Saturday, 31 January 2015

বাঁচতে হলে চিনতে হবে জামায়াতে ইসলামীকে

হাইস্কুলে পড়ার দিনগুলোর বার্ষিক পরীক্ষার আগে আগে মনে ক্লাসে সেকেন্ডে হয়ে যাওয়ার ভয় কাজ করত। মাঝে মাঝে বাজারের মসজিদের ঈমাম হুজুরের সঙ্গে নামাজ শেষে মনের আশঙ্কা-অস্থিরতা শেয়ার করতাম। হুজুর সব কথা শুনে, মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে একটা কথাই বলতেন, ‘মিয়া সাব (সাহেব), ফল দেওনের (দেয়ার) মালিক আল্লাহ, আফনে (আপনি) মন দিয়া শুধু পড়েন।’ শীতের রাতগুলোতে খেলার মাঠে, ফাঁকা ধানী জমিতে ওয়াজ মাহ্ফিল হত। আখেরী মোনাজাতের রাতে বাড়ির বাইরে রাত কাটানোর সুযোগ মিলত। কিছুক্ষণ হুজুরদের ওয়াজ শুনে, বন্ধুরা মিলে ছোলা, বুট, মুরালি, জিলাপি খেয়ে কাছের কোনো মসজিদের কার্পেট, পাটিতে নাতিদীর্ঘ ঘুম দিয়ে, কখনো ফজর নামাজ পড়ে, কখনো ঘুমের জন্য নামায মিস করে (আল্লাহ্ ক্ষমা করুন) সকালে বাড়ি ফেরে আবার ঘুমিয়ে উঠতাম। কলেজ, ইউনিভার্সিটি পাশ দিয়ে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর জন্মস্থান মক্কা, স্মৃতি বিজড়িত মানব প্রেমের শহর মদিনা সফর করেছিলাম। বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী, বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতার জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনার অফিসিয়াল মিডিয়া টিমের সদস্য হয়ে সৌদি আরব (জাজিরাতুল আরব) সফর করেছিলাম ২০০৯ সালের এপ্রিল মাসে। সর্বশক্তিমান আল্লাহ্তায়ালার ঘর, কাবা শরিফ তাওয়াফ করার সময় একটি স্মৃতি অমলিন থাকবে আজীবন। প্রধানমন্ত্রী, বঙ্গবন্ধুর আরেক কন্যা শেখ রেহানা, জাতির জনকের নাতি সজীব ওয়াজেদ জয় এবং অন্যান্যরা আল্লাহর ঘরকে কেন্দ্র করে ঘুরছেন। বাংলাদেশ টেলিভিশনের ক্যামেরা পারসন তাওয়াফ করার পাশাপাশি উল্টো হেঁটে পেশাগত দায়িত্ব পালনে হজ্ব ভিডিও ধারণ করছিলেন। আমরা কেউই সেদিন ধর্মপরায়ণ আরেক ভাইয়ের উল্টো হেঁটে তাওয়াফ করার তক্লিফ অনুভব করিনি। করেছিলেন শেখ হাসিনা। ক্যামেরাপারসনকে স্পষ্ট ভাষায় বললেন- ক্যামেরা রেখে মহান আল্লাহর ধ্যানে মগ্ন হতে। আল্লাহ্র বান্দাকে যিনি ভালোবাসেন, তিনিই তো প্রকৃত আল্লাহ্-প্রেমিক।

গ্রামের মসজিদ, মক্তব, মাদ্রাসা, ইমাম হুজুর, ঠনঠনে শীতের রাতে বহুদূর হেঁটে ফজরের নামাজ আদায় করতে আসা মুরুব্বীদের দেখে, হযরত মোহাম্মদ (সাঃ)’র জীবনী পড়ে, খলিফাদের শাসনামলের ইতিহাস জেনে তাবলীগ জামাতের মেহমানদের আচরণ দেখে, বয়ান শুনে, বাংলাদেশে ইসলাম ধর্ম প্রচার করতে আসা সুফী-সাধকদের মানবতাবাদী কর্মকান্ড জেনে জেনে জন্মসূত্রে মুসলিম হওয়ায় মনে মনে মানুষকে, জন্মভূমিকে ভালোবেসে স্বদেশ প্রেমকে ঈমানের অঙ্গ জেনে, মুক্তিযোদ্ধাদের ঋণ শোধ করে সবধরনের বৈষম্য বিলুপ্ত করে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়ে ব্রতী হয়েছি। একই ব্রত নিয়ে, ধর্ম, সংস্কার, শ্রম, উৎপাদন, মেধা, মনন, সাধনা দিয়ে জন্মভূমিকে এগিয়ে নিয়ে চলেছে এদেশের কৃষক, শ্রমিক, আমলা, রাজনীতিবিদ, শিক্ষক, ডাক্তার, বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী, ব্যবসায়ীসহ সমস্ত শ্রেণী-পেশার মানুষ।

একাত্তরে ৩০ লাখ দেশপ্রেমিক মানুষের নির্মম হত্যা, দু’লাখ মা-বোনের হারানো সম্ভ্রম, ১৯৭৫’র ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিবসহ পরিবারের প্রায় সকলের হত্যাকান্ড, ৩ নভেম্বরের জাতীয় চার নেতা হত্যার শোক, পরবর্তীতে স্বাধীনতার বিরোধী ও সামরিক শাসকদের আঁতাত ও নানামুখী ষড়যন্ত্রের ধকল কাটিয়ে উঠে দেশ যখন উন্নয়নের সঠিক পথে এগিয়ে চলেছে, তখনই আবার জন্মভূমি মোকাবেলা করছে স্মরণকালের ভয়াবহতম সঙ্কট। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করে ঐতিহাসিক কলঙ্ক দূর করে বাংলাদেশ যখন প্রকৃত সমৃদ্ধির দিকে যাত্রা শুরু করেছিল, তখনই সৃষ্টি করা হয়েছে সঙ্কট। পেট্রোল বোমা মেরে মানুষকে জীবন্ত পুড়িয়ে মেরে, বন্দর-বাজার অচল করে, দেশের উৎপাদন কাঠামোকে ধ্বংস করে অর্থনীতিকে স্থবির করে রেললাইন, রেলগাড়িসহ রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ধ্বংস করে, নিরাপত্তা বাহিনীর উপর সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে জন্মভূমির কোমড় ভেঙ্গে দেয়ার অপপ্রয়াসে সুতীব্রতায় সক্রিয় অন্ধকারের শক্তি। এই ধ্বংসযজ্ঞে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছে ৭১’র পরাজিত শক্তি জামায়াতে ইসলামী। রাজনৈতিকভাবে সর্বতোভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করছে সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী হল (বিএনপি)। বুদ্ধিবৃত্তিক ও কৌশলগত সহায়তা করছে প্রগতিশীল নামে কথিত, একটি শীর্ষস্থানীয় জাতীয় দৈনিক। নেপথ্যে আন্তর্জাতিক পৃষ্ঠপোষকের ভূমিকা পালন করছে সা¤্রাজ্যবাদী, পুঁজিতন্ত্রের ধারক ও বাহক পশ্চিমা শক্তি। এই সম্মিলিত অশুভ শক্তির মূল অস্ত্র হয়ে উঠেছে, ‘ধর্ম’ মূলত, শান্তির ধর্ম ইসলাম। পীর-আউলিয়া, ওলামা মাশায়েখদের দেশ বাংলাদেশের শান্তি প্রিয় মানুষের বিশেষ করে তরুণ-সমাজের সামনে তাই জামায়াতে ইসলামীর প্রকৃত চেহারা উম্মোচন করে ভয়াল জাতীয় শত্রুকে চিহ্নিত করাই এখন আমাদের জিহাদ।

