Tuesday, 24 March 2015

স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে অবাঞ্ছিত বিতর্ক


সেই কবে, কতকাল আগে চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ বেতার ভবনে প্রবেশের ক্ষণ গত হয়েছে। তবু আজও আক্রান্ত হই নস্টালজিয়ায়। বারে বারে ফিরে যাই অতীতে। ১৯৬৫ সালে আমি তখন চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের এমবিবিএস কোর্সের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। কলেজের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গান, আবৃত্তি ও নাটক করি। আর অনুষ্ঠান উপস্থাপনা তো আছেই। দেশে তখন টেলিভিশন ছিল না। বেতার তখন মানুষের দৈনন্দিন জীবনের অঙ্গ। তখনকার কোনো বেতারশিল্পী সাধারণ মানুষের কাছে এক অসাধারণ ব্যক্তিত্ব।

এমন একজন শিল্পী হওয়ার আগ্রহ ছিল মনের কোণায়। তাই গিয়েছিলাম বেতারে অডিশন দিতে।

প্রথম অডিশনে কিছু উচ্চারণ দোষের জন্য পাস করা গেল না।

তিন মাস পর আবার অডিশনের ডাক পড়ল। বেতার স্টুডিওতে লাল বাতির সামনে দুরু দুরু চিত্তে আবার অডিশন দিলাম। সেই দিনের কোনো এক মাহেন্দ্রক্ষণে অনেক ভয়ের সাগর পাড়ি দিয়ে শুনলাম বেতার ঘোষণার অডিশনে পাস করেছি।

সেই থেকে বেতার জীবনের পথচলা শুরু।

অবশেষে হাতে এলো বেতার কর্তৃপক্ষের পাঠানো প্রথম চুক্তিপত্র। তাতে পরের ইংরেজি মাসের সাত দিন আমাকে রেডিও পাকিস্তান চট্টগ্রাম কেন্দ্রে অনুষ্ঠান ঘোষণায় চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। পারিশ্রমিক প্রতিদিন সাত টাকা। তখনকার দিনে সাত টাকা মানে অনেক টাকা।

রেডিওর চুক্তিপত্র পাওয়ায় বন্ধুরা অভিনন্দন জানাল। আমিও আমার নতুন জীবন শুরু করলাম।

রেডিও ভবনে প্রবেশ করা তখনকার সময় এত সহজ ছিল না। পুরো এলাকা ছিল সংরক্ষিত। অস্ত্রধারী পুলিশ ২৪ ঘণ্টা পাহারা দেয়। বেতারের নিজস্ব সিকিউরিটি তো আছেই। যেকোনো দর্শনার্থী বেতার ভবনে প্রবেশ করতে চাইলে কর্তৃপক্ষের লিখিত অনুমতির প্রয়োজন হতো। অনুমতি পাওয়াও এত সহজ ছিল না। অনুমতিপত্র পাওয়া সাপেক্ষে অভ্যর্থনা কক্ষে অপেক্ষার পালা শেষ করে অধিকর্তার অনুমতি সাপেক্ষে স্টুুডিওতে প্রবেশের অনুমতি মিলত।

আমার প্রথম দিন ডিউটি পড়ল রাতের পালায়। বিকেল ৫টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত। সঙ্গে দুজন সিনিয়র অ্যানাউন্সার। যত দূর মনে পড়ে, প্রথম দিন আমার সঙ্গে যাঁরা ছিলেন তাঁদের একজন হলেন শিরিনা আপা। অত্যন্ত ব্যক্তিত্বসম্পন্ন এক মহিলা। যত দিন তাঁর সঙ্গে ডিউটি করেছি, অনুষ্ঠান ঘোষণার প্রশিক্ষণের বেলায় তাঁর আগ্রহের কমতি ছিল না। এ ছাড়া আমার মেডিক্যাল কলেজের পড়াশোনার ব্যাপারেও খোঁজ নিতেন। বলতেন, রেডিওতে এসেছ ভালো করেছ, কিন্তু তোমার আসল কাজ মেডিক্যালের পড়াশোনা। সেটা ঠিক রেখে বাকি সব করতে হবে।

