
ভাষা শহীদদের স্মরণে ফেব্রুয়ারিজুড়ে বাংলা একাডেমি আয়োজিত বইমেলা বাঙালি ভাষাভাষীদের জন্য বিশেষ করে বাংলাদেশের মানুষের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির বিকাশ একটি জ্ঞাননির্ভর জাতি গঠনে অপরিসীম ভূমিকা রাখে। কিন্তু এবারের গ্রন্থমেলায় প্রকাশনা সংস্থা 'রোদেলা' কর্তৃক নিষিদ্ধ ইরানি লেখক আলি দস্তি একটি গ্রন্থের বাংলা অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছে, যা বাঙালির সুস্থ জ্ঞানচর্চা, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, ধর্মীয় বিশ্বাস ও মূল্যবোধের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। 'নবি মুহাম্মদের ২৩ বছর' নামক গ্রন্থটি অশোভন উক্তি, ভ্রান্ত যুক্তি ও নানা ধরনের বিভ্রান্তিতে ভরা। ধর্মীয় অনুভূতি ও মূল্যবোধের প্রতি আঘাত হানার জন্য গ্রন্থটির অনুবাদক, প্রকাশককে আইনের আওতায় এনে বিচার করা উচিত বলে মনে করি।
ইসলাম একটি প্রত্যাদিষ্ট ধর্ম এবং হজরত মুহাম্মদ (সা.) একজন নবী ও রাসূল- এ সত্যটি বিশ্বের কোনো ধর্মতাত্তি্বক, ধর্ম দার্শনিক অস্বীকার করেননি। সেমেটিক ধর্মগুলোর মধ্যে সর্বশেষ ধর্ম ইসলাম এবং সবচেয়ে পরিপূর্ণ জীবনবিধান হিসেবে পবিত্র কোরআনের গুরুত্ব ও এর আধ্যাত্মিকতাকে কোনো অমুসলিম ধর্মতাত্তি্বকও সামান্য পরিমাণে অবজ্ঞা করেননি। যারা কোরআন ও নবী মুহাম্মদ (সা.) কে নিয়ে অশোভন কথা বলেছে, তারা কেউ ধর্মতত্ত্ববিদ নয়। নাস্তিক, স্বল্পজ্ঞানী ও বিকৃত মনের লোকই শুধু কোরআন ও নবী মুহাম্মদ (সা.) কে নিয়ে কটূক্তি করতে পারে। এ পর্যন্ত যারাই এ অপকর্ম করেছে, তাদের প্রত্যেকের সম্পর্কে খোঁজ নিলে এ বিষয়টির প্রমাণ মিলবে। কেউ একজন নানামুখী জ্ঞানের ধারক হতে পারেন, পন্ডিত হতে পারেন, ভালো লেখকও হতে পারেন, তাই বলে তিনি ধর্ম ও আধ্যাত্মিকতা সম্পর্কে যা বলবেন তাকেই গুরুত্বপূর্ণ বা গ্রহণযোগ্য বলে মেনে নিতে হবে এর কোনো যুক্তি নেই।
মানবীয় জ্ঞান সীমিত। আইনস্টাইনের মতো বিজ্ঞানীও স্রষ্টার লীলা বুঝতে হোঁচট খেয়েছেন। তিনি তার এক বন্ধুকে ১৯২৪ সালে লিখিত এক পত্রে বলেন, '... ইলেকট্রনের ওপর আলোক রশ্মি ফেলা হলে তা আপনা থেকেই সিদ্ধান্ত নিতে পারবে, সে কখন এবং কোনদিকে ঝাঁপ দেবে। এটাই যদি আসল ব্যাপার হয়, তবে পদার্থবিজ্ঞানী না হয়ে মুচি বা জুয়াখেলার আড্ডার সহকারী হওয়াই আমার উচিত ছিল।' (এএম হারুন-অর-রশীদ, বিজ্ঞান ও দর্শন, বাংলা একাডেমি, ঢাকা, পৃ. ৩)।