বিগত ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে শাসন ক্ষমতায় ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্ব দানকারী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। পাঁচ বছরের মেয়াদে বাংলাদেশকে প্রথমবারের মত খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে সক্ষম হয় তৎকালীন সরকার। বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা পাঁচ বছরে উত্তীর্ণ হয় ৪৩০০ মেগাওয়াটে এরপরেও ২০০১ এর নির্বাচনে পুনরায় ক্ষমতায় আসতে দেওয়া হয়নি আওয়ামী লীগকে। একদিকে বিএনপি-জামাত জোট অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বধীন এই পশ্চিমা বেনিয়া শক্তি। সা¤্রাজ্যবাদী শক্তির সর্বোচ্চ চাপেও দেশের মানুষের স্বার্থ বিকিয়ে দিয়ে গ্যাস রপ্তানিতে রাজি না হওয়ায় আওয়ামী লীগ সরকারের উপর প্রচন্ড ক্ষুব্ধ হয় আমেরিকা। আর ইসলাম ধর্মকে ব্যবহার করে কুকুরের মাথায় ‘টুপি’ পড়িয়ে ছবি তুলে সারাদেশে ছড়িয়ে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে জনগণকে খেপিয়ে তুলে স্বাধীনতা বিরোধী চক্র। অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দেশীয় দালাল গোষ্ঠী সুশীল সমাজের ছদ্মবেশে আওয়ামী লীগ বিরোধী তৎপরতায় সর্বোচ্চ শক্তি নিয়োগ করে। সহজ সরল জনগণকে বোকা বানিয়ে তাদের ভোটাধিকারকে চুরি করে ক্ষমতায় আনা হয় বিএনপি-জামায়াত জোটকে। তার পরবর্তী ঘটনাবলী কোনো সচেতন নাগরিকের ভুলে যাওয়ার বলা নয়। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষগুলোকে হত্যা করতে থাকে স্বাধীনধা বিরোধী শক্তি। দলীয় পরিসংখ্যানে দেখা যায়, প্রায় ২১ হাজার আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীকে হত্যা করেছিল বিএনপি-জামায়াত জোটের সন্ত্রাসীরা। অর্থনীতিবিদ এস এ এম এস কিবরিয়া, আহসান উল্লাহ মাস্টারসহ বহু মেধাবী সন্তানকে হারায় বাংলাদেশ। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় শক্তিশালী হয়ে ওঠে কয়েকটি উগ্রবাদী সন্ত্রাসী সংগঠন। বাংলা ভাই, শায়খ আব্দুর রহমান, মুফতি হান্নানের মত ভয়ঙ্কর সব জঙ্গী দেশজুড়ে ভয়ঙ্কর তান্ডব চালায়। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ভয়াবহতা বাংলাদেশ কখনো ভুলবে না। শেখ হাসিনা আল্লাহর রহমতে প্রাণে বেঁচে গেলেও নিহত হয় ২৪ জন নেতা-কর্মী। হত্যাকান্ড, ধর্ষন, অগ্নিসংযোগের সহ অপরাধের তালিকা এত দীর্ঘ যে বড় বড় বই আকারে প্রকাশ করলেই হয়তো ঐ অন্ধকার যুগের কালো ইতিহাস লেখা সম্ভব হবে।

বিএনপি-জামায়াত জোটের অপশাসন শেষে বাংলাদেশ ২ বছর শাসিত হয় সামরিক বাহিনী সমর্থিত অগণতান্ত্রিক তত্ত্বাবধায়ক সরকার দ্বারা। পরে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে তৈরি হওয়া জনমতের চাপে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বেধীন মহাজোট নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। ২০০১-২০০৮Ñ ৭ বছরের অনুন্নয়ন, পশ্চাদপদতা, বিশৃঙ্খলা, গণতন্ত্রহীনতা, সহিংসতা, ভয়, আতঙ্ককে পেছনে ফেলে বাংলাদেশ যখন সমৃদ্ধি অর্জনের পথে পা বাড়িয়েছে, তখনই রাষ্ট্রবিরোধী শক্তি ইতিহাসের অন্যতম মর্মান্তিক হত্যাকান্ড ঘটায়। এবার তারা বেছে নেয় জন্মভূমির অতন্দ্র প্রহরী বাংলাদেশ রাইফেলস্ (বিডিআর)এর সদরদপ্তর পিলখানাকে। ২০০৯ সালের ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখালাকে মৃত্যুপুরীতে পরিণত করে অশুভ ঐ শক্তি। পথ হারানো বিডিআর জওয়ানরা তাদেরই কর্মকর্তা ও সহকর্মীসহ মোট ৭৪ জনকে নির্মমভাবে হত্যা করে। নজিরবিহীন সাহস প্রজ্ঞা আর দূরদর্শিতা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেদিন জাতিকে চরম সঙ্কট থেকে রক্ষা করেছিলেন। গত প্রায় পাঁচ বছরে বিএনপি-জামায়াত জোট সংসদে গিয়েছে শুধুমাত্র নিজেদের সদস্যপদ রক্ষা করার জন্য। গণস্বার্থ-বিরোধী সংবাদ মাধ্যমগুলোও আওয়ামী লীগকে বস্তুনিষ্ঠতার সাথে মূল্যায়ন করেনি। সুশীল সমাজের সদস্য হিসেবে পরিচিত শিক্ষিত দালাল গোষ্ঠী সরকারের নেতিবাচকতায় এত বেশি মুখর ছিল যে, জামায়াত-শিবির ও বিএনপি তাদের ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের পথে নিঃসঙ্গ বোধ করেনি। শত ষড়যন্ত্রের মোকাবিলা করেও অশুভ শক্তি বাংলাদেশের সুষম ও টেকসই অর্থনীতিক উন্নয়নকে থামিয়ে রাখতে পারেনি। দারিদ্র্য বিমোচন, শিক্ষার হার, শিশু ও মাতৃমৃত্যু হ্রাস, ব্যাংক রিজার্ভ, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, সুশাসন, নারীর ক্ষমতায়ন, শান্তিপূর্ণ ধর্মচর্চাসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ অভূতপূর্ব সাফল্য এনে দিয়েছে হাজার হাজার কিলোমিটার পাকা রাস্তা নির্মিত হয়েছে দেশজুড়ে। মেট্রোপলিটন সিটিগুলোতে শত শত সরকারি বাস নেমেছে, রেললাইন বেড়েছে, লোকোমোটিভ সংখ্যা বেড়েছে উল্লেখযোগ্য সংখ্যায়, মানুষের আয় বেড়েছে, বিশ্ব যখন অর্থনৈতিক মন্দায় চোখে সর্ষে ফুল দেখছে, তখন বাংলাদেশের মানুষ খেয়ে পড়ে হেসে পরিবার-পরিজন নিয়ে শান্তির জীবন যাপন করেছে; ঢাকা শহরের বিশাল অংশ অত্যাধুনিক অবকাঠামোর নগরীতে রূপ নিয়েছে। মায়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা জয়ের সামরিক ও আইনী লড়াইয়ে বিজয়ী হয়েছে মূল ভূখন্ডের সমান জলভাগ অধিকার করেছে বাংলাদেশ। টানা পাঁচ বছর জানুয়ারির প্রথম দিনে কোটি কোটি পাঠ্যবই সরবরাহ করে শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে সরকার। বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা এখন দশ হাজার মেগাওয়াট। সাফল্যের কথা এত কম লেখায় বলে শেষ করা সম্ভব না। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে উচ্চ আদালত অগণতান্ত্রিক বলে বাতিল সাব্যস্ত করলে সরকার সংবিধান সংশোধনের উদ্যোগ নেয়। সরকারি সহযোগিতায় নির্বাচন কমিশন প্রতিটি সিটি করপোরেশন নির্বাচন করলো এবং প্রায় সবকটিতেই জিতলো বিরোধী জোট! এত কিছুর পরও জামায়াত, বিএনপি, ছদ্মবেশী সুশীল সমাজ, শীর্ষস্থানীয় ২/১টি সংবাদপত্র যেমন দৈনিক প্রথম আলো, সা¤্রাজ্যবাদী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহচর সুদখোর ড. মুহাম্মদ ইউনুস সবাই এক দাবিতে যার যার স্টাইলে কাজ করে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ইস্যুতে দেশে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি করল। সর্বশেষ যখন উচ্চ আদালত জামায়াতে ইসলামীকে অবৈধ ঘোষণা করল এবং নির্বাচন কমিশন এদেরকে অযোগ্য ঘোষণা করল তখনই উপরোক্ত শক্তিগুলোর সম্মিলন প্রকটভাবে প্রকাশ পেল। সবাই বুদ্ধি দেয়, আর সেটা বাস্তবায়ন করে জামায়াত। একটাই টার্গেট আওয়ামী লীগকে ব্যর্থ প্রমাণ কর; তাহলে বাংলাদেশও ব্যর্থ হবে। তাহলে এই জামায়াতে ইসলামীকে চেনার প্রয়োজন আমার মনে হয় সবচেয়ে বেশি। কারণ প্রিয় ধর্ম ইসলামকে ব্যবহার করে এরা রাজনীতির নামে সন্ত্রাস করে; আবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জামায়াতকে মডারেট ইসলামিক পার্টি বলে, আদর-সোহাগ করে; বাংলাদেশের পুলিশকে পিটিয়ে মেরে জিহাদ ভেবে উল্লাস করে, কিন্তু ভুলে মার্কিন দূতাবাসের গাড়িতে ঢিল ছুঁড়ে ওয়েবসাইটে দুঃখ প্রকাশ করে; বিএনপি-জামায়াতের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের যে দাবি, প্রথম আলো পত্রিকাটির অবস্থান ও তার পক্ষে ড. ইউনুস ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে সোচ্চার তাহলে পরিষ্কার হল জামায়াত হল এই গণবিরোধী শক্তির সবচেয়ে বড় অস্ত্র। ইসলাম ধর্মের ছদ্মবেশে জামায়াত-শিবিরের প্রকৃত পরিচয়ের সন্ধানে আমাদেরকে নামতে হবে ইতিহাসের মোটামুটি গভীরে। আমি এক্ষেত্রে সহয়তা নিয়েছি বাংলাদেশের প্রখ্যাত সাংবাদিক মরহুম শহীদুল হক সাহেবের সুযোগ্য পুত্র, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)’র বিশেষ সংবাদদাতা শাহরিয়ার শহীদ রচিত ‘ইসলামে বিভ্রান্তি ও বৃটিশ গোয়েন্দার স্বীকারোক্তি’ শীর্ষক গ্রন্থের। বিলম্ব না করে এই সুফী সাংবাদিকের গ্রন্থ (দ্বিতীয় অধ্যায়ে) থেকে উদ্ধৃত করছি: ‘হ্যামফায়ার একজন বৃটিশ গোয়েন্দা। ইসলামকে ধ্বংসের জন্য অষ্টাদশ শতাব্দীর শুরুতে বৃটিশ সরকারের নীল নকশা বাস্তবায়নের অন্যতম রূপকার হ্যামফায়ার। তিনি ১৭১০ সাল থেকে মিসর, ইরাক, ইরান, হিজায ও ইস্তামবুলে মিশনারির ছদ্মবেশে গোয়েন্দাগিরির মিশনে নিয়োজিত ছিলেন। হ্যামফায়ার ১৭১৩ সালে বসরার নজদে মুহাম্মদ বিন আবদ উল ওয়াহাব নজদি নামে একজন মুসলমান বিপথগামীকে হাত করে তাকে দিয়ে ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে একটি নতুন মতবাদ প্রতিষ্ঠা করেন, সমসাময়িক ইতিহাসে তথাকথিত ‘ওয়াহাবি আন্দোলন’ নামে পরিচিত।