ওই সময় বেতার তরঙ্গে যেসব কণ্ঠশিল্পী তাঁদের মায়াময় সুরের জালে জনগণকে বিমোহিত করতেন তাঁরা হলেন শেফালী ষোষ, শ্যাম সুন্দর বৈষ্ণব, সৈয়দ আনোয়ার মুফতি, প্রবাল চৌধুরী, জয়ন্তী ভূঁইয়া, কাজী আয়শা আমান, চিত্তরঞ্জন ভূঁইয়াসহ আরো অনেকে। বেতার নাটক প্রযোজনায় যাঁদের অবদান ছিল অসামান্য, তাঁরা হলেন প্রফেসর ডা. সামশুল আজম, মাহবুব হাসান, ডা. কামাল এ খান, অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমদ প্রমুখ। বেতারের স্ক্রিপ্ট লিখতেন কবি আব্দুস সালাম, জনাব বেলাল মোহাম্মদ ও বেগম মোস্তারী সফি। ১৯৬৫ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত আরো যেসব বেতার ঘোষক-ঘোষিকার সঙ্গে বিভিন্ন শিফটে ডিউটি করেছি, তাঁদের মধ্যে ছিলেন জনাব ফজল হোসেন, আজগরি আপা, কাজী হোসনে আরা, সৈয়দ শওকত আলী, খালেদা ফেরদৌস, জহির শামসেরী, এ কে এম আসাদুজ্জামান, মনোয়ারা হায়দার, মাহবুব হাসান ও খালেদা বেগম।

মহাকালের সাক্ষী হয়ে আজ তাঁরা কে কোথায় কেমন আছেন জানি না। বেতার ভবনের আঙ্গিনার সেগুন, দেবদারুগাছের ঝরাপাতার মতো আমার সেই প্রিয় সহকর্মীরাও ঝরে গেছেন কত আনন্দ-বেদনার স্মৃতি নিয়ে। প্রিয় মুখ শফিক ও রাশেদার মতো হয়তো আরো কেউ পাড়ি দিয়েছেন না-ফেরার দেশে। তাঁদের সবার প্রতি আমার অতল শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা।

বেতার অনুষ্ঠান প্রচার করার জন্য প্রকৌশলী ও প্রকৌশল সহকারী ছাড়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়। সেই সময়ে যাঁরা এ বিভাগে আমাদের সহকর্মী ছিলেন তাঁরা হলেন- প্রকৌশলী সৈয়দ আব্দুস সাকের, প্রকৌশলী আমিনুর রহমান, জনাব রাশিদুল হাসান, আ ম শারফুজ্জামান ও রেজাউল করিম চৌধুরী। পরে তাঁরা সবাই শব্দসৈনিক হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। এ ছাড়া আরো ছিলেন আব্দুস সোবহান, মোসলেম খান, দেলোয়ার হোসেন প্রমুখ।

বেতারের বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ হলো 'সংবাদ' বিভাগ। সে সময় এই বিভাগের প্রধান ছিলেন জনাব সুলতান আলী। জনাব আলীর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে আমার ওই বেতার কেন্দ্রে দীর্ঘ ছয় বছরের বাংলা সংবাদ পাঠের সুযোগ হয়েছিল। আমার সংবাদ পাঠের শিক্ষাগুরু ছিলেন প্রখ্যাত ক্রিকেট ভাষ্যকার মরহুম বদরুল হুদা চৌধুরী। ৭ মার্চ ১৯৭১ থেকে ২৪ মার্চ ১৯৭১ সাল পর্যন্ত বদরুল ভাই ও আমি যুদ্ধকালীন সময়ে জনাব সুলতান আলীর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে চট্টগ্রাম সংগ্রাম পরিষদের নির্দেশিত 'সংবাদ বুলেটিন' প্রচার করতাম। বুলেটিনে থাকত পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে সর্বসাধারণের মধ্যে যুদ্ধ প্রস্তুতির আহ্বান।

চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের মধ্যে প্রয়াত আনোয়ার হোসেনের কথা আজও ভুলতে পারিনি। বেতার ভবনের পেছনের দিকে তাল, তমাল, দেবদারু-ঘেরা আনোয়ার হোসেন পরিচালিত 'লন রেস্টুরেন্টে' দুধের সরের ঘন চা আর চাটগাঁর বিখ্যাত বেলা বিস্কুট যে একবার খেয়েছে তাঁকে বারবার এখানে আসতেই হবে। বেতারে আগত সব শিল্পী কর্মকর্তা-কর্মচারীর জন্য তাঁর ওই চায়ের আড্ডা ছিল মান্না দের বিখ্যাত 'কফি হাউস'। সেই আড্ডা একসময় যাঁরা মাতিয়ে রাখতেন, তাঁরা কালের প্রবাহে আজ কে কোথায় হারিয়ে গেছেন জানি না।

১৯৭১ সাল। আমার বেতার জীবনের পাশাপাশি মেডিক্যালের পাঁচ বছরের ছাত্রজীবনের শেষ অধ্যায়।

সামনে কঠিন এমবিবিএস পরীক্ষা, তাও আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে।

৭ মার্চ ১৯৭১ সালে ঢাকায় রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু তাঁর বিখ্যাত ভাষণ দিলেন। তাঁর ঢেউ এসে লাগল চট্টগ্রামে। শুরু হলো জনযুদ্ধের প্রস্তুতি। চট্টগ্রামের সর্বস্তরের সাংস্কৃতিক কর্মীরা ঝাঁপিয়ে পড়লেন অসহযোগ আন্দোলনে। রাস্তার মোড়ে মোড়ে শুরু হলো বিদ্রোহী সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড। জয় বাংলা বাংলার জয়ই ছিল সব কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু। চট্টগ্রাম প্যারেড গ্রাউন্ডে অভিনীত হলো স্বাধীনতার বিখ্যাত নাটক 'এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম' এতে অভিনয় করলেন অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, দানিউল হক, মাহবুব হাসান, সুলতান উল আলম, সফিকুল ইসলাম ও এহসানুল গণি মিনার। লাখ লাখ দর্শক এই নাটক দেখে হানাদারদের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়ল।

বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে চট্টগ্রামে গঠিত হলো সংগ্রাম পরিষদ। পরিষদের নেতৃত্বে থাকলেন জনাব জহুর আহমদ চৌধুরী। অধ্যাপক মো খালেদ, এম আর সিদ্দিকী, এম এ মান্নান ও এম এ হান্নান।

ওই সংগ্রাম পরিষদ বঙ্গবন্ধুর 'স্বাধীনতার ঘোষণা' বেতারে প্রচারের উদ্যোগ নেয়। জননেতা এম এ হান্নান ২৬ মার্চ ১৯৭১ সাল দুপুর ২টা ২০ মিনিটে কালুরঘাট বেতার সম্প্র্রচার কেন্দ্র থেকে তা নিজ কণ্ঠে প্রচার করলেন। সঙ্গে অনুষ্ঠান ঘোষণায় ছিলেন রাখাল চন্দ্র বণিক। বেতারে ওই স্বাধীনতার ঘোষণা প্রচারের সঙ্গে আরো সংশ্লিষ্ট ছিলেন জননেতা এ কে খান, আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, আতাউর রহমান খান কায়সার ও ডা. এম এ মান্নান।

সেদিন ২৬ মার্চ ১৯৭১ সাল সকাল থেকে চট্টগ্রাম বেতারকর্মীদের তখন চলছে রেডিও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে 'বিদ্রোহ'। পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল টিক্কা খানের দেওয়া ভাষণ কোনোভাবেই চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচার করা হবে না। বেতারকর্মীদের সবাই একযোগে আগ্রাবাদ বেতার সম্প্রচার বন্ধ করে বেতার ভবন ত্যাগ করলেন।

সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটে চট্টগ্রাম বেতারের কবি বেলাল মোহাম্মদের নেতৃত্বে কিছু বেতারকর্মী কালুরঘাট সম্প্রচার কেন্দ্রে সমবেত হলেন। সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নিলেন এখন থেকে এই কেন্দ্রের নাম হবে 'স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র'। বেলাল ভাই আমাকে এই ঐতিহাসিক বেতারে ওই সান্ধ্য অধিবেশনে অনুষ্ঠান ঘোষকের দায়িত্ব দিলেন। স্ক্রিপ্ট হাতে অনেক উত্তেজনা এবং দুরু দুরু চিত্তে বেতার মাইক্রোফোনে ঘোষণা দিলাম 'স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র থেকে বলছি', এই বিপ্লবী বেতার অনুষ্ঠানে নিজ কণ্ঠে বেতারের নাম ঘোষণা ও অন্যান্য অনুষ্ঠানে আরো যাঁরা অংশ নিলেন তাঁরা হলেন আবুল কাসেম সন্দীপ, আব্দুল্লাহ আল ফারুক ও কবি আব্দুস সালাম। ওই সময় আমাদের সঙ্গে আরো যাঁরা উপস্থিত ছিলেন তাঁরা হলেন বেতার ঘোষক ফজল হোসেন ও কাজী হোসনে আরা। এই অধিবেশনে দ্বিতীয়বারের মতো বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা প্রচার করেন জননেতা এম এ হান্নান। সৃষ্টি হলো মুক্তিযুদ্ধের দ্বিতীয় ফ্রন্ট। খুনি জেনারেল ইয়াহিয়ার দাম্ভিকতা ভেঙে চুরমার করে নিপীড়িত লাখো বাঙালির মনে আশার আলো সঞ্চার করেছিল এই বিপ্লবী অধিবেশন।

ঐতিহাসিক এই বেতার অধিবেশনে বারবার ঘোষণা দেওয়া হলো বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন। মুক্তিযুদ্ধ চলছে, আপনারা আপনাদের যা কিছু আছে তা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ুন। ইনশা আল্লাহ জয় আমাদের অনিবার্য।

২৭ মার্চ ১৯৭১ সাল, জননেতা এম এ হান্নান, আতাউর রহমান খান কায়সার ও কবি বেলাল মোহাম্মদের আমন্ত্রণে বোয়ালখালী করলডাঙ্গায় অবস্থানরত ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের মেজর জিয়াউর রহমান সন্ধ্যায় স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্রে এলেন। তিনিও বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন ক্যাপ্টেন অলি আহমদ, ক্যাপ্টেন সুবিদ আলী ভূঁইয়া ও লে. শমসের মবিন চৌধুরীসহ তিন লরিভর্তি জওয়ান।

ওই বিপ্লবী বেতার সংগঠন এবং প্রচারে আরো যাঁরা সহযোগিতা করেন তাঁরা হলেন অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমদ, মাহবুব হাসান, বেগম মুশতারী সফি ও এম এ হালিম। কালুরঘাটের অধিবাসী সেকান্দার হায়াত খান ও হারুন অর রশিদ খান ওই বেতারের সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক সহযোগিতা করেন।

এই বিপ্লবী বেতারের প্রকৌশলী হিসেবে যাঁরা অনন্য সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছিলেন এবং যাঁদের সহযোগিতা ছাড়া এই বেতার অনুষ্ঠান প্রচার সম্ভব ছিল না, তাঁরা হলেন- আব্দুস সোবহান, মোসলেম খান, দেলোয়ার হোসেন ও আব্দুস শুক্কুর। আরো সক্রিয় ভূমিকা নিলেন ইঞ্জিনিয়ার সৈয়দ আব্দুস সাকের, ইঞ্জিনিয়ার আমিনুর রহমান, আ ম শরফুজ্জামান, রাশেদুল হাসান ও রেজাউল করিম চৌধুরী। তখনকার ওই সময়ে রিজিওনাল ইঞ্জিনিয়ারের দায়িত্বরত ছিলেন মির্জা নাসির উদ্দিন।

১৬ ডিসেম্বর যুদ্ধ শেষ। দেশ স্বাধীন হলো।

মুক্তিযুদ্ধের দ্বিতীয় ফ্রন্ট হিসেবে স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতারের ভূমিকা বাংলাদেশের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা হলো।

লেখক: ডা. এম সুলতান উল আলম, অধ্যাপক এবং সাবেক অনুষ্ঠান ঘোষক,
স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র, চট্টগ্রাম
drmsultanctg- yahoo.com