Tuesday, 24 March 2015

সর্বজনীন শুভেচ্ছা সালাম 
মানুষের সঙ্গে মানুষের দেখা হলে শুভেচ্ছা জানানোর বিষয়টি বহুকাল থেকে চলে আসছে। এটা মানব সভ্যতার একটি গৌরবজনক অনুষঙ্গ। ধর্ম, জাতি ভেদে শুভেচ্ছা বিনিময়ের ভাষাও হয়েছে হরেক ধরনের। বোখারিতে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আদম (আ.) কে সৃষ্টি করার পর বললেন, যাও, তুমি ওই বসে থাকা ফেরেশতাদের সালাম করো। তারপর ভালো মতো শুনবে তারা কীভাবে সালামের উত্তর দেয়। আর এটাই হবে তোমার সন্তানদের পারস্পরিক শুভেচ্ছা বিনিময়ের ভাষা। এ হাদিস দ্বারা স্পষ্ট হলো, সালাম হলো সব মানুষের শুভেচ্ছা বিনিময়ের ভাষা, যা তাদের পিতাকে প্রথমেই শিক্ষা দেয়া হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীকালে তার অধিকাংশ সন্তান ভুলে গেছে সেই শুভেচ্ছা বিনিময়। কিন্তু ভুলেনি তার মুসলিম সন্তানরা।

আল কোরআন থেকে আরও জানা যায়, যখন ইবরাহিম (আ.) এর কাছে ফেরেশতারা এলো তখন তারা সালাম দিল। এমনিভাবে ইবরাহিম (আ.) তার মুশরিক পিতাকে সালাম দিয়েছেন। নবী ইবরাহিম (আ.) কে মুসলিমরা তাদের জাতির জনক বলে বিশ্বাস করে। আল কোরআনে আল্লাহ তা উল্লেখও করেছেন। আবার ইহুদি ও খ্রিস্টান ধর্মের মানুষ ইবরাহিমকে তাদের ধর্মের আদি পিতা বলে জানে। এমনকি ইহুদিরা বলে, ইবরাহিম ইহুদি ছিলেন, আর খ্রিস্টানরা দাবি করে, ইবরাহিম ছিলেন খ্রিস্টান। আল কোরআন এ প্রসঙ্গে বলেছে, ইবরাহিম ইহুদি ছিলেন না, সে খ্রিস্টানও ছিলেন না। তিনি ছিলেন একনিষ্ঠ মুসলিম। ইবরাহিমের ইহুদি বা খ্রিস্টান হওয়ার প্রশ্ন আসে কী করে? এ নামকরণ তো তার চলে যাওয়ার অনেক পরে হয়েছে। যাক, নবী ইবরাহিম (আ.) যখন সালাম চর্চা করেছেন, তখন তা এ তিনটি ধর্মেরই বিষয় হতে পারত। তবে ইসলাম শুভেচ্ছা বিনিময়ের ব্যাপারটাকে এত গুরুত্ব দিয়েছে, অন্য কোনো ধর্ম বা মতাদর্শ সে গুরুত্ব দেয়নি।

আল্লাহ তায়ালা আল কোরআনে সালাম দিতে বলেছেন। সালামের উত্তর দেয়াকে অপরিহার্য কর্তব্য বলে ঘোষণা দিয়েছেন। নবী মুহাম্মদ (সা.) যখন মদিনায় এলেন তখন প্রথম যে কথাগুলো সবাইকে বললেন তা ছিল : 'সালামের প্রসার ঘটাও! মানুষকে খাদ্য দান করো! যখন রাতে মানুষ ঘুমে থাকে তখন সালাত আদায় করো... ।'

সেখানে সালামের প্রচলন এত ছিল, ইহুদি ও খ্রিস্টানরা রাসূলকে সালাম দিত। রাসূল তাদের সালামের উত্তর দিতেন। মূলের দিক দিয়ে 'ইসলাম' ও 'সালাম' শব্দ দুটি একই। সালাম অর্থ শান্তি। আর ইসলাম অর্থ আল্লাহর সামনে আনুগত্য প্রকাশার্থে আত্মসমর্পণ করা। অন্য অর্থে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা।

শেষোক্ত অর্থ অনুযায়ী মুসলিম শব্দের অর্থ হলো শান্তি প্রতিষ্ঠাকারী। একটা শব্দ ব্যবহারের ক্ষেত্র ভেদে অর্থ ভিন্ন হতে পারে। একজন পুরুষ ব্যক্তি যখন বলে আমার বউ, তখন আমরা বুঝে নেই এখানে 'বউ' মানে স্ত্রী। কিন্তু একজন বয়স্ক নারী যখন বলে আমার বউ, তখন আমরা বুঝি এখানে 'বউ' মানে পুত্রবধূ।

ইসলাম শব্দটা যখন মানুষ ও স্রষ্টার সম্পর্কের ক্ষেত্রে ব্যবহার হয় তখন এর অর্থ হয়, পরম আনুগত্যে স্রষ্টার কাছে আত্মসমর্পণ করা। আর ইসলাম শব্দটা যখন মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্কের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় তখন তার অর্থ হয় শান্তি দান করা বা শান্তি প্রতিষ্ঠা করা। ঠিক সে হিসেবে 'সালাম' শব্দের ধাতুগত অর্থ শান্তি। আর তার থেকে আসা 'ইসলাম' শব্দের অর্থ শান্তি প্রতিষ্ঠা করা। যেমন রাশাদ শব্দের অর্থ সঠিক পথ লাভ করা। আর এরশাদ শব্দের অর্থ সঠিক পথ প্রদর্শন করা। আর মুরশিদ শব্দের অর্থ হলো, সঠিক পথ প্রদর্শনকারী। সে অনুসারে মুসলিম শব্দের অর্থ যথাক্রমে আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণকারী ও মানুষের জন্য শান্তি প্রতিষ্ঠাকারী। আর এ জন্যই শান্তির বাহক একজন মুসলিম কোনো মানুষকে দেখলেই বলবে আসসালামু আলাইকুম_ আপনার প্রতি শান্তি।

মুসলিমরা শুভেচ্ছা বিনিময়ে এমন ভাষা প্রয়োগ করে যা বিশ্বের সব মানুষ পছন্দ করবে। এ ভাষায় কোনো ব্যক্তি, ধর্ম, সময়, রাষ্ট্র বা সম্প্রদায়ের কোনো বিজ্ঞাপন নেই। আবার তা সকাল, দুপুর বা সন্ধ্যার মধ্যেও বন্দি নয়। সারাক্ষণই সালাম আর সালাম_ শান্তি।

© আবদুুল্লাহ শহীদ আঃ রহমান