ওয়াহাবি আন্দোলন সংগঠনে হ্যামফায়ার একজন মুসলমানের ছদ্মবেশ ধারণ করে তৎকালীন অটোমান সা¤্রাজ্যের অন্তর্গত বিভিন্ন মুসলিম দেশের মনীষীদের সংস্পর্শে আসেন এবং ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে ব্যাপক ব্যুৎপত্তি অর্জন করেন। তার স্বোপার্জিত জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে অনিষ্ট সাধনের অপপ্রায়াস চালান। তার মিশনের কার্যকালে তিনি যেসব ঘটনার সাথে জড়িত ছিলেন বা যা প্রত্যক্ষ করেন তার আনুপূর্বিক বিবরণ লিখে রাখেন ডায়রিতে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সর্বপ্রথম জার্মানির সংবাদপত্র ইসপিগল এতার ডায়রি-ও বিস্তারিত বিবরণ ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়। হ্যামফায়ার -এর ডায়রি ঈড়হভবংংরড়হং ড়ভ ধ ইৎরঃরংয ংঢ়ু-এর ইংরেজি সংস্করণটি ঐওতগঊঞ ইঙঙকঝ-এর ওয়েবসাইট থেকে সংগৃহীত। ঐওতগঊঞ ইঙঙকঝ-এর ওয়েবসাইট এর ঠিকানা :যঃঃ://িি.িযরুসবঃনড়ড়শং.ড়ৎম,

১১২৫ হিজরি মোতাবেক ১৭১৩ খ্রিস্টাব্দে হ্যামফায়ার ওয়াহাবি মতবাদের প্রতিষ্ঠা করেন। ১১৫০ হিজরিতে তারা মতবাদ সম্পর্কে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা প্রদান করেন। হ্যামফায়ার তার ডায়ারিতে বলছেন: ‘মুসলমানদের মধ্যে ভাঙ্গন ধরানোর জন্য উপনিবেশসমূহের তথ্য সংগ্রহের জন্য আমাকে গোয়েন্দা হিসেবে হিজরি ১১২২ মোতাবেক ১৭১০ খ্রিস্টাব্দে মিসর, ইরাক, হিজায ও ইস্তাম্বুলে প্রেরণ করেন। মন্ত্রণালয় একই মিশনে কাজ করার জন্য একই সময়ে আরো ৯ জন লোককে নিয়োগ করে। ... আমি ইসলামী খেলাফতের কেন্দ্রবিন্দু ইস্তাম্বুলের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম... একটি অত্যন্ত ক্লান্তিকর ভ্রমণের পর আমি ইস্তাম্বুলে পৌছালাম। আমি আমার নাম মুহাম্মদ বললাম এবং মসজিদে যাতায়াত শুরু করলাম।’

তিন বছরের দীর্ঘ সময়ে তুরস্ক, ইরাক, মিশর, হিজায ভ্রমণ করে, অবস্থান করে অবশেষে ১৭১৩ সালে সবরার নজদে মুহাম্মদ বিন আবদ উল ওয়াহাব নজদি নামের ভন্ড মুসলমানকে দিয়ে ওয়াহাবী মতবাদ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয় হ্যাম্পফায়ার। ব্রিটিশ সরকার নজদে মোহাম্মদের বিষয়ে নি¤েœাক্ত কর্মসূচি প্রণয়ন করে :
১. সে সকল মুসলমানকে অবিশ্বাসী হিসেবে ঘোষণা করে বলবে যে, তাদের হত্যা করা হালাল, তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত; সংশোধনের জন্য শাস্তি, তাদের লোকজনকে দাস ও মহিলাদের উপপতœীতে পরিণত এবং বাজারে দাস হিসেবে বিক্রি করা যাবে।
২. সে কাবাকে দেবমূর্তি হিসেবে বর্ণনা করবে এবং তারপর এটা ধ্বংস করা হবে। হজ্বের মতো ধর্মীয় আচারকে বাতিল করার জন্য সে উপজাতিদের দ্বারা হাজীদের দলকে ঘেরাও করে তাদের হত্যা করতে বলবে।
৩. সে খলিফাকে অমান্যের জন্য মুসলমানদের নির্দেশ দেবে। সে খলিফার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণার জন্য উস্কানি দেবে। সে লক্ষ্য সাধনে সে সেনাবাহিনী গঠনের প্রস্তুতি নেবে। সে হেজাযের উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিদের যুদ্ধ করার সুযোগ সকল সুযোগ কাজে লাগাবে।
৪. সে অভিযোগ উত্থাপন করবে যে, মুসলমান দেশসমূহে সমাধি ক্ষেত্র, গম্বুজ এবং পবিত্র স্থানসমূহ হচ্ছে দেবমূর্তি এবং বহু দেব দেবীর প্রতীক এবং এগুলো ধ্বংস করতে হবে। সে হযরত মোহাম্মদ (সাঃ), তাঁর খলিফাবৃন্দ ও মাজহাবের প্রখ্যাত মনীষীদের প্রতি অসম্মান প্রদর্শন করবে।
৫. মুসলিম দেশসমূহে সে বিদ্রোহ, নিপীড়ন ও স্বেচ্ছাচারিতার উস্কানি দেবে।
৬. সে একটি মেকী রচনা সম্বলিত কোরআন এর কপি তৈরি করবে এবং হাদিসের ক্ষেত্রে ও তাই করবে।
এভাবে প্রকৃত ইসলামকে ধ্বংস করার জন্য পশ্চিমা বৃটিশ শক্তি গোয়েন্দা হ্যামফায়ারকে কাজে লাগিয়ে ওয়াহাবি মতবাদ সৃষ্টি করেছিল। ওয়াহাবি মতবাদ মুসলমানদের মধ্যে হানাহানি, বিদ্বেষ সৃষ্টি করতে সক্ষম হলেও কালের বিচারে ইসলামকে বৃহৎ ভাবে বিকৃত করতে সক্ষম হয়নি। আল্লাহতায়ালা সূরা ইউসুফের ১১ ও ৬৩তম এবং হিজর সূরার ৯ম আয়াতে ঘোষণা করেছেন, ‘আমি স্বয়ং মানব জাতির উপর এই কোরআন নাজিল করেছি এবং প্রকৃতই আমি এর রক্ষাকারী।’

ইংরেজরা যেখানে যেখানে উপনিবেশ স্থাপন করেছে, সেখানেই হ্যামফায়ারদের মত লোকদের নিয়োগ দিয়েছে এবং প্রতিষ্ঠিত মানব প্রেম ও স্বচ্ছতার ইসলামকে ধ্বংস করতে ইসলামের নামে বিপথগামী মুসলমান পন্ডিত ব্যক্তিদেরকে দিয়ে নতুন নতুন মতবাদ সৃষ্টি করেছে। তেমনিই আরেকটি মতবাদ হল মওদুদীবাদ।