বিজ্ঞানও এখন আধ্যাত্মিকতায় বিশ্বাসী। কেননা বিজ্ঞানে 'কোয়ার্ক' নামক এক বিষয়কে বস্তুর আদি উপাদান হিসেবে স্বীকার করা হচ্ছে। এ কোয়ার্কের বর্ণনা দিতে গিয়ে জনপ্রিয় বিজ্ঞান লেখক হারুন-অর-রশীদ বলেন, 'এ নেপথ্যবাসিনীর লাস্যময়ী নূপুরধ্বনি শোনা যাবে, তার দেহপল্লবীর সুষমায় আর অঙ্গহীন আলিঙ্গনে গড়ে উঠবে দৃশ্যমান জগৎ কিন্তু তাকে পাওয়া যাবে না। বস্তুকণার মধ্যে সে চিরকালের জন্য বন্দি, তার মুক্তি নেই, তার প্রত্যক্ষ প্রকাশ নেই।' (এএম হারুন-অর-রশীদ, পদার্থবিজ্ঞানে বিপ্লব, বাংলা একাডেমি, ঢাকা, ১৯৮৭, পৃ. ৬৭)।
ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র একটি কণার জ্ঞান বা পরমাণুর জ্ঞানই যেখানে মানুষের পূর্ণাঙ্গ নয়, সেখানে এ মহাবিশ্বের যাবতীয় জ্ঞান, এর স্রষ্টা ও প্রতিপালক তথা আল্লাহর জ্ঞান অর্জন করা মানুষের জন্য কতটা কঠিন হতে পারে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ধর্মীয় বিষয় সম্পর্কে কেউ বৈজ্ঞানিক তথা পরীক্ষাগারের প্রমাণ খুঁজলে এটা হবে ক্যাটাগরিক্যাল মিসটেক বা শ্রেণী বিভ্রান্তি। তবে বাস্তবভিত্তিক, যুক্তিভিত্তিক অনেক প্রমাণই উপস্থাপন করা যায়; যাতে করে স্রষ্টা ও তাঁর আধ্যাত্মিকতা সম্পর্কে পর্যাপ্ত প্রমাণ হাজির করা যায়। স্রষ্টা নেই- এ কথা বলা চরম মূর্খতা। বিজ্ঞান ভর ও বেগকে একসঙ্গে পরিমাপ করতে পারে না। তাই জগৎ সম্পর্কে চূড়ান্ত কোনো ফয়সালা তার হাতে নেই। বিজ্ঞানেরই যখন এ অবস্থা তখন কোনো সাধারণ লেখক কিংবা কল্পনাবিলাসী সাহিত্যিক যদি আধ্যাত্মিক জগৎ তথা আল্লাহর অস্তিত্ব ও তাঁর প্রত্যাদেশকে অস্বীকার করেন; নবী-রাসূলদের অস্বীকার করেন, তাহলে এটা হবে অজ্ঞতারই পরিচায়ক। তাঁর এসব বিষয় সম্পর্কে যে বা যারা ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ করতে পারে, তারা বিকৃত মানসিকতার অথবা স্বঘোষিত সর্বজ্ঞানী এবং বাস্তবিক পক্ষে ভ-।
'নবি মুহাম্মদের ২৩ বছর' বইয়ের লেখক আলি দস্তি মহানবী (সা.) কে 'স্বঘোষিতভাবে ঈশ্বরের' প্রতিনিধি বলেছেন। তিনি বা তার মতো কিছু অপতৎপরতাকারী ব্যক্তিই এ মন্তব্য করতে পারেন। কেননা পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষ মহানবী (সা.) কে নবী-রাসূল এবং মানবতার শান্তির দিশারি হিসেবে স্বীকার করেন। উপরন্তু তারা সগৌরবে এ ঘোষণা ও সাক্ষ্য প্রদান করেন। এটা ঐতিহাসিকভাবে স্বীকৃত, আইয়ামে জাহেলিয়ার অবস্থাকে পরিবর্তন করে তিনি তৎকালীন আরব সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তাঁর চরিত্র মাধুরী দ্বারা তিনি মানুষের অন্তরের ভালোবাসা ও বিশ্বাস অর্জন করেছিলেন। আজও সব ধর্ম-বর্ণের বিবেকবান কোটি কোটি মানুষ তাঁকে মহামানব বলে স্বীকার করেন। নারীপ্রীতির যে অভিযোগ বইটিতে করা হয়েছে, তার জবাবে একটি ঐতিহাসিক প্রমাণ উপস্থাপন করাই যথেষ্ট, তিনি কোনো যুবতী-কুমারী নারীকে