রকাশ্য পথে এই হত্যার প্রতিশোধ চায় না
আমি তাকে ঘৃণা করি-

আটজন মৃতদেহ
চেতনার পথ জুড়ে শুয়ে আছে
আমি অপ্রকৃতিস্থ হয়ে যাচ্ছি
আট জোড়া খোলা চোখ আমাকে ঘুমের মধ্যে দেখে
আমি চীৎকার করে উঠি
আমাকে তারা ডাকছে অবেলায় উদ্যানে সকল সময়
আমি উন্মাদ হয়ে যাব
আত্মহ্ত্যা করব
যা ইচ্ছা চায় তাই করব।

কবিতা এখনই লেখার সময়
ইস্তেহারে দেয়ালে স্টেনসিলে
নিজের রক্ত অশ্রু হাড় দিয়ে কোলাজ পদ্ধতিতে
এখনই কবিতা লেখা যায়
তীব্রতম যন্ত্রনায় ছিন্নভিন্ন মুখে
সন্ত্রাসের মুখোমুখি-ভ্যানের হেডলাইটের ঝলসানো আলোয়
স্থির দৃষ্টি রেখে
এখনই কবিতা ছুঁড়ে দেওয়া যায়
’৩৮ ও আরো যা যা আছে হত্যাকারীর কাছে
সব অস্বীকার করে এখনই কবিতা পড়া যায়

লক-আপের পাথর হিম কক্ষে
ময়না তদন্তের হ্যাজাক আলোক কাঁপিয়ে দিয়ে
হত্যাকারীর পরিচালিত বিচারালয়ে
মিথ্যা অশিক্ষার বিদ্যায়তনে
শোষণ ও ত্রাসের রাষ্ট্রযন্ত্রের মধ্যে
সামরিক-অসামরিক কর্তৃপক্ষের বুকে
কবিতার প্রতিবাদ প্রতিধ্বনিত হোক
বাংলাদেশের কবিরাও
লোরকার মতো প্রস্তুত থাকুক
হত্যার শ্বাসরোধের লাশ নিখোঁজ হওয়ার স্টেনগানের গুলিতে সেলাই হয়ে
যাবার জন্য প্রস্তত থাকুক
তবু কবিতার গ্রামাঞ্চল দিয়ে কবিতার শহরকে ঘিরে ফেলবার
একান্ত দরকার।

এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ না
এই জল্লাদের উল্লাসমঞ্চ আমার দেশ না
এই বিস্তীর্ণ শ্মশান আমার দেশ না
এই রক্তস্নাত কসাইখানা আমার দেশ না
আমি আমার দেশকে ফিরে কেড়ে নেব
বুকের মধ্যে টেনে নেব কুয়াশায় ভেজা কাশ বিকেল ও ভাসান
সমস্ত শরীর ঘিরে জোনাকি না পাহাড়ে পাহাড়ে জুম
অগণিত হৃদয় শস্য, রূপকথা ফুল নারী নদী
প্রতিটি শহীদের নামে এক একটি তারকার নাম দেব ইচ্ছে মতো
ডেকে নেব টলমলে হাওয়া রৌদ্রের ছায়ায় মাছের চোখের মত দীঘি
ভালোবাসা-যার থেকে আলোকবর্ষ দুরে জন্মাবধি অচ্ছুৎ হয়ে আছি-
তাকেও ডেকে নেব কাছে বিপ্লবের উৎসবের দিন।

হাজার ওয়াট আলো চোখে ফেলে রাত্রিদিন ইনটারোগেশন
মানি না
নখের মধ্যে সূঁচ বরফের চাঙড়ে শুইয়ে রাখা
মানি না
পা বেঁধে ঝুলিয়ে রাখা যতক্ষণ রক্ত ঝরে নাক দিয়ে
মানি না
ঠোঁটের ওপরে বুট জ্বলন্ত শলাকায় সারা গায় ক্ষত
মানি না
ধারালো চাবুক দিয়ে খন্ড খন্ড রক্তাক্ত পিঠে সহসা আ্যালকোহল
মানি না
নগ্নদেহে ইলেকট্রিক শক কুৎসিৎ বিক্রত যৌন অত্যাচার
মানি না
পিটিয়ে পিটিয়ে হত্যা খুলির সঙ্গে রিভলবার ঠেঁকিয়ে গুলি
মানি না
কবিতা কোন বাধাকে স্বীকার করে না
কবিতা সশস্ত্র কবিতা স্বাধীন কবিতা নির্ভীক।
চেয়ে দেখো মায়কোভস্কি হিকমেত নেরুদা আরাগঁ এলুয়ার

তোমাদের কবিতাকে আমরা হেরে যেতে দিইনি
বরং সারাটা দেশ জুড়ে নতুন একটা মহাকাব্য লেখবার চেষ্টা চলছে
গেরিলা ছন্দে রচিত হতে চলেছে সকল অলংকার।
গর্জে উঠুক দল মাদল
প্রবাল দ্বীপের মত আদিবাসী গ্রাম
রক্তে লাল নীলক্ষেত
শঙ্খচূড়ের বিষ-ফেনা মুখে আহত তিতাস
বিষাক্ত মৃত্যুসিক্ত তৃষ্ঞায় কুচিলা
টণ্কারের সূর্য অন্ধ উৎক্ষিপ্ত গান্ডীবের ছিলা
তীক্ষ্ম তীর হিংস্রতম ফলা-