ব্রিটিশরা নজদে মোহাম্মদের ওয়াহাবি মতবাদ দিয়ে ইসলাম ধর্মে বিকৃতি এনে ইরাক, মিশর, তুরস্ক, তথা মধ্যপ্রাচ্যে অর্থাৎ ইসলামী সভ্যতার কেন্দ্রে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। তার পরবর্তী ফলাফল আমরা সবাই বিভিন্ন সময়ে নানা মাত্রায় দেখেছি, দেখছি। আর উপমহাদেশে হিন্দু মুসলমানদের একতাবদ্ধতায় ভীত হয়ে বৃটিশরা বিভ্রান্তি আর কলহ সৃষ্টির জন্য তৈরি করে আবুল আলা মওদুদীকে। প্রাতিষ্ঠানিক পড়ালেখায় অগ্রগামী, কুটবুদ্ধি সম্পন্ন মওদুদী ১৯৪১ সালে প্রতিষ্ঠিত করেন জামায়াতে ইসলামী নামের দলটি। মওদুদীর জীবনের কিছু কথা ইসলাম ও দেশপ্রেমিক জনতাকে জানাতে চাই। পাঠক নিজেই অনুধাবন করতে সক্ষম হবেন, জামায়াত কীভাবে ইসলামের নামে ইসলামকে ধ্বংস করে। আর উদ্দেশ্য পূরণে সহযোগিতা করে পশ্চিমা সা¤্রাজ্যবাদী শক্তিকে। ১৯০৩ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর ভারতের তৎকালীন হায়দারাবাদ অঞ্চলের আত্তরঙ্গবাদে জন্ম হয় আবুল আলা মওদুদীর। ফোরকানিয়া মাদ্রাসা থেকে মওদুদী মাধ্যমিক পাশ করে ভর্তি হন হায়দারাবাদ শহরের দারুল উলুম মাদ্রাসায়। ধর্ম, সমাজবিজ্ঞান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, রসায়ন, পদার্থ বিদ্যাসহ নানা ক্ষেত্রে জ্ঞানের অধিকারী মওদুদী প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা শেষে সাংবাদিকতায় যোগ দেন। তিনি মদিনা বাজনোর, তাজ যাবালপুর এবং জমিয়াত উলামা হিন্দের আল-জমিয়াত, ইত্যাদি পত্রিকায় কাজ করেন। ঐ সময়কার একটি ঘটনা অত্যন্ত তাৎপর্য্যপূর্ণ। শহীদে কারবালা হযতে হোসাইন (রাঃ) এর বংশধর, শায়খুল ইসলাম মাওলানা সৈয়দ আহমদ মাদানী (১৮৭৮-১৯৫৭) জমিয়তে ওলামায়ে হিন্দে যোগ দিয়ে অখন্ড ভারতের পূর্ণ স্বাধীনতা সংগ্রামের আন্দোলনে এক বিশিষ্ট ভূমিকা পালন করছিলেন। ১৯২৯ সালে কলকাতার সম্মেলনে জমিয়তে ওলামা পরিষ্কার ঘোষণা করে, দেশকে পূর্ণ স্বাধীন ঘোষণা করার পূর্ব পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। জাতীয় কংগ্রেসকে দেশাত্মবোধের এ পর্যায়ে পৌঁছতে আরও ছয় বছর বিলম্ব করতে হয়েছে। (ভারতের মুসলমান ও স্বাধীনতা আন্দোলন, ড. মুহাম্মদ ইনাম-উল-হক, বাংলা একাডেমী, ঢাকা, ১৯৯৪)। মাওলানা মাদানী ‘রিসালা-এ মুত্তাহাদা কাওমিয়্যাহ’ নামে একটি বই লিখেছিলেন। বইতে তিনি অখন্ড ভারতের স্বাধীনতা চেয়ে চলমান আন্দোলনের পেছনে ইসলামী দর্শন ব্যাখ্যা করে বিস্তারিত আলোচনা করেন। তাঁর আলোচনার সারমর্ম হলো :
‘মহানবী (সাঃ) মদীনায় পৌছে যে সম্মিলিত জাতি গঠন করেছিলেন আমরা সম্মিলিত জাতি বলে সে কাঠামোকেই বুঝাতে চেষ্টা করেছি। আমাদের ইচ্ছা হলো, ভারতবর্ষের অধিবাসীগণ যে যেই ধর্মের অনুসারী হোক না কেন সকলেই ভারতীয় নাগরিক হিসাবে এবং একই স্থানে বসবাসকারী হিসেবে এক ও অভিন্ন হয়ে নিজেদের সম্মিলিত শক্তি প্রয়োগ করে বিদেশী উপনিবেশকারীদেরকে এদেশ থেকে উৎখাত করে নিজেরা যেন নিজেদের আত্মনিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠিত করবে। কাজেই কোনো সম্প্রদায় অন্য সম্প্রদায়ের ধর্মীয় বিষয়ে কোনোরুপ আঘাত করতে পারবেনা। বরং ভারতবর্ষে বসবাসকারী সকল সম্প্রদায় নিজ নিজ আক্বিদা ও বিশ্বাস, ধর্মীয় উপাসনা ও কাজ কর্মের ক্ষেত্রে স্বধীন থাকবে। প্রত্যেকেই স্বাধীনভাবে নিজ ধর্মীয় কাজ কর্ম উৎসব অনুষ্ঠান চালিয়ে যাবে এবং যথাসম্ভব দেশে শান্তি ও নিরাপত্তা সংরক্ষণের ব্যবস্থা নিবে। সকলেই ধর্মীয় সম্প্রচার অধিকার ভোগ করবে। নিজেদের পার্সোনাল সংস্কৃতি ও সভ্যতার যথা সংরক্ষণ করে যাবে, যেন কোনো সংখ্যালঘুকে অন্য সংখ্যালঘুর হাতে কিংবা সংখ্যাগরিষ্ঠের হাতে নিগৃহীত হতে না হয়। কংগ্রেসে সব সময় এ নীতিই গ্রহণ করে আসছে।” প্রথম দিকে জমিয়তে ওলামায়ে হিন্দ ও পরবর্তীতে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস’র কর্ম তৎপরতায় জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে ভারতীয় উপমহাদেশের প্রগতিশীল মানুষ যখন সবার জন্য একটি স্বাধীন রাষ্ট্র কায়েমের স্বপ্নে ক্রমশ অনুপ্রেরণা অর্জন করছে তখন ব্রিটিশ শাসকদের অপকৌশলে সাম্প্রদায়িকতার বিষবৃক্ষও বড় হতে থাকে। ফলশ্রতিতে আমরা ১৯৪৭-এ দেখি ধর্মের নামে উপমহাদেশকে ভারত ও পাকিস্তান এ দু’রাষেট্রর ভাগ করা হয়। সামপ্রদায়িকতার দানবকে বড় করে তোলার কাজে ব্রিটিশ শাসকদের হয়ে যে সমস্ত জ্ঞানপাপী কাজ করেছিলেন তাদের অন্যতম ছিলেন, আবুল আলা মওদুদী। অখন্ড ভারতের স্বাধীনতার আন্দোলনে জমিয়তে উলামা-ই-হিন্দ ১৯২৫ সালে কংগ্রেসের সাথে মিলে এলায়েনস গড়ে তুললে এর প্রতিবাদে মওদুদী ১৯২৫ সালে আল-জমিয়াত প্রত্রিকার পদ থেকে পদত্যাগ করেন। হিন্দু ও মসুলমানের জন্য এক দেশ হতে পারেনা বলে মওদুদী মানুষকে বোঝাতেন। ইংরেজদের আশীর্বাদপুষ্ট মওদুদী সচেতনভাবে সাম্প্রদায়িকতা ছড়াতেন যা ছিল হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর ঐতিহাসিক ‘মদিনা সনদ’র সম্পূর্ণ পরিপন্থি। ঐ সনদে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) শান্তিপূর্ণ ও সকল ধর্মের মানুষের সমান অধিকার ও মর্যাদার জাতি গঠনে ৪৭টি শর্ত দিয়েছিলেন।
প্রধান দুটি শর্ত হল :
১. সনদে স্বাক্ষরকারী মুসলমান, ইহুদি, খৃষ্টান এবং পৌত্তলিক সম্প্রদায় সমূহ সমান অধিকার ভেগে করবে এবং একটি সাধারণ জাতি গঠন করবে।
২. মুসলমান এবং অমসুলমান বিভিন্ন সম্প্রদায় স্বাধীনভাবে নিজ নিজ ধর্ম পালন করবে। কেউ কারও ধর্মীয় ব্যপারে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না।