বিবাহ করেননি। অথচ তাঁর আদর্শ প্রচার থেকে বিরত থাকার বিনিময়ে তৎকালীন সমাজপতিরা তাঁকে যথাইচ্ছা সুন্দরী নারীর প্রলোভনও দেখিয়েছিলেন। কিন্তু মহান নবী (সা.) বলেছেন, তাঁর এক হাতে চন্দ্র ও আর এক হাতে সূর্য এনে দিলেও তিনি সত্য প্রচার থেকে বিরত হবেন না। তাঁর দরিদ্র জীবনযাপন প্রমাণ করে তিনি অর্থবিত্ত বা সম্পদের লোভী ছিলেন না। আরবের মরুভূমি থেকে মুহাম্মদ (সা.) এর ভূত দেখার মতো বিভ্রাট ঘটত বলে গ্রন্থটির লেখক যে দাবি করেছেন, তার জবাবে বলা যায় লেখক কি মনোবিজ্ঞানী বা মনোচিকিৎসক? অন্যদিকে কোরআনকে তিনি মুহাম্মদ (সা.) এর রচনা বলেছেন। যদি মুহাম্মদ (সা.) কে লেখক মনোবৈকল্যে ভোগা মানুষ মনে করেন, তাহলে তাঁর দ্বারা এত চমৎকার এবং বহুল পঠিত ও অনুশীলনীয় আদর্শের ধারক একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান রচনা সম্ভব হলো কীভাবে? আর পবিত্র কোরআনে এমন অনেক তথ্য আছে, যা একমাত্র ঐশী প্রত্যাদেশনির্ভর ছাড়া কোনো মানুষ দ্বারা প্রাপ্ত হতে পারে না। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত বিধিবিধান সম্পর্কে লেখক যেসব মন্তব্য করেছেন, তা তার মূর্খতার পরিচায়ক। আধুনিক বিজ্ঞান কোরআনের একটি বাণীকেও অপ্রমাণ করতে পারেনি। বরং কোরআনের অনেক তথ্য বিজ্ঞান ক্রমে ক্রমেই প্রমাণ করছে। উদাহরণ হিসেবে বলা চলে, গ্রহ-নক্ষত্রের ঘূর্ণায়মানের কথা কোরআনে আছে, যা বিজ্ঞান প্রমাণ করেছে। মহাবিশ্ব প্রসারমান, এ তথ্য সূরা আর রাহমানে রয়েছে, যা বিজ্ঞান সাম্প্রতিক যুগে এসে স্বীকার করছে। অনেক ঐতিহাসিক ঘটনার বিবরণও কোরআনে রয়েছে, যা হজরত মুহাম্মদ (সা.) বা তৎকালীন মানুষ জানতেন না।
যা হোক, কোরআনের আধ্যাত্মিকতা, আল্লাহর অস্তিত্ব এবং নবী মুহাম্মদ (সা.) এর নবুয়ত সম্পর্কে অনেক প্রমাণই উপস্থাপন করা যায়। এর চেয়েও বড় কথা, এসব তো কোটি কোটি মানুষের বিশ্বাসের বিষয়। একে ব্যঙ্গ করা বিশ্বমানবতারই অবমাননা করা। এ ধরনের গ্রন্থের লেখক, অনুবাদক এবং প্রকাশক সবাই মানবতাবিরোধী। আর এ ধরনের মানবতাবিরোধী গ্রন্থ বাংলা একাডেমির বইমেলায় যাতে কোনো দিনই ঠাঁই না পায়, সেদিকে প্রতিষ্ঠানটির বিশেষভাবে নজর দেয়া প্রয়োজন মনে করি।
লেখক : ড. মোঃ শওকত হোসেন, সহকারী অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
মানবীয় জ্ঞান সীমিত। আইনস্টাইনের মতো বিজ্ঞানীও স্রষ্টার লীলা বুঝতে হোঁচট খেয়েছেন। তিনি তার এক বন্ধুকে ১৯২৪ সালে লিখিত এক পত্রে বলেন, '... ইলেকট্রনের ওপর আলোক রশ্মি ফেলা হলে তা আপনা থেকেই সিদ্ধান্ত নিতে পারবে, সে কখন এবং কোনদিকে ঝাঁপ দেবে। এটাই যদি আসল ব্যাপার হয়, তবে পদার্থবিজ্ঞানী না হয়ে মুচি বা জুয়াখেলার আড্ডার সহকারী হওয়াই আমার উচিত ছিল।' (এএম হারুন-অর-রশীদ, বিজ্ঞান ও দর্শন, বাংলা একাডেমি, ঢাকা, পৃ. ৩)।