ভাল্লা তোমার টাঙ্গি পাশ
ঝলকে ঝলকে বল্লম চর-দখলের সড়কি বর্শা
মাদলের তালে তালে রক্তচক্ষু ট্রাইবাল টোটেম
বন্দুক কুরকি দা ও রাশি রাশি সাহস
এত সাহস যে আর ভয় করে না
আরো আছে ক্রেন, দাঁতালো বুলডজার বনভয়ের মিছিল
চলামান ডাইনামো টারবাইন লেদ ও ইনজিন
ধ্বস-নামা কয়লার মিথেন অন্ধকারে কঠিন হীরার মতো চোখ
আশ্চর্য ইস্পাতের হাতুড়ি
ডক জুটমিল ফার্ণেসের আকাশে উত্তোলিত সহস্র হাত
না ভয় করে না
ভয়ের ফ্যাকাশে মুখ কেমন অচেনা লাগে
যখন জানি মৃত্যু ভালোবাসা ছাড়া কিছু নয়।
আমাকে হ্ত্যা করলে
বাংলার সব কটি মাটির প্রদীপে শিখা হয়ে ছড়িয়ে যাব
আমার বিনাশ নেই-
বছর বছর মাটির মধ্য হতে সবুজ আশ্বাস হয়ে ফিরে আসব
আমার বিনাশ নেই-
সুখে থাকব, দুঃখে থাকব সন্তান-জন্মে সৎকারে
বাংলাদেশ যতদিন থাকবে ততদিন
মানুষ যতদিন থাকবে ততদিন।

যে মৃত্যু রাত্রির শীতে জ্বলন্ত বুদবুদ হয়ে উঠে যায়
সেই দিন সেই যুদ্ধ সেই মৃত্যু ডেকে আনো
সেভেন্থ ফ্লিটকে রুখে দিক সপ্তডিঙা মধুকর
শিঙা ও শঙ্খে যুদ্ধারম্ভ ঘোষিত হয়ে যাক
রক্তের গন্ধ নিয়ে বাতাস যখন মাতাল
জ্বলে উঠুক কবিতা বিস্ফোরক বারুদের মাটি
আলপনা গ্রাম নৌকা নগর মন্দির
যখন তরাই থেকে সমুদ্রের সীমা
সারা রাত্রি কান্নার পর শুষ্ক দাহ্য হয়ে আছে
যখন জন্মভূমি ও বধ্যভূমির কাদা এক হয়ে গেছে
তখন আর দিধ্বা কেন
সংশয় কীসের
ত্রাস কী
আটজন স্পর্শ করেছে
গ্রহণের অন্ধকারে ফিসফিস করে বলছে কোথায় কখন প্রহরা
তাদের কন্ঠে অযুত তারকাপুঞ্জ ছায়াপথ সমুদ্র
গ্রহ থেকে গ্রহে ভেসে বেরাবার উত্তরাধিকার
কবিতার জ্বলন্ত মশাল
কবিতার মলটভ ককটেল
কবিতার টলউইন অগ্নিশিখা
এই আগুনের আকাঙ্ক্ষাতে আছড়ে পড়ুক।

-নবারুন ভট্টাচার্য

Thursday, 25 December 2014


ঝর্ণা ! ঝর্ণা ! সুন্দরী ঝর্ণা !
তরলিত চন্দ্রিকা ! চন্দন-বর্ণা !
অঞ্চল সিঞ্চিত গৈরিকে স্বর্ণে,
গিরি-মল্লিকা দোলে কুন্তলে কর্ণে,
তনু ভরি’ যৌবন, তাপসী অপর্ণা !
ঝর্ণা !
পাষাণের স্নেহধারা ! তুষারের বিন্দু !
ডাকে তোরে চিত-লোল উতরোল সিন্ধু |
মেঘ হানে জুঁইফুলী বৃষ্টি ও-অঙ্গে,
চুমা-চুম্ কীর হারে চাঁদ ঘেরে রঙ্গে,
ধূলা-ভরা দ্যায় ধরা তোর লাগি ধর্ণা !
ঝর্ণা !
এস তৃষার দেশে এস কলহাস্যে–
গিরি-দরী-বিহীরিনী হরিনীর লাস্যে,
ধূসরের ঊষরের কর তুমি অন্ত,
শ্যামলিয়া ও পরশে কর গো শ্রীমন্ত;
ভরা ঘট এস নিয়ে ভরসায় ভর্ণা;
ঝর্ণা !
শৈলের পৈঠৈয় এস তনুগত্রী !
পাহাড়ে বুক-চেরা এস প্রেমদাত্রী !
পান্নার অঞ্জলি দিতে দিতে আয় গো,
হরিচরণ-চ্যুতা গঙ্গার প্রায় গো,
স্বর্গের সুধা আনো মর্ত্যে সুপর্ণা !
ঝর্ণা !
মঞ্জুল ও-হাসির বেলোয়ারি আওয়াজে
ওলো চঞ্চলা ! তোর পথ হল ছাওয়া যে !
মোতিয়া মোতির কুঁড়ি মূরছে ও-অলকে;
মেখলায়, মরি মরি, রামধনু ঝলকে
তুমি স্বপ্নের সখী বিদ্যুত্পর্ণা
ঝর্ণা !