এতটাই আধুনিক, প্রগতিশীল, উদার ও মহানুভবতার ধর্ম ইসলাম। কিন্তু সা¤্রাজ্যবাদী গোষ্ঠীর ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের জন্য সৃষ্ট জামায়াত ইসলামের মত ছদ্মবেশী, অশুভ শক্তির তৎপরতায় ইসলামকে কলংকিত করা হচ্ছে। মওদুদী এবং জামায়াত ইসলামকে নিয়ে পন্ডিত ব্যক্তিরা বিভিন্ন সময়ে মসুলমানদেরকে সতর্ক করে গেছেন। জামাতে ইসলাম’র ব্যানারে মওদুদী’র ইসলামবিরোধী তৎপরতা ও পশ্চিমা সা¤্রাজ্যবাদী শক্তির সাথে যোগসাজশ শুরু থেকে ইসলামী চিন্তাবিদ ও ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ১৯৫১ সালের আগস্ট ১ তারিখে ভারতবর্ষের ওলামা-মাশায়েখরা দিল্লিতে এক সম্মেলনে মিলিত হন। দীর্ঘ আলোচনার পর তারা একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, মওদুদী, জামায়াত ইসলামী ও প্রকৃত ইসলামকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করার অশুভ তৎপরতা সম্পর্কে সতর্ক ও সচেতন করতে হবে। প্রায় একই সময়ে পাকিস্তানে ইসলামী চিন্তাবিদরা সম্মিলিত ভাবে বলেন, মওদুদী নিজে একজন বিভ্রান্ত মনুষ এবং অন্যদেরকেও বিভ্রান্ত করতে চায়। দেওবন্দী ইসলামী চিন্তাবিদরা সব সময়ই মওদুদী বিষয়ে আওয়ামকে সর্তক করেছেন। প্রখ্যাত আল্লামাহ্ ইউসুফ লুধিয়ান্বি এক্ষেত্রে স্মরণযোগ্য। তিনি তার বহু লেখা ও বক্তৃতায় প্রমাণ করেছেন কীভাবে মওদুদী নবী-রাসুল এবং সাহাবাদের প্রতি অবজ্ঞা ও অশ্রদ্ধা প্রদর্শন করেছেন। শায়খ সাফি-উর-হেমান মোবারকপুরী, রহিমাহুল্লাহ্, শায়খ হামাদ-আল-আনসারি ও সানাউল্লাহ্ অমৃতসরি সাহেবদের মত পন্ডিত ব্যক্তিরা ওদের জীবনভর মওদুদী’র ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপের সমালোচনা করেছেন, তরুণ সমাজকে সচেতন হয়ে চলার উপদেশ দিয়েছেন। মওদুদীকে ইসলামী চিন্তাবিদ ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা ‘সিআইএ’র এজেন্ট হিসেবেও বর্ণনা করেছেন। সম্মিলিত ওলামা-মাশায়েখ পরিষদ, বাংলাদেশ তাদের বিভিন্ন প্রকাশনায় জামাত-শিবির কে ইহুদি এবং খ্রিস্টান অপশক্তির দোসর আখ্যায়িত করেছেন। মানবতার শত্রু জামায়াত ইসলাম বৃটিশ আমলে যেমন সাম্প্রদায়িকতা সৃষ্টি করে বিদেশী শোষকদের পক্ষে কাজ করেছে, তেমনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে মুক্তিকামী মানুষের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে নজিরবিহীন হত্যাকান্ড, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, লুটতরাজসহ নানাবিধ মানবতাবিরোধী অপরাধে লিপ্ত হয়। ৩০ লাখ মানুষকে দেশকে ভালোবাসার অপরাধে হত্যা করা হয়, ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রম হরণ করা হয়। এ ভয়াল পাশবিকতায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে সর্বতোভাবে সাহায্য করেছে, প্রত্যক্ষভাবে অপরাধ করেছে জামায়াত ইসলাম। ২০০৮ এর ২৯ ডিসেম্বর বাংলাদেশ আওয়ামি লীগ’র নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর বহুল আকাক্সিক্ষত আন্তর্জাািতক ট্রাইবুনালের মাধ্যমে ৭১’র মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়। বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতার সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার অটল নেতৃত্বে মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচার যজ্ঞ এগিয়ে চলেছে। জামায়াত নেতা, ৭১’এ কসাই কাদের নামে পরিচিত কাদের মোল্লা’র ফাঁসি কার্যকর হতে দেখেছে জাতি। ১৯৭১ এ পাকিস্তান জান্তার পাশে দাঁড়িয়ে সমস্ত গণহত্যাকে বৈধতা দিয়ে গেছে তৎকালীন মার্কিন সরকার। সোভিয়েত ইউনিয়ন আমাদের পাশে না দাঁড়ালে বিজয় আরও প্রলম্বিত হতে পারত। ১৯৭৫ এ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব’কে সপরিবারে হত্যা করার আগে ও পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা সম্পর্কে জানি। ৯৬-২০০১ মেয়াদে অভূতপূর্ব জাতীয় উন্নয়ন সাধন করার পরও বিএনপি-জামায়াত জোট ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ষড়যন্ত্রে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণের ভোট পেয়েও পরাজয় বরণ করতে হয় আওয়ামিলীগকে। গ্যাস বিক্রি করতে রাজি না হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র চরম নাখোশ হয় শেখ হাসিনার উপর। অন্যদিকে দীর্ঘ একুশ বছর পর ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামীলীগের সরকার গঠনের বিষয়টি জামায়াতকে ভাবিয়ে তোলে। এই ইসলামবিরোধী শক্তি পশ্চিমা প্রভুদের আশীর্বাদ নিয়ে নানাবিধ ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নে তৎপর হয়। সরকারে জামায়াত সরাসরি অংশগ্রহণ করে গোপনে বিভিন্ন সশস্ত্র জঙ্গী গঠন করে। দেশব্যাপী নাশকতা চালাতে থাকে জামায়াত ও তার ছাত্রসংগঠন শিবির। শিবিরের রাজনীতির সাথে একসময় সম্পৃক্ত শায়খ আব্দুর রহমান, সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলা ভাই এবং মুফতি হান্নান’র মত বিভ্রান্ত, সন্ত্রাসী লোকজনকে দিয়ে বিভিন্ন সশস্ত্র বাহিনী গঠন করে। গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়ায় সমাবেশস্থলে ৭০ কেজি ওজনের বোমা পুঁতে রেখে শেখ হাসিনাকে হত্যা চেষ্টা করে জামায়াতের জঙ্গীরা। রমনার বটমুলে নববর্ষের অনুষ্ঠানে, সিনেমা হলে, মাজার-দরগাহ-গির্জায় বোমা হামলা চালিয়ে, ঘরে ঢুকে জবাই করে দেশপ্রেমিক, প্রগতিশীল মানুষদের হত্যা করে জামায়াত-শিবিরের জঙ্গিরা।কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী দেশজুড়ে তাফসির মাহ্ফিলের নামে মওদুদীবাদ প্রচার করতে থাকে। মদীনা সনদে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) স্বয়ং ঘোষণা করেছিলেন- ‘‘মুসলমান ও অমুসলমান বিভিন্ন সম্প্রদায় স্বাধীনভাবে নিজ নিজ ধর্ম পালন করবে। কেউ কারও ধর্মীয় ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না।” যুদ্ধপরাধী সাঈদী ইসলামের শান্তিময় রুপকে বিকৃত করতে ধর্ম নিরপেক্ষতাকে ‘কুফরি মতবাদ” আখ্যা দিয়ে ধর্মপ্রাণ মহানুভব মুসলমানদেরকে বিপথে নিয়ে যাওয়ার অপপ্রয়াস চালাতে থাকে। সাঈদীর ওয়াজ মাহ্ফিলে বিভ্রান্ত হয়ে শায়খ আব্দুর রহমানের পরিচালিত জেএমবি নামের জঙ্গি দলে সম্পৃক্ত হয়ে কথিত জেহাদি কার্যক্রমে অংশ নেয় বলে পরবর্তীকালে কেউ কেউ স্বীকারোক্তি দিয়েছে। আগেই বলেছি, ৯৬-২০০১ মেয়াদে অভূতপূর্ব উন্নয়ন করেও জামায়াত বিএনপি’র ধর্মাশ্রিত ষড়যন্ত্রের সাথে পেরে উঠেনি। ২০০১ সালের নির্বাচনে অপ্রত্যাশিতভাবে পরাজয় মেনে নিতে হয় আওয়ামীলীগকে। ক্ষমতায় এসে লাগামহীন সন্ত্রাস আর দুর্নীতিতে নিমজ্জিত হয় বিএনপি-জামায়াত জোট। সরকারের প্রত্যক্ষ মদদে মহান মানবতার ধর্ম ইসলামকে বদনাম করতে জঙ্গি তৎপরতা পুরোদমে শুরু করে ধর্মের লেবাসধারী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো। জামাতুল মোজাহেদীন বাংলাদেশ (জেএমবি), হরকাতুল জিহাদ, হিযবুত তাহরির ইত্যাদি নানা নামে জঙ্গী গোষ্ঠীগুলো নিজেদেরকে সংগঠিত করে। কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী জামায়াতের আমীর মতিউর রহামান নিজামী ও সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহ্সান মোহাম্মদ মুজাহিদ যথাক্রমে শিল্প ও সমাজকল্যান মন্ত্রালয়ের মন্ত্রীত্ব প্রাপ্ত হয়। আগে থেকে প্রশাসনে ঘাপটি মেরে থাকা জামায়াত-শিবির’র লোকজন স্বরুপে আত্মপ্রকাশ করে। দেশব্যাপী প্রশাসনের দায়িত্ব নিয়ে নেয় এই অশুভ শক্তি। দেশজুড়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ শক্তির মানুষের উপর হামলা শুরু হয়। শুধু আওয়ামীলীগেরই ২১,০০০ নেতাকর্মীকে হত্যা করে বিএনপি-জামাত জোট। ২০০৪ সালোর ১৭ আগস্ট দেশের ৬৩টি জেলায় একযোগে বোমা হামলা করে সন্ত্রাসীরা। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকার রাজপথে যা ঘটে, তার নজির আর দ্বিতীয়টি নেয়। বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে ভাষন দিচ্ছিলেন তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনা। তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গ্রেনেড হামলা চালায়ে ইসলামের শত্রু বিভ্রান্ত জঙ্গিরা। এমন হামলা আগে দেখেনি নতুন প্রজন্মের নগরবাসীরা। আল্লাহ্র রহমতে শেখ হাসিনা প্রাণে বেঁচে গেলেও নির্মমভাবে নিহত হন ২৪ জন দেশপ্রেমিক। এদের মধ্যে ছিলেন নারীর সমঅধিকারের আন্দোলনের অগ্রসৈনিক, মরহুম রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভী রহমান। ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে তদন্তে বের হয়ে এসেছে তৎকালীন সরকারের উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টু’র নাম। বাংলাদেশ সারাবিশ্বে একটি জঙ্গি ও দুর্নীতিগ্রস্থ দেশ হিসেবে পরিচিত হয় বিএনপি-জামাত জোট আমলে। বিদ্যুৎ উৎপদান কমে যায়, শিক্ষার হার হ্রাস পায়, দেশের খাদ্য উৎপাদন ভয়ংকর ভাবে হ্রাস পায়। প্রায় ১.২৩ কোটি ভুয়া ভোটার ঢুকানো হয় জাতীয় ভোটার তালিকায়। ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে পরিণত করতে শেষপর্যন্ত তৎকালীন রাষ্ট্রপতিকে নজিরবিহীনভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান করা হয়। বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ’র নেতৃত্বে আপামর জনতার সুতীব্র আন্দোলনের মুখে বিএনপি-জামাত অশুভ শক্তির নীল নকশা বাস্তবায়িত হয়নি। কিন্তু যা ঘটে তাও বেশ গভীর রাজনৈতিক সংকটের সৃষ্টি করে। অভাবনীয় সব ঘটনা-দূর্ঘটনার মধ্য দিয়ে প্রায় দু’বছর ক্ষমতায় থাকে সামরিক বাহিনীর সমর্থনপুষ্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকার। দুর্নীতি বিরোধী নানা অভিযান, উদ্যেগে প্রথম দিকে বেশ চমক সৃষ্টি করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া তার দুই পুত্র মানি লন্ডারিংসহ নানা রকম দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেফতার হন। আওয়ামী লীগের বহু নেতাকে গ্রেফতার করা হয়। শুধুমাত্র রাজনৈতিক ভারসাম্য আনার জন্য আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকেও গ্রেফতার করে,যদিও তাকে গ্রেফতারের কোন যুক্তি দেখাতে পারেনি তৎকালীন সরকার। তাঁকে দীর্ঘদিন বন্দী করে রাখলেও তাঁর সততা ও ব্যক্তিত্বের কাছে নতি স্বীকার করে তৎকালীন প্রশাসন। গণতন্ত্রের বৃহৎ স্বার্থে খালেদা জিয়াকে সাথে নিয়েই মুক্ত হন শেখ হাসিনা। অনেক বিতর্কিত কাজের বদনাম থাকলেও ঐ তত্ত্বাবধায়ক সরকার একটি কাজের জন্য সর্ব সচেতন মহলের প্রশংসা অর্জন করে; প্রায় ১.২৩ কোটি ভুয়া ভোটার চিহ্নিত করে একটি নিখুত ভোটার তালিকা প্রণয়ন করতে সক্ষম হয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার; সে ভোটার তালিকার উপর ভিত্তি করে অনুষ্ঠিত ডিসেম্বর ২৯, ২০০৮ তারিখের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে বিজয়ী হয়ে গণতান্ত্রিক সরকার গঠন করে আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট। পাঁচ বছর পেরিয়ে নির্বাচনকালীন গণতান্ত্রিক সরকারের অধীনে ৫ জানুয়ারি ২০১৪ তারিখে অনুষ্ঠিত হয় দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। স্বাধীনতা বিরোধী, পশ্চিমা অশুভ শক্তির দোসর, ইসলামের শত্রু জামায়াতের খপ্পরে পড়ে দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি ঐ নির্বাচনে অংশ নেয়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বারবার বিরোধীদলকে অগণতান্ত্রিক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি থেকে সরে এসে নির্বাচিত সর্বদলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেয়ার অনুরোধ করেন। শেখ হাসিনা স্বয়ং খালেদা জিয়াকে টেলিফোন করেন। কিন্তু জামায়াতের ভূত খালেদা জিয়ার উপর এমনভাবেই ভর করে ছিল যে, তিনি শেখ হাসিনার সাথে নির্মম-কর্কশ ভাষায় কথা বলতে দ্বিধাবোধ করেননি। গণভবনে যাওয়ার দাওয়াত রক্ষা না করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে অটল থাকেন। যেকোনো দাবিত্ েঅটল থাকায় অধিকার রাজনৈতিক দলের আছে। দাবি আদায়ের জন্য পদ্ধতিগত, রাজনৈতিক আন্দোলন করা যেতে পারে। কিন্তু একটি স্বাধীন দেশে বিএনপি-জামায়াত জোট যে পদ্ধতি বেছে নেয় তাকে রাজনৈতিক আন্দোলন বলা যায়না কোনোমতেই । ¯্রফে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড। হরতাল-অবরোধ ডেকে চোরাগোপ্তা হামলা চালিয়ে পেট্রোল দিয়ে মানুষসহ গাড়ি পুড়িয়ে, জবাই করে মানুষ হত্যা করে বিএনপি-জামায়াত জোট তাদের দাবি আদায়ের অপপ্রয়াস চালায়। সামাজিক শান্তি, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, অগ্রসরমান অর্থনীতি, মহামূল্যবান বিশাল বিশাল রাষ্ট্রীয় অবকাঠামো ধ্বংস করার মরণ খেলায় মেতে উঠে বিএনপি-জামায়াত জোট। প্রথম দিকে সাধারণ মানুষ ভয়ে-আতঙ্কে রাস্তা-ঘাটে কম থাকলেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসে। আন্তঃজেলা সড়ক যোগাযোগও শেষের দিকে নিরাপত্তাবাহিনীর সহযোগিতায় শুরু হয়। তবে অর্থনৈতিক যে ক্ষতি বাংলাদেশের হয়েছে তা পূরণে কতদিন লাগবে তা কেউ বলতে পারছেনা। প্রশ্ন হলো বিএনপি’র মত একটি জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল নির্বাচনে আসল না কেন? সব দিক বিশ্লেষণ করে যে কারণটি পাওয়া যায় সেটি হল জামায়াত ইসলাম। জামায়াতকে যেহেতু আদালত ও নির্বাচন কমিশন অবৈধ ঘোষণা করেছে, সেহেতু এর পক্ষে নির্বাচনে অংশ নেয়া সম্ভব নয়। অন্যদিকে শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে ৭১’র মানবতাবিরোধী অপরাধী তথা জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের বিচার হচ্ছে, জামায়াত যদি অস্তিত্ব হারায় তাহলে ইসলামকে ধ্বংস করার বড় অস্ত্র হাতছাড়া হবে, বাংলাদেশে ইসলাম নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে না পারলে সুশাসনকে ধ্বংস করা যাবেনা, ইত্যাদি কারণে সমস্ত অপশক্তি একজোট হয়ে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দানকারী দল আওয়ামীলীগের বিরুদ্ধে সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে।

