Tuesday, 24 March 2015

জিহাদের নামে জঙ্গি-সন্ত্রাসীরা তরুণদের ধ্বংস করছে

আল্লাহ-জাল্লা-শানুহুর কুরআন ও রসুল মকবুল (সা.)-এর সুন্নাহর নির্ভেজাল অনুসারী মুসলমানদের চারপাশে স্বধর্মের দাবিদার তথাকথিত মুসলিমদের উদ্ভাবিত ফেতনার উপদ্রব আজ নতুন নয়। কিন্তু ঊনবিংশ-বিংশ শতাব্দীতে যেসব নব্য ফেতনার উদ্ভব ঘটেছে, তার মধ্যে জিহাদকেন্দ্রিক ফেতনাটি রীতিমতো ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেছে। আল্লাহ পাক আখেরি নবীর উম্মতদের মধ্য হতে তার নিজের ধর্ম ইসলাম অবলম্বনকারীদের নামকরণ করেছেন মুসলিম। আল্লাহ তায়ালার দুদরতী জবানের ভাষ্যমতে— প্রকৃত মুসলমান তারাই, যারা আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের পাক দরবার হতে তার বিশেষ ফেরেশতা জিব্রাইল আমিনের মারফত ওহিরূপে যে সমস্ত বিধান রসুলে খোদা (সা.)-এর ওপর নাজেল করেছেন, তা শতভাগ মুখে স্বীকার এবং অন্তরের অন্তস্তলে বিশ্বাস করে তদনুসারে জীবনযাত্রা পরিচালনা করে। আর তাদের দ্বারা দুনিয়ার জমিন থেকে কুফরের প্রাধান্য দমন করে শাশ্বত সত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে মুসলমানদের জন্য জিহাদ ফরজ করে দিলেন। শুধু তা-ই নয়, জিহাদকে এক অবর্ণনীয় সীমাহীন দ্বিমুখী নেয়ামত বলে ঘোষণা করলেন।

জিহাদের ময়দানে শত্রুর সঙ্গে যুদ্ধ করে প্রাণ ত্যাগকারীকে বললেন শহীদ আর শহীদানরা শুধু বিনা হিসাবে জান্নাতই লাভ করবেন না, তাদের পবিত্র লাস কাফনসহ কিয়ামত অবধি কবর দেশে অক্ষত অবস্থায় বিদ্যমান থাকবে এবং বরযোখের জীবনে শহীদানরা আল্লাহ পাকের দরবার হতে রীতিমতো রিজিক লাভ করে থাকেন। অপরদিকে জিহাদে জয়লাভকারী সৈনিকদের উপাধি দিলেন গাজী। তাদের ইহলৌকিক ও পারলৌকিক উভয় জীবন সর্বোচ্চ সাফল্যমণ্ডিত।

কিন্তু আজ যারা জিহাদের কথা বলে কোমলমতি মাদ্রাসার ছাত্র, বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের এবং ছাত্র নয় এমন অনেক তরুণ-তরুণীকে শিক্ষা-দীক্ষা পিতা-মাতা আত্মীয়স্বজন নির্বিশেষে সভ্য শিক্ষিত সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করে সাক্ষাত্ ধ্বংসের গহবরে ঠেলে দিচ্ছে। তারা কারা? তাদের মধ্যে তো মুসলমানিত্বের মমেরও বিন্দুমাত্র চিহ্ন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। কারণ আল্লাহ পাক জিহাদ ফরজ করেছেন কুফরের বিরুদ্ধে ঈমানদার মুসলমানের ঈমানি দায়িত্ব হিসাবে। আর ঈমানদার তারা, যারা ঈমানদারিত্বে মৌলিক বিধানগুলোর সব কয়টিই পরিপূর্ণভাবে মৌখিক প্রকাশ ও তদনুসারে জীবনযাত্রা পরিচালনা করে। এই মর্মে আল্লাহ পাক বলেন— “রাসুল বিশ্বাস করেন ঐ সমস্ত বিষয় সম্পর্কে যা তার পালনকর্তার পক্ষ থেকে বিশ্বাস রাখে আল্লাহর প্রতি, তার ফেরেশতাদের প্রতি, তার গ্রন্থসমূহের প্রতি এবং তার পয়গম্বরগণের প্রতি। তারা বলে, আমরা তার পয়গম্বরগণের মধ্যে কোনো তারতম্য করি না। তারা বলে, আমরা শুনেছি এবং কবুল করেছি। আমরা তোমার কাছে ক্ষমা চাই। হে আমাদের পালনকর্তা। তোমারই দিকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে।” সূরা আল বাকারাহ (২৮৫)।