মানব জাতিকে হেদায়েতের জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যুগে যুগে নবী ও রাসূল পাঠিয়েছেন। যারা মানব জাতিকে সত্য, সুন্দর ও কল্যাণের পথে নিয়ে যাওয়ার মেহনত করেছেন। হজরত ঈসা (আ.) ছিলেন অন্যান্য সব নবী রাসূলের মতোই পবিত্র পুরুষ। আল্লাহর কুদরতে পৈতৃক সম্পর্ক ছাড়াই কুমারী মায়ের গর্ভে তার জন্ম হয়। পবিত্র কোরআনে সূরা মারইয়ামে হজরত ঈসা (আ.)-এর জন্ম সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে। বলা হয়েছে, আল্লাহ মরিয়মের কাছে জিবরাইল ফেরেশতাকে পাঠান। মানুষের রূপ ধারণ করে তিনি তার সামনে আত্দপ্রকাশ করেন। জিবরাইল মরিয়মকে বলেন, তোমাকে এক পবিত্র পুত্র দান করার জন্য আল্লাহ আমাকে পাঠিয়েছেন। মরিয়ম ফেরেশতাকে বলেন, কেমন করে আমার পুত্র হবে আমাকে তো কোনো পুরুষ স্পর্শ করেনি। আমি ব্যভিচারিণীও নই। জিবরাইল ফেরেশতা বলেন, আল্লাহর কাছে সবকিছুই সহজসাধ্য। কুমারী নারীর গর্ভে পুরুষের সংস্পর্শ ছাড়াই সন্তান জন্মদান মানুষের জন্য এক নিদর্শন। এটি আল্লাহ প্রদত্ত অনুগ্রহ এবং স্থিরিকৃত বিষয়। হজরত ঈসা (আ.) ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর মরিয়ম তার সম্প্রদায়ের কাছে উপস্থিত হলেন। তারা কুমারীর মাতৃত্ব লাভকে সমালোচনার দৃষ্টিতে দেখল এবং বলল তোমার পিতা-মাতা অসৎ কিংবা ব্যভিচারী ছিল না, তুমি এ কোন অদ্ভুত কাণ্ড ঘটালে? চারদিকের তীব্র বাক্যবাণে বিপর্যস্ত মরিয়ম তার সম্প্রদায়ের লোকদের বলল, তোমরা এই শিশুর কাছে জিজ্ঞাসা কর কেন অদ্ভুত কাণ্ড ঘটল। শিশু হজরত ঈসা (আ.) মরিয়ম সম্প্রদায়ের সব জিজ্ঞাসার জবাব দেন। পবিত্র কোরআনে হজরত ঈসা (আ.)-এর অলৌকিকভাবে জন্ম সম্পর্কে বলা হয়েছে- 'সন্তান গ্রহণ করা আল্লাহর কাজ নহে' তিনি পবিত্র মহিমাময়। তিনি যখন কিছু স্থির করেন তখন বলেন, 'হও' এবং উহা হইয়া যায়। (সূরা মারইয়াম, আয়াত ৩৫)। পুণ্যবতী নারী কুমারী মরিয়মের গর্ভে পুরুষের সংস্পর্শ ছাড়াই হজরত ঈসা (আ.)-এর জন্ম প্রাকৃতিক নিয়মে অসম্ভব হলেও আল্লাহর কুদরতের কাছে কোনো কিছুই অসম্ভব নয়। মানব জাতিকে আল্লাহর পথে পরিচালিত করার জন্য হজরত ঈসা (আ.)-কে পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছিল। সালাত ও জাকাত আদায়ে তিনি তার অনুসারীদের আহ্বান করেছেন। সর্বশেষ ও শ্রেষ্ঠ নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর আগমনও ঘটেছে অভিন্ন উদ্দেশ্যে।
লেখক :মাওলানা মুহাম্মদ শাহাবুদ্দিন

Winter Song by Katherine Mansfield



Rain and wind, and wind and rain.
Will the Summer come again?
Rain on houses, on the street,
Wetting all the people's feet,
Though they run with might and main.
Rain and wind, and wind and rain.

Snow and sleet, and sleet and snow.
Will the Winter never go?
What do beggar children do
With no fire to cuddle to,
P'raps with nowhere warm to go?
Snow and sleet, and sleet and snow.

Hail and ice, and ice and hail,
Water frozen in the pail.
See the robins, brown and red,
They are waiting to be fed.
Poor dears, battling in the gale!
Hail and ice, and ice and hail.

যাত্রাভঙ্গ --- নির্মলেন্দু গুণ

হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে
মন বাড়িয়ে ছুঁই,
দুইকে আমি এক করি না
এক কে করি দুই।
হেমের মাঝে শুই না যবে,
প্রেমের মাঝে শুই
তুই কেমন কর যাবি?
পা বাড়ালেই পায়ের ছায়া
আমাকেই তুই পাবি।

তবুও তুই বলিস যদি যাই,
দেখবি তোর সমুখে পথ নাই।

তখন আমি একটু ছোঁব
হাত বাড়িয়ে জড়াব তোর
বিদায় দুটি পায়ে,
তুই উঠবি আমার নায়ে,
আমার বৈতরণী নায়ে।

নায়ের মাঝে বসবো বটে,
না-এর মাঝে শোবো,
হাত দিয়েতো ছোঁব না মুখ
দুঃখ দিয়ে ছোঁব।

Tuesday, 23 December 2014

তোরা দেখে যা আমিনা মায়ের কোলে 



তোরা দেখে যা আমিনা মায়ের কোলে।
মধু পূর্ণিমার সেথা চাঁদ দোলে
যেন ঊষার কোলে রাঙ্গা রবি দোলে।।

কুল- মখলুকে আজ ধ্বনি ওঠে,- কে এলো ঐ,
কলেমা শাহাদাতের বাণী ঠোঁটে,- কে এলো ঐ,
খোদার জ্যোতি পেশানিতে ফোটে, -কে এলো ঐ,
আকাশ গোহ তারা পড়ে লুটে- কে এলো ঐ,
পড়ে দরুদ ফেরেশতা, বেহেশতে সব দুয়ার খোলে।।

মানুষে মানুষে অধিকার দিল যে জন,
“এক আল্লাহ ছাড়া প্রভু নাই”, কহিল যে জন,
মানুষের লাগি চির –দীন বেশ ধরিল যে জন,
বাদশাহ ফকিরের এক শামিল করিল যে জন,-
এল ধরায় ধরা দিতে সেই সে নবী,
ব্যথিত মানবের ধ্যানের ছবি
আজি মাতিল বিশ্ব- নিখিল মুক্তি- কলরোলে।।

[-কাজী নজরুল ইসলাম-]

ওগো নূর নবী হযরত



ওগো- নূর নবী হযরত!
আমরা- তোমারি উম্মত ।

তুমি দয়াল নবী
তুমি নূরের রবি
তুমি- বাসলে ভাল জগত জনে
দেখিয়ে দিলে পথ ।

আমরা- তোমার পথে চলি,
আমরা- তোমার কথা বলি,
তোমার আলোয় পাই যে খুঁজে
ঈমান, ঈজ্জত ।

সারা জাহানবাসী,
আমরা- তোমায় ভালবাসি,
তোমায় ভালবেসে মনে
পাই মোরা হিম্মত ।

© ফররুখ আহমদ

সবার আমি ছাত্র 


আকাশ আমায় শিক্ষা দিল
উদার হতে ভাই রে,
কর্মী হবার মন্ত্র আমি
বায়ুর কাছে পাই রে।

পাহাড় শিখায় তাহার সমান-
হই যেন ভাই মৌন-মহান,
খোলা মাঠের উপদেশে-
দিল-খোলা হই তাই রে।