বিএনপি’র প্রতিষ্ঠতা, সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান ১৯৭১ সালে সেনাবাহিনীর মেজর থাকাকালীন চট্টগ্রামে আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দের অনুরোধে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান কর্তৃক ইস্যুকৃত স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রটি পাঠ করেছিলেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের মাধ্যমে। তিনি পরে মুক্তিযুদ্ধের একটি সেক্টরের দায়িত্বও পালন করেছিলেন। সে হিসেবে জিয়াউর রহমান সাহেব একজন মুক্তিযোদ্ধা। কিন্তু জিয়াউর রহমান কি প্রকৃত চেতনাকে ধারণ করেছিলেন? নাকি ‘বাই চান্স’ মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন? তরুণ প্রজন্মের এ প্রশ্ন দেখে বাংলাদেশের লাখ লাখ মানুষ হয়তো বিরক্ত হবেন; রাগান্বিতও হতে পারেন। কিন্তু ১৯৭৫ এবং ৭৫- পরবর্তী সময়ে জিয়াউর রহমান’র কর্মকান্ড বিশ্লেষণ করলে উপরের প্রশ্ন দুটো খুবই যৌক্তিক মনে হবে। ১৯৭৫’র ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে সপরিবারে হত্যার আগে হত্যাকারী বিভ্রান্ত সেনা কর্মকর্তারা জিয়াউর রহমানের সাথে সাক্ষাৎ করলে তিনি বলেছিলেন ‘গো এহেড’। এ সংক্রান্ত ভিডিও চিত্রটি ইয়োটিউবে সার্চ দিলেই পাওয়া যায়। ১৯৭৬ সনে জিয়াউর রহমান অস্ত্রের জোরে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করলে তার আসল চেহারা বের হয়ে আসে। ২০১৩ সালে এসে আমরা জামায়াতের যে রাষ্ট্রবিরোধী বিধ্বংসী রুপ দেখছি, তার মূল কারণ কিন্তু স্বাধীন বাংলাদেশে জিয়াউর রহমান। বিস্তারিত জানতে একটু পেছনে যেতে হবে।