আজ যারা ঘটা করে কোমলমতি তরুণ-তরুণীসহ সব বয়সের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের জিহাদে অবতীর্ণ হতে আহবান করছে, কুরআন-হাদিসের আলোকে দেখা জরুরি হয়ে পড়েছে তারা কারা? তারা তো অভিশপ্ত জঙ্গি-সন্ত্রাসী ছাড়া আর কিছুই নয়। কারণ আল্লাহর তরফ থেকে এই সমস্ত মৌলিক বিধান সর্বান্তকরণে মাননেওয়ালা ও পালন করনেওয়ালা রসুলপ্রেমিক খাঁটি মুসলমানদের চেয়েও জোরেশোরে বলে বেড়ায় ঐ ভয়ঙ্কর জঙ্গি সন্ত্রাসীরা। কিন্তু ওদের কাজে-কর্মে তিলমাত্র মানার প্রমাণ মেলে না। ওদের কার্যকলাপ ঐ সমস্ত খোদায়ী বিধানের শতভাগ বিরোধী। ওরা স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাজের সমালোচনাকারী (নাউজুবিল্লাহ)। আল্লাহ তাআলা সব ধরনের জুলুমের ঊর্ধ্বে। অথচ এরা আল্লাহর আইন যিনা করার শাস্তি রজমকে নিঃসন্দেহে জুলুম বলে উল্লেখ করেছে। কুরআন শরীফ সম্পকে কটূক্তি করেছে। যেখানে আল্লাহ তা’আলা নিজে তার নবী-রসুলগণকে নিষ্পাপ ঘোষণা করেছেন, সেখানে এই ধর্মদ্রোহীরা বলছে নবীগণ নিষ্পাপ নন, প্রত্যেক নবী গুনাহ করেছেন।

বর্ণাঢ্য জীবনযাত্রা পরিচালনাকারী একজন নবী হযরত ইউসুফ (আ:) ?যিনি আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের প্রিয়ভাজন স্নেহভাজন নবী। তাকে ওরা এইভাবে হেয়প্রতিপন্ন করার অপপ্রয়াসে লিপ্ত হয়েছে যে, তিনি শুধু একজন স্বৈরশাসকই নন, বরং ইতালির মুসোলিনির মতো একজন ডিক্টেটর (নাউজুবিল্লাহ)। যেখানে স্বয়ং আল্লাহ পাক ঈমানের মাপকাঠি নির্ধারণ করেছেন সাহাবায়ে কেরাম (রা:)দের ঈমানকে, অর্থাত্ সাহাবায়ে কেরামদের মতো ঈমানদার হতে হবে। অন্যথায় কারো মনগড়া ঈমানকে ঈমান বলে গণ্য করা হবে না এবং ঈমানদারকে ঈমানদার হিসেবে গণ্য করা হবে না। অর্থাত্ ঐ বেঈমানরা বলছে সাহাবায়ে কেরাম (রা) সত্যের মাপকাঠি নন এবং তারা অনুসরণ ও অনুকরণযোগ্য নন। হযরত আলী (রা.) সম্পর্কে ওরা বলছে, তিনি এমন কিছু কাজ করেছেন যাকে অন্যায় বলা ছাড়া উপায় নেই। এসব ধৃষ্টতাপূর্ণ মন্তব্যের ব্যাপারে স্বচ্ছ আয়নার ন্যায় পরিষ্কার হয়ে গেছে ওরা কারা। ওরা তারা, যাদের ফেতনা কাদিয়ানি ফেতনার চেয়েও ভয়ঙ্কর!

সুতরাং হে ঈমানদার মুসলিম ভ্রাতা-ভগ্নিগণ, হে আগামী দিনের আসার আলোকবর্তিকা তরুণ-তরুণী— ওদের আহবানে চুল পরিমাণ সাড়া দিও না। হে সোনার ছেলে-মেয়ের জনক-জননীর অভিভাবকবৃন্দ, এখনই ওদের থেকে চিরতরে মুখ ফিরিয়ে নাও। ওরা ধার্মিক নয়, ধমদ্রোহী, ঈমানদার নয়— বেঈমান। আল্লাহর কুরআন ও রসুল (সা.)-এর হাদিসের আলোকে ওরা জঙ্গি, ওরা মহাসন্ত্রাসী! ওদের বিরুদ্ধাচরণ করা ঈমানি দায়িত্ব। ওদের ত্যাগ করে নিজে বাঁচ, আহালকে বাঁচাও।

লেখক: মো. শাহ্জাহান, মুক্তিযোদ্ধা, ইঞ্জিনিয়ার ও কবি