পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সহযোগী হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বদেশের মাটিতে নিজের জাতির সন্তানদের রক্তগঙ্গা বইয়ে দেওয়ার যে পাপ, তার জন্য অনুশোচনাই স্বাভাবিক ছিল হয়তো। অনুতাপ ও পাপবোধে অবনত হওয়া উচিত ছিল তাদের। কিন্তু কাদের মোল্লার ভি-চিহ্ন দেখে মুক্তিযুদ্ধ-গর্বিত নাগরিকরা, বিশেষত তরুণ প্রজন্ম ফুঁসে উঠেছিল। সৃষ্টি হয়েছিল অভূতপূর্ব 'গণজাগরণ'। শাহবাগের সেই উত্তাল তরঙ্গ আছড়ে পড়েছিল দেশের প্রান্তে প্রান্তে। সরকার বাধ্য হয়েছিল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে সংশোধনী এনে রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আপিলের সুযোগ করে দিতে। পরিণতিতে কাদের মোল্লা যাবজ্জীবন নয়, মৃত্যুদণ্ডাদেশ পেয়েছিলেন। তার ফাঁসিও কার্যকর হয়ে গেছে। কাদের মোল্লা না হয় বিপুল প্রত্যাশিত মৃত্যুদণ্ডের বদলে যাবজ্জীবন পেয়ে ভি-চিহ্ন দেখিয়েছিলেন; মীর কাসেম আলী কেন সর্বোচ্চ সাজা পেয়েও এভাবে দুই আঙুল প্রসারিত করেন?
এর নানা মনো-সামাজিক ব্যাখ্যা থাকতে পারে। বস্তুত টেলিভিশন টক শোতে কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইতিমধ্যে এর নানা বিশ্লেষণ হাজিরও হয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে আমাকে ঘটনা দুটি শৈশবে শোনা 'চিত্তর বাইজ' কৌতুকটি মনে করিয়ে দিয়েছে। বিষয়টি এরকম_ দুর্গাপূজার সময় দুই ঢুলির মধ্যে 'বাইজ' বা বাজনা প্রতিযোগিতা হচ্ছিল। কে কত ধরনের শারীরিক কসরত সহযোগে বাজনা বাজাতে পারে। এর মধ্যে একজন ঢুলি কসরত দেখাতে গিয়ে চিৎ হয়ে পড়ে যায়। তামাশা দেখতে ভিড় করা লোকজন তাকে পরাজিত ভেবে হৈ হৈ রব তুলেছে। প্রতিপক্ষ ঢুলিও বিজয় নিশ্চিত জেনে কসরত থামিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু চিৎ হওয়া ঢুলি মাটিতে শুয়েই ঢোল বাজাতে বাজাতে চেঁচিয়ে বলে ওঠে_ আরে আমি হেরে যাইনি, এটা হলো 'চিত্তর বাইজ'। এই বাজনা চিৎ হয়ে বাজাতে হয়।
যুদ্ধাপরাধের দায়ে দণ্ডিত হয়ে 'ভি-চিহ্ন' প্রদর্শন আসলে 'চিত্তর বাইজ' ছাড়া কিছু নয়। অনেকের মনে আছে, ওয়ান-ইলেভেনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ সংবাদমাধ্যমের সামনে দাঁত-মুখ খিঁচিয়ে বলেছিলেন, 'দেশে কোনো যুদ্ধাপরাধী নেই'। ওই সময় তার ওই ধরনের বক্তব্য অস্বাভাবিক ছিল না। কারণ অপরাধ সংগঠনের পর ততদিনে তারা সাড়ে তিন দশক কাটিয়ে দিয়েছিলেন নির্বিঘ্নে। কেবল নির্বিঘ্ন নয়, ক্ষমতার চর্ব-চোষ্য-লেহ্যও পেয়েছেন। স্বাধীন বাংলাদেশে তারা কেবল রাজনীতি করার সুযোগ পাননি, শহীদের রক্তে রাঙা লাল-সবুজ পতাকা গাড়িতে উড়িয়ে ভিআইপি প্রটোকল উপভোগ করেছেন। শুধু তাই নয়, সাধারণ্যেও এমন ধারণা সুকৌশলে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল যে চিহ্নিত অথচ দেশীয়-আন্তর্জাতিকভাবে প্রভাবশালী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দুরস্ত; ঘাঁটানোও সম্ভব নয়। যে সরকার বা প্রশাসন তাদের চৌদ্দ শিকের ভেতরে পুরতে যাবে, তাদের অস্তিত্বই বিপন্ন হয়ে যেতে পারে।
সব মিথ্যাচার, ভয়, প্রলোভন, অর্থ ও অস্ত্রের ঝনঝনানি মিথ্যা প্রমাণ করে এই যুদ্ধাপরাধীদের কেবল আটকই করা সম্ভব হয়নি, বিচারও সম্পন্ন করা সম্ভব হচ্ছে। সাধারণ মানুষও দেখছে, এরা কতটা কাগুজে বাঘ। মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে যুদ্ধাপরাধীদের জঘন্য অন্যায়ের বিরুদ্ধে সত্য-ন্যায়ের যে বিপুল বিজয়, তার বিপরীতে এসব ভি-চিহ্ন 'চিত্তর বাইজ' দেখানোর মতো কৌতুককর।
যুদ্ধাপরাধের দায়ে দণ্ডিত হয়ে 'ভি-চিহ্ন' প্রদর্শন আসলে 'চিত্তর বাইজ' ছাড়া কিছু নয়। অনেকের মনে আছে, ওয়ান-ইলেভেনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ সংবাদমাধ্যমের সামনে দাঁত-মুখ খিঁচিয়ে বলেছিলেন, 'দেশে কোনো যুদ্ধাপরাধী নেই'। ওই সময় তার ওই ধরনের বক্তব্য অস্বাভাবিক ছিল না। কারণ অপরাধ সংগঠনের পর ততদিনে তারা সাড়ে তিন দশক কাটিয়ে দিয়েছিলেন নির্বিঘ্নে। কেবল নির্বিঘ্ন নয়, ক্ষমতার চর্ব-চোষ্য-লেহ্যও পেয়েছেন। স্বাধীন বাংলাদেশে তারা কেবল রাজনীতি করার সুযোগ পাননি, শহীদের রক্তে রাঙা লাল-সবুজ পতাকা গাড়িতে উড়িয়ে ভিআইপি প্রটোকল উপভোগ করেছেন। শুধু তাই নয়, সাধারণ্যেও এমন ধারণা সুকৌশলে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল যে চিহ্নিত অথচ দেশীয়-আন্তর্জাতিকভাবে প্রভাবশালী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দুরস্ত; ঘাঁটানোও সম্ভব নয়। যে সরকার বা প্রশাসন তাদের চৌদ্দ শিকের ভেতরে পুরতে যাবে, তাদের অস্তিত্বই বিপন্ন হয়ে যেতে পারে।
সব মিথ্যাচার, ভয়, প্রলোভন, অর্থ ও অস্ত্রের ঝনঝনানি মিথ্যা প্রমাণ করে এই যুদ্ধাপরাধীদের কেবল আটকই করা সম্ভব হয়নি, বিচারও সম্পন্ন করা সম্ভব হচ্ছে। সাধারণ মানুষও দেখছে, এরা কতটা কাগুজে বাঘ। মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে যুদ্ধাপরাধীদের জঘন্য অন্যায়ের বিরুদ্ধে সত্য-ন্যায়ের যে বিপুল বিজয়, তার বিপরীতে এসব ভি-চিহ্ন 'চিত্তর বাইজ' দেখানোর মতো কৌতুককর।