১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১ সালে দীর্ঘ নয় মাস মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম হলে পাক বাহিনীর সহযোগী জামায়াতের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী গ্রেফতার হয় এবং রাজাকার ও আলবদর ক্যাডারদের একাংশ আত্মগোপনে চলে যায়। তারা ছদ্মবেশে ওয়াজ মাহ্ফিল, তাবলিগ জামায়াতের সাথে সম্পৃক্ত থেকে নিজেদের সংগঠিত করতে থাকে। এ সময়ে গোলাম আযম এবং বিভিন্ন দেশে নির্বাসিত জামায়াত নেতারা সংঘবদ্ধ ভাবে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি না দিতে মধ্যপ্রাচ্যসহ মুসলীম বিশ্বে প্রচার চালাতে থাকে। ১৯৭২-এর জানুয়ারিতে গোলাম আযম পাকিস্তানে অবস্থান করে ‘পূর্ব পাকিস্তান পুনরুদ্ধার সপ্তাহ’ পালন করে। বাংলাদেশ সরকার ১৯৭২ সালে গোলাম আযমের নাগরিকত্ব বাতিল করে। গোলাম আযম পাকিস্তান থেকে ১৯৭২ সালে হজ্ব করতে সৌদি আরবে যায় এবং ডিসেম্বরে রিয়াদে অনুষ্ঠিত ‘মুসলিম যুব সংস্থা’র আন্তর্জাতিক সম্মেলনে পূর্ব পাকিস্তান পুনঃপ্রতিষ্ঠার সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য সারা বিশ্বের মুসলমানদের আহ্বান জানায়। গোলাম আযম ১৯৭২ সালে সৌদি আরব, দুবাই, আবুধাবি, কুয়েত, বৈরুত, লিবিয়া হয়ে ১৯৭৩ সালের এপ্রিলে লন্ডন গমন করে এবং উল্লিখিত দেশসমূহে বাংলাদেশবিরোধী প্রচার চালায়। লন্ডনে বসে গোলাম আযম বাংলাদেশবিরোধী কার্যক্রম চালিয়ে যায়। এ সময় তার তত্ত্বাবাধানে জামায়াতের মুখপাত্র 'সংগ্রাম' পত্রিকা লন্ডন থেকে আত্মপ্রকাশ করে। অন্যদিকে ১৯৭২-এর পর থেকে বিভিন্ন সময় গোলাম আযম লন্ডন, মধ্যপ্রাচ্য ও পাকিস্তানে অবস্থান করে পূর্ব পাকিস্তান উদ্ধারের নামে বাংলাদেশবিরোধী তৎপরতায় নিয়োজিত থাকে। .......... ১৯৭৩ এর পর গোলাম আযম মোট সাতবার সৌদি বাদশাহ ফয়সালের সাথে সাক্ষাৎ করে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি না দেবার অনুরোধ করে। সে সময় থেকে সৌদি শাসকদের সাথে জামায়াতের একটি সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়। এভাবে জামায়াত দেশে, বিদেশে গোপনে, কৌশলে, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নিজেদের কার্যক্রম অব্যাহত রাখে। অন্যদিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে পুর্নগঠনের কাজ চালিয়ে যান। পাকিস্তান ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে গিয়ে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম দেয়া যেমন কঠিন ছিল, তার পুর্নগঠনের কাজও সহজ ছিলনা। পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে মোক্ষম সুযোগ খুঁজছিলো পরাজিত শক্তি। শেষপর্যন্ত ১৯৭৫ এর আগস্ট দেশ-বিদেশী ষড়যন্ত্রের শিকার হন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ক্ষমতায় আসে পাকিস্তানের প্রেতাত্মারা। স্বাধীন বাংলাদেশের ‘মীর জাফর’ খন্দকার মোশতাক ক্ষমতায় আরোহন করেন। খালেদ মোশাররফ চেষ্টা করেছিলেন স্বাধীনতার পক্ষের শক্তিকে ক্ষমতায় আবার আনার জন্য। জিয়াউর রহমানসহ বিভ্রান্ত অফিসারদের বন্দী করেছিলেন। কিন্তু সমাজতন্ত্রের মরীচিকায় ধোঁকা খেয়ে কর্ণেল তাহের পাল্টা ‘বিপ্লবে’ জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করে আনেন। জিয়াউর রহমান মুক্ত হয়ে কর্ণেল তাহেরসহ বহু সেনাকর্মকর্তাকে হত্যা করেন। ক্ষমতা দখল করেন জেনারেল জিয়াউর রহমান। ১৯৭৬ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান দালাল আইন বাতিল করেন এবং হাজার হাজার কারাবন্দী জামায়াত ও পাকিস্তান বাহিনীর দালালদের জেল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। ১৯৭৬ সালে রাজনৈতিক দল অধ্যাদেশ ঘোষিত হলে জামায়াতের নেতা ‘মওলানা’ রহিমের নেতৃত্বে জামায়াত ও কয়েকটি বিভ্রান্ত ‘ইসলামি’ দলের নেতারা একত্র হয়ে ‘ইসলামিক ডেমোক্রেটিক লীগ (আইডিএল) নামে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করে। নবগঠিত আইডিএল দলের ছত্রছায়ায় জামায়াতের ক্যাডাররা নিজেদের সংগঠন করতে থাকে। এ সময় লন্ডনে অবস্থানকারী গোলাম আযম ১৯৭৬, ১৯৭৭ ও ১৯৭৮ সালে তিন দফায় তার নাগরিকত্ব ফিরে পাওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের কাছে আবেদন করে। ১৯৭৮ সালের ১১ জুলাই গোলাম আযম পাকিস্তানি পার্সপোর্ট তিন মাসের ভিসা নিয়ে অসুস্থ মাকে দেখতে বাংলাদেশে আসে। তিন মাসের ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও গোলাম আযম বাংলাদেশে অবস্থান করে এবং দেশজুড়ে গোপন সফর কর্মসূচিতে দলকে সংগঠিত করতে থাকে। ১৫, ২৬ ও ২৭ মে ১৯৭৯ ঢাকায় তিন দিনের সম্মেলনে ‘জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ’ দলের আত্মপ্রকাশ ঘটে এবং গোলাম আযমকে গোপনে আমির নির্বাচিত করা হয় নাগরিকত্ত লাভ সাপেক্ষে। দলের ভারপ্রাপ্ত আমির নির্বাচিত হয় আব্বাস আলী খান।

ফেব্রুয়ারি ১৯৮০ থেকে জামায়াতে ইসলামী তৎকালীন জিয়া সরকারের মদদ ও পৃষ্ঠপোষকতায় দেশব্যাপী জোরালো তৎপরতার মাধ্যমে দৃঢ় সাংগঠনিক ভিত্তির উপর দাঁড় করাতে সক্ষম হয়। এ সময়ে জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে ‘গোলাম আযমের নাগরিকত্ব পুনর্বহাল কমিটি’ দেশব্যাপী ব্যাপক কার্যক্রম পরিচালনা করে। ৭ ডিসেম্বর ১৯৮০ জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির আব্বাস আলী খান বলে, ‘১৯৭১ সালে দেশ ও জাতির মঙ্গলের জন্য যা করেছি তা ঠিকই করেছি। ভারতীয় আগ্রাসন থেকে জনগণকে হেফাজত করার জন্য কাজ করেছি।’ তার এ ধরণের ঔদ্ধতপূর্ণ বক্তব্যের পর মুক্তিযোদ্ধা সংসদ দেশব্যাপী ‘রাজাকার প্রতিরোধ সপ্তাহ’ কর্মসূচি পালনকালে রংপুরে জামায়াতের সন্ত্রাসীরা মুক্তিযোদ্ধা অফিস আক্রমন করে। ২৯ মার্চ ১৯৮১ আব্বাস আলী খান সংবাদ সম্মেলনে আবারো বলে, ১৯৭১ সালে আমরা যা করেছি তা ঠিকই করেছি এবং ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের কনসেপ্ট সঠিক ছিলনা।’