সূর্য আমায় মন্ত্রণা দেয়
আপন তেজে জ্বলতে,
চাঁদ শিখাল হাসতে মোরে,
মধুর কথা বলতে।

ইঙ্গিতে তার শিখায় সাগর-
অন্তর হোক রত্ন-আকর;
নদীর কাছে শিক্ষা পেলাম
আপন বেগে চলতে।

মাটির কাছে সহিষ্ণুতা
পেলাম আমি শিক্ষা,
আপন কাজে কঠোর হতে
পাষান দিল দীক্ষা।

ঝরনা তাহার সহজ গানে,
গান জাগাল আমার প্রাণে;
শ্যাম বনানী সরসতা
আমায় দিল ভিক্ষা।


বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর,
সবার আমি ছাত্র,
নানান ভাবে নতুন জিনিস
শিখছি দিবারাত্র।

এই পৃথিবীর বিরাট খাতায়,
পাঠ্য যেসব পাতায় পাতায়
শিখছি সে সব কৌতূহলে,
নেই দ্বিধা লেশমাত্র।

# সুনির্মল বসু

প্রিয়তমাসু 


সীমান্তে আজ আমি প্রহরী।
অনেক রক্তাক্ত পথ অতিক্রম ক'রে
আজ এখানে এসে থমকে দাড়িয়েছি-
স্বদেশের সীমানায়।

দূসর তিউনিসিয়া থেকে স্নিগ্ধ ইতালী,
স্নিগ্ধ ইতালী থেকে ছুটে গেছি বিপ্লবী ফ্রান্সে
নক্ষত্রনিয়ন্ত্রিত নিয়তির মতো দুর্নিবার,
অপরাহত রাইফেল হাতে;
-ফ্রান্স থেকে প্রতিবেশী বার্মাতেও।

আজ দেহে আমার সৈনিকের কড়া পোশাক,
হাতে এখনো দুর্জয় রাইফেল,
রক্তে রক্তে তরঙ্গিত জয়ের আর শক্তির দুর্বহ দম্ভ,
আজ এখন সীমান্তের প্রহরী আমি।
আজ নীল আকাশ আমাকে পাঠিয়েছে নিমন্ত্রণ,
স্বদেশের হাওয়া বয়ে এনেছে অনুরোধ,
চোখের সামনে খুলে ধরেছে সবুজ চিঠিঃ
কিছুতেই বুঝি না কী ক'রে এড়াব তাকে?
কী ক'রে এড়াব এই সৈনিকের কড়া পোশাক?
যুদ্ধ শেষ। মাঠে মাঠে প্রসারিত শান্তি,
চোখে এসে লাগছে তারই শীতল হাওয়া,
প্রতি মুহূর্তে শ্লথ হয়ে আসে হাতের রাইফেল,
গা থেকে খসে পড়তে চায় এই কড়া পোশাক,
রাত্রে চাঁদ ওঠেঃ আমার চোখে ঘুম নেই।

তোমাকে ভেবেছি কতদিন,
কত শত্রুর পদক্ষেপ শোনার প্রতীক্ষার অবসরে,
কত গোলা ফাটার মুহূর্তে।
কতবার অবাধ্য হয়েছে মন, যুদ্ধজয়ের ফাঁকে ফাঁকে
কতবার হৃদয় জ্বলেছে অনুশোচনার অঙ্গারে
তোমার আর তোমাদের ভাবনায়।
তোমাকে ফেলে এসেছি দারিদ্র্যের মধ্যে
ছুঁড়ে দিয়েছি দুর্ভিক্ষের আগুনে,
ঝড়ে আর বন্যায়, মারী আর মড়কের দুঃসহ আঘাতে
বাব বার বিপন্ন হয়েছে তোমাদের অস্তিত্ব।
আর আমি ছুটে গেছি এক যুদ্ধক্ষেত্র থেকে আর এক যুদ্ধক্ষেত্র।
জানি না আজো, আছ কি নেই,
দুর্ভিক্ষে ফাঁকা আর বন্যায় তলিয়ে গেছে কিনা ভিটে
জানি না তাও।

তবু লিখছি তোমাকে আজঃ লিখছি আত্মম্ভর আশায়
ঘরে ফেরার সময় এসে গেছে।
জানি, আমার জন্যে কেউ প্রতীক্ষা ক'রে নেই
মালায় আর পতাকায়, প্রদীপে আর মঙ্গলঘটে;
জানি, সম্বর্ধনা রটবে না লোক মুখে,
মিলিত খুসিতে মিলবে না বীরত্বের পুরস্কার।
তবু, একটি হৃদয় নেচে উঠবে আমার আবির্ভাবে
সে তোমার হৃদয়।
যুদ্ধ চাই না আর, যুদ্ধ তো থেমে গেছে;
পদার্পণ করতে চায় না মন ইন্দোনেশিয়ায়
আর সামনে নয়,
এবার পেছনে ফেরার পালা।

পরের জন্যে যুদ্ধ করেছি অনেক,
এবার যুদ্ধ তোমার আর আমার জন্যে।
প্রশ্ন করো যদি এত যুদ্ধ ক'রে পেলাম কী? উত্তর তার-
তিউনিসিয়ায় পেয়েছি জয়,
ইতালীতে জনগণের বন্ধুত্ব,
ফ্রান্সে পেয়েছি মুক্তির মন্ত্র;
আর নিষ্কণ্টক বার্মায় পেলাম ঘরে ফেরার তাগাদা।

আমি যেন সেই বাতিওয়ালা,
সে সন্ধ্যায় রাজপথে-পথে বাতি জ্বালিয়ে ফেরে
অথচ নিজের ঘরে নেই যার বাতি জ্বালার সামর্থ্য,
নিজের ঘরেই জমে থাকে দুঃসহ অন্ধকার।।



( সুকান্ত ভট্টাচার্য, কাব্যগ্রন্থঃ ঘুমনেই)