বিজ্ঞানও এখন আধ্যাত্মিকতায় বিশ্বাসী। কেননা বিজ্ঞানে 'কোয়ার্ক' নামক এক বিষয়কে বস্তুর আদি উপাদান হিসেবে স্বীকার করা হচ্ছে। এ কোয়ার্কের বর্ণনা দিতে গিয়ে জনপ্রিয় বিজ্ঞান লেখক হারুন-অর-রশীদ বলেন, 'এ নেপথ্যবাসিনীর লাস্যময়ী নূপুরধ্বনি শোনা যাবে, তার দেহপল্লবীর সুষমায় আর অঙ্গহীন আলিঙ্গনে গড়ে উঠবে দৃশ্যমান জগৎ কিন্তু তাকে পাওয়া যাবে না। বস্তুকণার মধ্যে সে চিরকালের জন্য বন্দি, তার মুক্তি নেই, তার প্রত্যক্ষ প্রকাশ নেই।' (এএম হারুন-অর-রশীদ, পদার্থবিজ্ঞানে বিপ্লব, বাংলা একাডেমি, ঢাকা, ১৯৮৭, পৃ. ৬৭)।
ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র একটি কণার জ্ঞান বা পরমাণুর জ্ঞানই যেখানে মানুষের পূর্ণাঙ্গ নয়, সেখানে এ মহাবিশ্বের যাবতীয় জ্ঞান, এর স্রষ্টা ও প্রতিপালক তথা আল্লাহর জ্ঞান অর্জন করা মানুষের জন্য কতটা কঠিন হতে পারে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ধর্মীয় বিষয় সম্পর্কে কেউ বৈজ্ঞানিক তথা পরীক্ষাগারের প্রমাণ খুঁজলে এটা হবে ক্যাটাগরিক্যাল মিসটেক বা শ্রেণী বিভ্রান্তি। তবে বাস্তবভিত্তিক, যুক্তিভিত্তিক অনেক প্রমাণই উপস্থাপন করা যায়; যাতে করে স্রষ্টা ও তাঁর আধ্যাত্মিকতা সম্পর্কে পর্যাপ্ত প্রমাণ হাজির করা যায়। স্রষ্টা নেই- এ কথা বলা চরম মূর্খতা। বিজ্ঞান ভর ও বেগকে একসঙ্গে পরিমাপ করতে পারে না। তাই জগৎ সম্পর্কে চূড়ান্ত কোনো ফয়সালা তার হাতে নেই। বিজ্ঞানেরই যখন এ অবস্থা তখন কোনো সাধারণ লেখক কিংবা কল্পনাবিলাসী সাহিত্যিক যদি আধ্যাত্মিক জগৎ তথা আল্লাহর অস্তিত্ব ও তাঁর প্রত্যাদেশকে অস্বীকার করেন; নবী-রাসূলদের অস্বীকার করেন, তাহলে এটা হবে অজ্ঞতারই পরিচায়ক। তাঁর এসব বিষয় সম্পর্কে যে বা যারা ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ করতে পারে, তারা বিকৃত মানসিকতার অথবা স্বঘোষিত সর্বজ্ঞানী এবং বাস্তবিক পক্ষে ভ-।
'নবি মুহাম্মদের ২৩ বছর' বইয়ের লেখক আলি দস্তি মহানবী (সা.) কে 'স্বঘোষিতভাবে ঈশ্বরের' প্রতিনিধি বলেছেন। তিনি বা তার মতো কিছু অপতৎপরতাকারী ব্যক্তিই এ মন্তব্য করতে পারেন। কেননা পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষ মহানবী (সা.) কে নবী-রাসূল এবং মানবতার শান্তির দিশারি হিসেবে স্বীকার করেন। উপরন্তু তারা সগৌরবে এ ঘোষণা ও সাক্ষ্য প্রদান করেন। এটা ঐতিহাসিকভাবে স্বীকৃত, আইয়ামে জাহেলিয়ার অবস্থাকে পরিবর্তন করে তিনি তৎকালীন আরব সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তাঁর