জিয়াউর রহমান সাহেবের শাসনামলে জামায়াত যে শক্ত ভিত্তি পেয়েছিল তা আরো সুদৃঢ় হয় আরেক সামরিক শাসক, ১৯৮২ সালে ক্যু’র মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা জেনারেল হোসাইন মুহাম্মদ এরশাদ সাহেবের আমলে। নব্বই’র গণ অভ্যূত্থানের মাধ্যমে এরশাদের পতন হলে ‘গণতন্ত্র’র ভার সইতে পারেনি জাতি। ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ৮৪টি আসনে জামায়াত নিজেদের প্রার্থী না দিয়ে বিএনপিকে অকুন্ঠ সমর্থন দেয়। ১৩৮টি আসনে জয়ী হয় বিএনপি। জামায়াত সরকার গঠনে বিএনপিকে সমর্থন দিলে প্রতিদানে ২টি সংরক্ষিত আসনে সদস্যপদ পায়। বিএনপি ক্ষমতায় গিয়ে গোলাম আযমের নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দিয়ে পুরস্কৃত করে। জনগণ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে এবং ১৯৭১-এর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে দেশব্যাপী আন্দোলন তুঙ্গে উঠে। শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে ‘ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি গঠিত হয়। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা’র নেতৃত্বোধীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি’র সম্মিলিত প্রয়াসে গণ আদালতে’ ২৬ মার্চ ফাঁসির প্রতীকী রায় দেওয়া হয়। কিন্তু রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় জামায়াতের সাংগঠনিক কার্যক্রম ক্রমশ সংগঠিত হতে থাকে। ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার জন্য বিএনপি ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি একটি প্রহসনের নির্বাচন আয়োজন করে। চতুর জামায়াত জনমত টের পেয়ে নির্বাচন বিরোধী অবস্থান নেয়। এভাবেই জামায়াতের সময় সুযোগ বুঝে নিজেদেও ভোল পাল্টে টিকে থেকেছে।

জামায়াত ইসলামী কি এবং কিভাবে তারা বাংলাদেশে টিকে থাকল এর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস আমরা জানলাম। এখন জানব পৃথিবীর এমন একটি নেটওয়ার্ক বা দল সম্পর্কে যারা জামায়াতের মতই আরব বিশ্বে পশ্চিমা সা¤্রাজ্যবাদী শক্তির এজেন্ট হিসেবে কাজ করে। পাঠকের নিশ্চয়ই মনে আছে আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার যখন আন্তর্জাতিক মানের ট্রাইবুনাল গঠন করে ১৯৭১’র মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারকাজ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন তুরস্ক থেকে মুসলীম ব্রাদারহুড নামের সংগঠনটির একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফরে এসে জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের কে বিচারকার্য থেকে অব্যহতি দিতে অপপ্রয়াস চালিয়েছিল। মিশরের হোসনে মোবারক সরকারের যখন পতন হল, তখন বিশ্ববাসী নড়ে চড়ে বসল; পশ্চিমা শক্তির আশীর্বাদপুষ্ট সৈরশাসকের পতন হলে আমজনতার সামাজিক ও অর্থীনতিক মুক্তির আশায় সবাই অনুপ্রানিত হল। নির্বাচন হল। নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় বসল মুসলীম ব্রাদারহুড। মিশরের প্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হলেন মুহাম্মদ মুরসি। পশ্চিমা গণমাধ্যমসমূহে ফলাও করে প্রচার করা হল মিশরে ইসলামিক গণজাগরণ হয়েছে! ইসলামিক গণজাগরণ হয়েছিল নাকি জনতার স্বঃস্ফুর্ত সৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের পথ ধরে ক্ষমতায় এসেছিল ইহুদী নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা শক্তিরই কোনো দোসর? এর উত্তর আমরা খুঁজব খুবই সংক্ষিপ্ত পরিসরে। এ সংক্রান্ত প্রচুর গবেষণা করা দরকার। এখানে সবকিছু লেখার সুযোগ কম। মিশরের প্রখ্যাত পত্রিকা আল-বালাদ এ জুলাই ২২,২০১৩ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ আমরা করতে পারি। প্রতিবেদনে বলা হয় মুসলিম ব্রাদারহুড দীর্ঘদিন থেকে মিশরকে ভেঙ্গে দিতে ইসরাইলী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছিলো। মুহাম্মদ মুরসি কখনোই প্রতিবেশী ইসরায়েল কর্তৃক ফিলিস্তিনিদের উপর পরিচালিত জুলুমের বিরুদ্ধে সোচ্চার হননি। অধিকন্তু সিরিয়ার বাশার-আল-আসাদ সরকারের পতন উত্তরনে ফ্রি সিরিয়ান আর্মি’র প্রতি সমর্থন প্রদান করেন। মিশরীয় জনগণ ষঢ়যন্ত্র টের পেয়ে মুরসি বিরোধী গণআন্দোলন গড়ে তোলে। তাতে সমর্থন দিয়ে মরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করে সেনাবাহিনী। ক্ষতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে মুসলীম ব্রাদারহুড ফ্রি সিরিয়ান আর্মির আদলে ‘ফ্রি মিশরীয় আর্মি’ নামের বিচ্ছিন্নতাবাদী সামরিক বাহিনী গঠনের পরিকল্পনা করেছিল। ফ্রি সিরিয়ান আর্মি’র অর্থ ও অস্ত্রের উৎস অুসন্ধান করলে আমরা বাশার বিরোধী সশস্ত্র আন্দোলনের পেছনে ইসরায়েল ও তার পশ্চিমা দোসরদের হাত দেখতে পাব। রাশিয়া ও চীন বাধা না দিলে আমরা হয়ত আরেকটি মার্কিন আগ্রাসন প্রত্যক্ষ করতাম।

প্রিয় পাঠক, এত কিছু বলার একটাই উদ্দেশ্য জামায়াত ইসলামকে মানুষকে চেনানো। এরা ইসলামের ছদ্মবেশে ইসলামের শত্রু। মানবতার শত্রু। বাংলাদেশ যেখানে ৯০ শতাংশ মানুষ মুসলীম, সেখানে জামায়াত ইসলাম’কে সঠিকভাবে না চিনতে পারলে আমাদের সম্প্রীতি ও শান্তির বাংলাদেশ একদিন জঙ্গী ও সন্ত্রাসীদের দেশে পরিণত হবে। সন্ত্রাসবাদের স্লোগানে তুলে পশ্চিমা সা¤্রাজ্যবাদী শক্তি বাংলাদেশে ইরাক ও আফগানিস্থানের মত আগ্রাসন চালাবে। ভৌগলিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানের থাকা বাংলাদেশের প্রতি সা¤্রাজ্যবাদী শক্তির শ্যান দৃষ্টি বহুদিনের। আফগানিস্থানে তালেবান বাহিনীর সৃষ্টি করেছিল কারা? আল-কায়েদা বাহিনী’র প্রধান ওসামা বিন্ লাদেনের পরিবার যে মার্কিন বুশ পরিবারের ব্যবসায়িক পার্টনার ছিলো, সে খবর আমরা কজন রাখি? তাই সাবধান থাকতে হবে। আমাদের পবিত্র ধর্মীয় চেতনাকে কাজে লাগিয়ে ছদ্মবেশী জামায়াত যেনো আর কোনোদিন ক্ষমতায় না আসতে পারে সে জন্য সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। পরিশেষে বলতে চাই জামায়াত ইসলাম ও তাদের অপকর্ম নিয়ে প্রচুর গবেষণা কাজ হওয়া দরকার। পশ্চিমা সা¤্রাজ্যবাদী শক্তির সাথে জামায়াতের গাঁটবন্ধন গণমানুষের সামনে খোলাশা করতে হবে। যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে সমাজে প্রতিষ্ঠিত, তাদেরকে শতভাগ সততা নিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে হবে। সুদ-ঘুষ খাওয়া চলবেনা, টেন্ডারবাজি, তদ্বির বাণিজ্য, জায়গা-জমি দখল করা চলবেনা। সদা সর্বদা দেশ ও জাতির স্বার্থকে সবকিছুর উপরে স্থান দিতে হবে। বিদেশী কোনো দেশ বা শক্তির তাবেদার হয়ে কাজ করা যাবেনা। স্থানীয় স্বার্থ, চেতনা ও সেন্টিমেন্টকে গুরুত্ব দিয়ে সতর্ক ও সচেতন এবং বিচক্ষণ পররাষ্ট্রনীতির মাধ্যমে দেশকে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলায় পরিণত করতে হবে।


লেখক: শেখ আদনান ফাহাদপ্রভাষক, জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
www.dhakatimes24.com/2014/02/26/16137#sthash.ZY6zcBPL.dpuf