" কবিতা ও স্কেচ " --- মহাদেব সাহা


তুমি দরজা নাও খুলতে পারো
আমি কি পাখি যে সারারাত ভাঙ্গাগলায় তোমাকে
ডাকতে পারবো,
আমি কি নদীর ঢেউ যে আছড়ে পড়তে পারবো
তোমার দুয়ারে এসে,
এমন কি কেউ যে অবিরাম করাঘাত করতে করতে
চেনা কণ্ঠে বলতে পারবো,
দরজা খোলো;

আমি তেমন কেউ নই,
নদীর ঢেউ নই,
রাতের পাখি নই,
পুরনো প্রেমিক নই
যার মৃদু করাঘাতে বিশ্বস্ত ডাকে তুমি তৎক্ষণাৎ
দরজা খুলে দেবে।

আমি জলের স্রোতের মতো, বাতাসের কাঁপা কণ্ঠস্বরের মতো
অস্থির শিশিরবিন্দুর মতো নিঃশব্দে তোমার
পায়ে ঝরে পড়ি
সেই জল কখনো তোমার চোখে পড়ে, কখনো পড়ে না;
এই সামান্য সঞ্চয় নিয়ে আমি তোমার কাছে খুব বেশি কী চাইতে পারি?

তুমি ডাক শুনতে পারো, নাও পারো
ফিরে তাকাতে পারো, নাও পারো,
তখনই দরজা খুলে আমাকে অভ্যর্থনা জানাবে
সেতো আশাই করি না।

কান্ডারী হুশিয়ার !


দুর্গম গিরি, কান্তার-মরু, দুস্তর পারাবার
লঙ্ঘিতে হবে রাত্রি-নিশীথে, যাত্রীরা হুশিয়ার!

দুলিতেছে তরি, ফুলিতেছে জল, ভুলিতেছে মাঝি পথ,
ছিঁড়িয়াছে পাল, কে ধরিবে হাল, আছে কার হিম্মৎ?
কে আছ জোয়ান হও আগুয়ান হাঁকিছে ভবিষ্যৎ।
এ তুফান ভারী, দিতে হবে পাড়ি, নিতে হবে তরী পার।

তিমির রাত্রি, মাতৃমন্ত্রী সান্ত্রীরা সাবধান!
যুগ-যুগান্ত সঞ্চিত ব্যথা ঘোষিয়াছে অভিযান।
ফেনাইয়া উঠে বঞ্চিত বুকে পুঞ্জিত অভিমান,
ইহাদের পথে নিতে হবে সাথে, দিতে হবে অধিকার।

অসহায় জাতি মরিছে ডুবিয়া, জানে না সন্তরন
কান্ডারী! আজ দেখিব তোমার মাতৃমুক্তি পন।
হিন্দু না ওরা মুসলিম? ওই জিজ্ঞাসে কোন জন?
কান্ডারী! বল, ডুবিছে মানুষ, সন্তান মোর মার

গিরি সংকট, ভীরু যাত্রীরা গুরু গরজায় বাজ,
পশ্চাৎ-পথ-যাত্রীর মনে সন্দেহ জাগে আজ!
কান্ডারী!তুমি ভুলিবে কি পথ? ত্যজিবে কি পথ-মাঝ?
করে হানাহানি, তবু চলো টানি, নিয়াছ যে মহাভার!

কান্ডারী! তব সম্মুখে ঐ পলাশীর প্রান্তর,
বাঙালীর খুনে লাল হল যেথা ক্লাইভের খঞ্জর!
ঐ গঙ্গায় ডুবিয়াছে হায়, ভারতের দিবাকর!
উদিবে সে রবি আমাদেরি খুনে রাঙিয়া পূনর্বার।

ফাঁসির মঞ্চে গেয়ে গেল যারা জীবনের জয়গান,
আসি অলক্ষ্যে দাঁড়ায়েছে তারা, দিবে কোন্ বলিদান
আজি পরীক্ষা, জাতির অথবা জাতের করিবে ত্রাণ?
দুলিতেছে তরী, ফুলিতেছে জল, কান্ডারী হুশিয়ার!

– কাজী নজরুল ইসলাম



কলম 

কলম, তুমি কত না যুগ কত না কাল ধ'রে
অক্ষরে অক্ষরে
গিয়েছ শুধু ক্লান্তিহীন কাহিনী শুরু ক'রে।
কলম, তুমি কাহিনী লেখো, তোমার কাহিনী কি
দুঃখে জ্বলে তলোয়ারের মতন ঝিকিমিকি?

কলম, তুমি শুধু বারংবার,
আনত ক'রে ক্লান্ত ঘাড়
গিয়েছ লিখে স্বপ্ন আর পুরনো কত কথা,
সাহিত্যের দাসত্বের ক্ষুদিত বশ্যতা।
ভগ্ন নিব, রুগ্ন দেহ, জলের মতো কালি,
কলম, তুমি নিরপরাদ তবুও গালাগালি
খেয়েছ আর সয়েছ কত লেখকদের ঘৃণা,
কলম, তুমি চেষ্টা কর, দাঁড়াতে পার কি না।

হে কলম! তুমি ইতিহাস গিয়েছ লিখে
লিখে লিখে শুধু ছড়িয়ে দিয়েছ চতুর্দিকে।
তবু ইতিহাস মূল্য দেবে না, এতটুকু কোন
দেবে না তোমায়, জেনো ইতিহাস বড়ই কৃপণ;
কত লাঞ্ছনা, খাটুনি গিয়েছে লেখকের হাতে
ঘুমহীন চোখে অবিশ্রান্ত অজস্র রাতে।
তোমার গোপন অশ্রু তাইতো ফসল ফলায়
বহু সাহিত্য বহু কাব্যের বুকের তলায়।
তবু দেখ বোধ নেই লেখকের কৃতজ্ঞতা,
কেন চলবে এ প্রভুর খেয়ালে, লিখবে কথা?