চরিত্র মাধুরী দ্বারা তিনি মানুষের অন্তরের ভালোবাসা ও বিশ্বাস অর্জন করেছিলেন। আজও সব ধর্ম-বর্ণের বিবেকবান কোটি কোটি মানুষ তাঁকে মহামানব বলে স্বীকার করেন। নারীপ্রীতির যে অভিযোগ বইটিতে করা হয়েছে, তার জবাবে একটি ঐতিহাসিক প্রমাণ উপস্থাপন করাই যথেষ্ট, তিনি কোনো যুবতী-কুমারী নারীকে বিবাহ করেননি। অথচ তাঁর আদর্শ প্রচার থেকে বিরত থাকার বিনিময়ে তৎকালীন সমাজপতিরা তাঁকে যথাইচ্ছা সুন্দরী নারীর প্রলোভনও দেখিয়েছিলেন। কিন্তু মহান নবী (সা.) বলেছেন, তাঁর এক হাতে চন্দ্র ও আর এক হাতে সূর্য এনে দিলেও তিনি সত্য প্রচার থেকে বিরত হবেন না। তাঁর দরিদ্র জীবনযাপন প্রমাণ করে তিনি অর্থবিত্ত বা সম্পদের লোভী ছিলেন না। আরবের মরুভূমি থেকে মুহাম্মদ (সা.) এর ভূত দেখার মতো বিভ্রাট ঘটত বলে গ্রন্থটির লেখক যে দাবি করেছেন, তার জবাবে বলা যায় লেখক কি মনোবিজ্ঞানী বা মনোচিকিৎসক? অন্যদিকে কোরআনকে তিনি মুহাম্মদ (সা.) এর রচনা বলেছেন। যদি মুহাম্মদ (সা.) কে লেখক মনোবৈকল্যে ভোগা মানুষ মনে করেন, তাহলে তাঁর দ্বারা এত চমৎকার এবং বহুল পঠিত ও অনুশীলনীয় আদর্শের ধারক একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান রচনা সম্ভব হলো কীভাবে? আর পবিত্র কোরআনে এমন অনেক তথ্য আছে, যা একমাত্র ঐশী প্রত্যাদেশনির্ভর ছাড়া কোনো মানুষ দ্বারা প্রাপ্ত হতে পারে না। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত বিধিবিধান সম্পর্কে লেখক যেসব মন্তব্য করেছেন, তা তার মূর্খতার পরিচায়ক। আধুনিক বিজ্ঞান কোরআনের একটি বাণীকেও অপ্রমাণ করতে পারেনি। বরং কোরআনের অনেক তথ্য বিজ্ঞান ক্রমে ক্রমেই প্রমাণ করছে। উদাহরণ হিসেবে বলা চলে, গ্রহ-নক্ষত্রের ঘূর্ণায়মানের কথা কোরআনে আছে, যা বিজ্ঞান প্রমাণ করেছে। মহাবিশ্ব প্রসারমান, এ তথ্য সূরা আর রাহমানে রয়েছে, যা বিজ্ঞান সাম্প্রতিক যুগে এসে স্বীকার করছে। অনেক ঐতিহাসিক ঘটনার বিবরণও কোরআনে রয়েছে, যা হজরত মুহাম্মদ (সা.) বা তৎকালীন মানুষ জানতেন না।
যা হোক, কোরআনের আধ্যাত্মিকতা, আল্লাহর অস্তিত্ব এবং নবী মুহাম্মদ (সা.) এর নবুয়ত সম্পর্কে অনেক প্রমাণই উপস্থাপন করা যায়। এর চেয়েও বড় কথা, এসব তো কোটি কোটি মানুষের বিশ্বাসের বিষয়। একে ব্যঙ্গ করা বিশ্বমানবতারই অবমাননা করা। এ ধরনের গ্রন্থের লেখক, অনুবাদক এবং প্রকাশক সবাই মানবতাবিরোধী। আর এ ধরনের মানবতাবিরোধী গ্রন্থ বাংলা একাডেমির বইমেলায় যাতে কোনো দিনই ঠাঁই না পায়, সেদিকে প্রতিষ্ঠানটির বিশেষভাবে নজর দেয়া প্রয়োজন মনে করি।
লেখক : ড. মোঃ শওকত হোসেন, সহকারী অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়