হে কলম! হে লেখনী! আর কত দিন
ঘর্ষণে ঘর্ষণে হবে ক্ষীণ?
আর কত মৌন-মূক, শব্দহীন দ্বিধান্বিত বুকে
কালির কলঙ্ক চিহ্ন রেখে দেবে মুখে?
আর কত আর
কাটবে দুঃসহ দিন দুর্বার লজ্জার?
এই দাসত্ব ঘুচে যাক, এ কলঙ্ক মুছে যাক আজ,
কাজ কর- কাজ।

মজুর দেখ নি তুমি? হে কলম, দেখ নি বেকার?
বিদ্রোহ দেখ নি তুমি? রক্তে কিছু পাও নি শেখার?
কত না শতাব্দী, যুগ থেকে তুমি আজো আছ দাস,
প্রত্যেক লেখায় শুনি কেবল তোমার দীর্ঘশ্বাস!
দিন নেই, রাত্রি নেই, শ্রান্তিহীন, নেই কোনো ছুটি,
একটু অবাধ্য হলে তখুনি ভ্রূকুটি;
এমনি করেই কাটে দুর্ভাগা তোমার বারো মাস,
কয়েকটি পয়সায় কেনা, হে কলম, তুমি ক্রীতদাস।
তাই যত লেখ, তত পরিশ্রম এসে হয় জড়োঃ
-কলম! বিদ্রোহ আজ! দল বেঁধে ধর্মঘট করো।
লেখক স্তম্ভিত হোক, কেরানীরা ছেড়ে দিক হাঁফ,
মহাজনী বন্ধ হোক, বন্ধ হোক মজুরের পাপ;
উদ্বেগ-আকুল হোক প্রিয়া যত দূর দূর দেশে,
কলম! বিদ্রোহ আজ, ধর্মঘট, হোক অবশেষে;
আর কালো কালি নয়, রক্তে আজ ইতিহাস লিখে
দেওয়ালে দেওয়ালে এঁটে, হে কলম, আনো দিকে দিকে।

-[ সুকান্ত ভট্টাচার্য ]

Beautiful Dreamer 


Beautiful dreamer, wake unto me,
Starlight and dewdrops are waiting for thee;
Sounds of the rude world heard in the day,
Lull'd by the moonlight have all pass'd a way!

Beautiful dreamer, queen of my song,
List while I woo thee with soft melody;
Gone are the cares of life's busy throng,—
Beautiful dreamer, awake unto me!
Beautiful dreamer awake unto me!

Beautiful dreamer, out on the sea
Mermaids are chaunting the wild lorelie;
Over the streamlet vapors are borne,
Waiting to fade at the bright coming morn.

Beautiful dreamer, beam on my heart,
E'en as the morn on the streamlet and sea;
Then will all clouds of sorrow depart,—
Beautiful dreamer, awake unto me!
Beautiful dreamer, awake unto me!

© STEPHEN C. FOSTER. All rights reserved.



A thing of beauty is a joy for ever:
Its lovliness increases; it will never
Pass into nothingness; but still will keep
A bower quiet for us, and a sleep
Full of sweet dreams, and health, and quiet breathing.
Therefore, on every morrow, are we wreathing
A flowery band to bind us to the earth,
Spite of despondence, of the inhuman dearth
Of noble natures, of the gloomy days,
Of all the unhealthy and o'er-darkn'd ways
Made for our searching: yes, in spite of all,
Some shape of beauty moves away the pall
From our dark spirits. Such the sun, the moon,
Trees old and young, sprouting a shady boon
For simple sheep; and such are daffodils
With the green world they live in; and clear rills
That for themselves a cooling covert make
'Gainst the hot season; the mid-forest brake,
Rich with a sprinkling of fair musk-rose blooms:
And such too is the grandeur of the dooms
We have imagined for the mighty dead;
An endless fountain of immortal drink,
Pouring unto us from the heaven's brink.

By John Keats
 

Sunday, 21 December 2014




এ হত্যাকারীরা ইসলামের সেবক নয় 


পেশোয়ারে সেনাবাহিনী পরিচালিত স্কুলে তালেবান জঙ্গিদের পাশবিক হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে পাকিস্তানসহ সারা বিশ্বে চরম ধিক্কার উঠেছে। পাকিস্তানের ওয়াজিরিস্তানে তালেবানদের বিরুদ্ধে যে সেনা অভিযান চলছে, এই শিশুহত্যা তথা শিক্ষার্থী হত্যা তারই প্রতিশোধ বলে তালেবানদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। অথচ এটি ইসলাম সমর্থন করে না। মহানবীর (সা.) বিদায় হজের ভাষণে বলা হয়েছে, প্রত্যেক মানুষ তার নিজের কৃতকর্মের জন্য দায়ী। কোনো একজনের কৃত অপরাধে অন্যকে অর্থাৎ তার জ্ঞাতী গোষ্ঠী বা গোত্রকে দায়ী করা চলবে না। এটি অন্যায় ও অবৈধ জানবে (মোহাম্মদ বরকতুল্লাহ, বিদায় হজ)।
এরপরও পবিত্র ইসলামের নামে এহেন জঘন্য হত্যাকাণ্ড ঘটানো হল। নিষ্পাপ, নিরপরাধ শিশুদের হত্যা করা হল। এই হত্যার পিপাসা পাকিস্তানের সাংস্কৃতিক ধারার মধ্যেও আছে। প্রাসঙ্গিকভাবেই বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ মনে পড়ল। এ ভাষণের প্রথমেই তিনি বলেছেন, কিন্তু দুঃখের বিষয় আজ ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, রংপুরে আমার ভাইয়ের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত হয়েছে। তারপর আবার বলেছেন, আমি বলেছিলাম, জেনারেল ইয়াহিয়া খান সাহেব, আপনি পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট, দেখে যান কীভাবে আমার গরিবের উপর, আমার বাংলার মানুষের বুকের উপর গুলি করা হয়েছে। কীভাবে আমার মায়ের কোল খালি করা হয়েছে, কী করে মানুষকে হত্যা করা হয়েছে।পাকিস্তানের জঙ্গি তালেবানরা জিঘাংসাপরায়ণ হয়ে শতাধিক শিশুকে হত্যা করে মায়ের কোল খালি করে দিয়েছে। ওই সন্তানহারা মায়েরা এখন পাকিস্তানের মাটিতে বুক চাপড়াচ্ছে। এক মুহূর্তের জন্য ভুলতে পারি না মনীষী বার্নাড শর কথাটি, ঈশ্বর যার আকাশে তার সম্পর্কে সাবধান। সে হয় নিষ্ঠুর। সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছে ইসলামের পতাকা ব্যবহারকারী জঙ্গিরা। পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি জনপদে শান্তির ধর্ম ইসলামের নাম ব্যবহারকারী জঙ্গিরা মানুষের জীবন কেড়ে নিচ্ছে, বুকের তাজা রক্ত ঝরাচ্ছে, মায়ের কোল খালি করছে। বিদ্রোহী কবি নজরুল বলেছেন, মানুষের জন্যই ধর্ম, ধর্মের জন্য মানুষ নয়। একই কথা অধ্যক্ষ ইব্রাহিম খাঁও বলেছেন, মানুষের জন্যই ধর্ম। বাঙালি মুসলমান লেখকরা কম ইহজাগতিকতার কথা বলেননি। আজ এটা দিবালোকের মতো পরিষ্কার যে, ধর্মান্ধ, মৌলবাদী, জঙ্গি, জেএমবি, তালেবান ও মওদুদীপন্থীরা ইসলামের সেবক নন। জঙ্গিবাদের সঙ্গে ইহজাগতিকতার যে সম্পর্ক, পারলৌকিকতার সে সম্পর্ক নেই। আজকাল জঙ্গিরা তাদের টার্গেট পূরণ করার জন্য আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। জঙ্গিবাদের সঙ্গে কোটি কোটি ডলারের মাফিয়া ব্যবসা জড়িত। যেখানে ইসলামের ইতিহাসে সগৌরবে বলা হয়েছে, তরবারির দ্বারা ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হয়নি, সেখানে জঙ্গিরা স্বধর্মী ভিন্ন মতাবলম্বীর ওপর তরবারি প্রয়োগ করছে। ইসলামে যেখানে গণতন্ত্রের কথা, সহিষ্ণুতার কথা, ধৈর্যের কথা বলা হয়েছে, সেখানে জঙ্গিরা তাদের নিজেদের প্রয়োজনের তাগিদেজীবন কেড়ে নিতে দ্বিধাবোধকরছে না।এই জঙ্গিবাদ, এই নিষ্ঠুরতার দৃষ্টান্ত ইসলামের ইতিহাসেও আছে। মূলত ধর্মের নামে নিষ্ঠুরতা তখনই বৃদ্ধি পায়, যখন ধর্ম রাজনীতির হাতিয়ার হয়। ইসলামের ইতিহাসে হাজ্জাজ বিন ইউসুফ একজন নিষ্ঠুরতম শাসক ছিলেন। এই নিষ্ঠুরতা চালিয়েছিলেন তিনি স্বধর্মী প্রতিপক্ষের ওপর। পবিত্র ইসলামের নামে অধর্ম কম হয়নি। কবর থেকে হাড়গোড় উঠিয়ে আগুন দিয়ে জ্বালানোর জিঘাংসামূলক ইতিহাসও আছে। ভারতের সুলতান ও মোগল ইতিহাস নিষ্ঠুরতায় পরিপূর্ণ। ধর্মীয় মূল্যবোধ সেখানে কোনো কাজে লাগেনি।জঙ্গিরা এক ধরনের কাপুরুষও। আমেরিকার টুইন টাওয়ার যারা ধ্বংস করেছে, তাদের কাপুরুষ ছাড়া আর কী বলা যায়? কোনো অপশক্তির মুখোমুখি হওয়ার সৎ সাহস তাদের নেই। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ, ইসরাইলি জায়নবাদ- কোন অপশক্তিকে এরা মোকাবেলা করার সৎ সাহস রাখে? টুইন টাওয়ারে যারা জীবন দিয়েছিল, তারা অত্যন্ত অসহায় মানুষ ছিল। তারা ছিল নিরস্ত্র। তাদের কী দোষ ছিল? তদ্রুপ ইসরাইলি জায়নবাদীরা নিরীহ ও নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিদের লাগাতারভাবে হত্যা করে যাচ্ছে। পারলে ইসলামী জঙ্গিরা আসুক না ফিলিস্তিনিদের বাঁচানোর জন্য!মালালা ইউসুফ জাই তো বয়সে কিশোরী। তাকে কেন হত্যার উদ্যোগ নিয়েছিল তালেবানরা? কী দোষ ছিল তার? জঙ্গিবাদের সঙ্গে বিবেকের ন্যূনতম সম্পর্ক নেই, যদি থাকত তাহলে প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোকে তারা হত্যা করতে পারত না। তিনি তো পাকিস্তানের মতো একটি ধর্মান্ধ, সেনাশাসিত রাষ্ট্রে গণতন্ত্র কায়েম করতে চেয়েছিলেন। যে রাষ্ট্রে গণতন্ত্র নেই, তা বর্বর রাষ্ট্র হতে বাধ্য। জঙ্গিরা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে হত্যা করার জন্য গোপনে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে বলেও খবর প্রকাশিত হয়েছে। তারা বাংলাদেশকেও পাকিস্তানের ওয়ারিজিস্তানে পরিণত করতে চায়। বাংলাদেশেও শিশুরা জঙ্গিদের হাতে প্রাণ হারিয়েছে। শিশুরা কি ফুলের মতো পবিত্র নয়? আল্লাহর রাসূল কি ফুলের গুরুত্ব দেননি? তিনি কি বলেননি, জোটে যদি মোটে দুটি পয়সা, ফুল কিনে নিও হে অনুরাগী? তাহলে কেমন করে পেট্রোল বোমা মেরে জঙ্গিরা চলন্ত বাসের নারী ও শিশু যাত্রীদের অগ্নিদগ্ধ করতে পারল?পাকিস্তানের পেশোয়ারের তালেবানরা শিশু শিক্ষার্থীদের হত্যা করে যে পাশবিকতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করল, তার নিন্দা জানানোর ভাষা হারিয়ে ফেলেছে বিশ্বের সব সভ্য মানুষ। পৃথিবীতে সব শিশুই এক, তাদের মুখের হাসি এক, চোখের পানি এক, তাদের আর্তনাদ এক, অসহায়ত্ব এক। তারা বিশ্ব নাগরিক, বিশ্বের সম্ভাবনাময় ফলবান বৃক্ষ। কে বলবে যারা পেশোয়ারে অকালে ঝরে গেল, তাদের মধ্যে মহামানবের প্রতিচ্ছায়া নেই?মহামতি মার্কসের একটি স্বপ্ন যেভাবেই হোক পূরণ হচ্ছে; তা হল, বিশ্ব আজ একটি মহারাষ্ট্র। তাই পেশোয়ারের ঝরে পড়া শিশুরা আমাদের সবার অস্তিত্ব নিংড়ানো সন্তান।এই জঘন্য জঙ্গি-পশুদের দমন করার জন্য বিশ্ববাসীকে গণতন্ত্রের পতাকা হাতে নিয়ে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানাচ্ছি। না হলে পাকিস্তানের জঙ্গিবাদ, পশুত্ব, নরাধমযজ্ঞ বিশ্বমঞ্চের চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়বে।

@মাহমুদুল বাসার : প্রাবন্ধিক, গবেষক

Friday, 19 December 2014

আকাশ ও মানুষ – নির্মলেন্দু গুণ



কবে থেকে আকাশ দাঁড়িয়ে আছে একা,
তার বুক থেকে খসে পড়েছে কত তারা।
বেঁচে থাকলে আরো কত তারাই খসবে,
তা নিয়ে আকাশ কি দুঃখ করতে বসবে?
না, বসবে না, আমি বলছি, লিখে নাও,
আকাশকে তো মহান মানি এ-কারণেই।
মনুষ্যবৎ হলে কি মানুষ তাকে মানতো?

প্রিয়জন চলে গেলে মানুষই ব্যথিত হয়,
আকাশ নির্বিকার, আকাশ কখনও নয়।
তোমরা মানুষ, তাই সহজেই দুঃখ পাও,
হে ঈশ্বর, আমাকে আকাশ করে দাও।

In Light: In Night



Dark 'gainst the deepening skies,
Frosty with stars,
See I the bars
Of a weird cross arise.

How glooms the night away!
Winds are abroad;
Waves of the ford
Boom out a dismal lay.

Shrine wet with dew and tears
Here will I rest,
Easing a breast
Worn by despair and fears.

Not on the brow of her
Who walks in light,
While I in night,
Let thy long shadow stir.

Rather across this heart
Let it be laid,
Shade after shade,
Gloom hath with her no part.

While in his sight her soul
Greatens and glows,
Till her heart's rose
Opes at his fond control;

I clasp the cross and cry
"Strength, Holy Rood!"
Kiss the cold wood
While at its foot I lie.

Angel, whose wings I see
Shift 'mongst the stars,
Make these chill bars
Ladders of light for me.

by: Anna Katherine Green (1846-1935)

Wednesday, 17 December 2014

কত খুঁজিলাম নীল কুমুদ তোরে 


কত খুঁজিলাম নীল কুমুদ তোরে।
আছে নীল জলে শূনো সরসী ভ'রে॥
উঠেছে আকাশে চাঁদ, ফুটেছে তারা,
আছে সব, একা মোর কুমুদ হারা।
অভিমানে সে কি গিয়াছে ঝ'রে॥

বিল ঝিল খুঁজি নাই সে যে হায়,
হৃদয় শুধায় চোখে, কোথায় কোথায়।
ঘুমায়ে আছে সে কি আছে লুকায়ে,
সোঁদা মাথা এলোচুল গেল শুকায়ে
নদীরে শুধাই-জল যায় যে সরে॥

[কাজী নজরুল ইসলাম]

দিবস যদি সাঙ্গ হল, না যদি গাহে পাখি



দিবস যদি সাঙ্গ হল, না যদি গাহে পাখি,
            ক্লান্ত বায়ু না যদি আর চলে--
      এবার তবে গভীর করে ফেলো গো মোরে ঢাকি
            অতি নিবিড় ঘন তিমিরতলে
             স্বপন দিয়ে গোপনে ধীরে ধীরে
             যেমন করে ঢেকেছ ধরণীরে,
      যেমন করে ঢেকেছ তুমি মুদিয়া-পড়া আঁখি,
             ঢেকেছ তুমি রাতের শতদলে।
      পাথেয় যার ফুরায়ে আসে পথের মাঝখানে,
             ক্ষতির রেখা উঠেছে যার ফুটে,
      বসনভূষা মলিন হল ধুলায় অপমানে
             শকতি যার পড়িতে চায় টুটে--
                    ঢাকিয়া দিক তাহার ক্ষতব্যথা
                    করুণাঘন গভীর গোপনতা,
      ঘুচায়ে লাজ ফুটাও তারে নবীন উষাপানে
             জুড়ায়ে তারে আঁধার সুধাজলে।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-
কলিকাতা, ২৯ শ্রাবণ, ১৩১৭

জন্মেছি এই দেশে

                                               

অনেক কথার গুঞ্জন শুনি
অনেক গানের সুর
সবচেয়ে ভাল লাগে যে আমার
‘মাগো’ ডাক সুমধুর।

আমার দেশের মাঠের মাটিতে
কৃষাণ দুপুরবেলা
ক্লান্তি নাশিতে কন্ঠে যে তার
সুর লয়ে করে খেলা।

মুক্ত আকাশে মুক্ত মনের
সেই গান চলে ভেসে
জন্মেছি মাগো তোমার কোলেতে
মরি যেন এই দেশে।

এই বাংলার আকাশ-বাতাস
এই বাংলার ভাসা
এই বাংলার নদী, গিরি-বনে
বাঁচিয়া মরিতে আশা।

শত সন্তান সাধ করে এর
ধূলি মাখি সারা গায়
বড় গৌরবে মাথা উচু করি
মানুষ হইতে চায়।

- সুফিয়া কামাল