Tuesday, 24 March 2015

সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ ইসলাম সমর্থন করে না

ইসলাম শান্তি ও মানবতার ধর্ম। সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠাই এই ধর্মের লক্ষ্য। ইসলামের সুমহান আদর্শ প্রচারের মাধ্যমেই সমাজ ও রাষ্ট্রে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়। ইসলাম সন্ত্রাস, দাঙ্গা-হাঙ্গামা ও জঙ্গিমুক্ত একটি সুন্দর পৃথিবী চায়। ইসলামে জঙ্গিবাদ বা সন্ত্রাসবাদের কোনো স্থান নেই। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ আদর্শ মহামানব হজরত মুহাম্মদ (সা.) কখনও একজন মানুষকে গুপ্তহত্যা করেননি। মহানবী (সা.) যুদ্ধের সময় আগে অস্ত্র উত্তোলন করতে ও অস্ত্রের ভয়-ভীতি প্রদর্শন করতে নিষেধ করতেন। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ হল মানুষের জীবনকে ত্রাস সৃষ্টির মাধ্যমে দুর্বিষহ করে তোলা এবং চরমপন্থা, বাড়াবাড়ি, জোরজবরদস্তি ও বল প্রয়োগ করে কোনো মতবাদ চাপিয়ে দেওয়া। সমাজে অশান্তি, বিশৃঙ্খলা, অনিরাপত্তা ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করা। মানুষের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করা। ইসলাম ধর্মে তো মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে। ইসলামের নবীর আগমনই হয়েছে অন্ধকার থেকে আলোর পথে পথনির্দেশনা দানের জন্য; অমানবিকতাকে পায়ে দলে মানবিক সমাজ ব্যবস্থা উপহার দেওয়ার জন্য। পবিত্র কুরআন পাকে ঘোষিত হয়েছে- ‘নরহত্যা বা পৃথিবীতে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তি ছাড়া কেউ কাউকে হত্যা করলে সে যেন দুনিয়ার সমগ্র মানবগোষ্ঠীকে হত্যা করল আর কেউ কারও প্রাণ রক্ষা করলে সে যেন পৃথিবীর সমগ্র মানবগোষ্ঠীকে প্রাণে রক্ষা করল।’ (সূরা মায়িদা: ৩২) উক্ত আয়াতে কারিমা থেকে বোঝা গেল যে এসব ঘৃণ্যতম কাজ ইসলাম মোটেই সমর্থন করে না। ইসলামের দৃষ্টিতে এসব ঘৃণিত কাজ বরাবরই শাস্তিযোগ্য ও মানবতাবিরোধী অপরাধ বলেই নিরুত্সাহিত করেছে।
নিরপরাধ মানুষকে খুন করে, পৃথিবীতে আতঙ্ক ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করে কোনো ধর্ম প্রতিষ্ঠা করা কল্পিত ও মনগড়া অপকর্ম ছাড়া কিছুই নয়। যদি ইসলামের নামে কেউ এরূপ মনগড়া ব্যাখ্যা প্রদান করে তাহলে তার সঙ্গে ইসলামের দূরতম সম্পর্কও নেই। ইসলামের অভ্যুদয় থেকে আরম্ভ করে আজ পর্যন্ত যত বছরের ইতিহাস রচিত হয়েছে ইসলামের মূল প্রচার ও প্রসারের কোনো আন্দোলন অসি শক্তি ও পেশি শক্তির মাধ্যমে পরিচালিত হয়নি—বরং ইসলামের আদর্শিক মহানুভবতা, ক্ষমা, উদারতা, নৈতিক শক্তি ও পরমতসহিষ্ণুতার মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী ইসলামের পতাকা উড্ডীন হয়েছে। পৃথিবীব্যাপী ইসলাম বিস্তার লাভ করেছে তার সুমহান মহানুভবতার মধ্য দিয়ে। যে সত্যিকার মুসলমান তার চরিত্রমাধুর্যে বিমুগ্ধ হয়ে ভিন্নধর্মী মানুষ তার হাতে হাত রেখে ইসলাম ধর্মে দীক্ষা লাভ করছে, যে মুসলমান অন্যের নিরাপত্তার জিম্মাদার হওয়ার কথা সে কখনও কোনো প্রকার সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হতে পারে না। কারণ ইসলামের দৃষ্টিতে ধর্মে জঙ্গিবাদ, বোমাবাজি ও আত্মঘাতী হামলা সর্বাপেক্ষা বড় অপরাধ। হাদিস শরিফে রহমাতুল্লিল আলামিন ইরশাদ করেন ‘দুনিয়া ধ্বংস করে দেওয়া অপেক্ষা আল্লাহর কাছে ঘৃণিত কাজ হল মানুষ হত্যা করা।’
মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। মানুষের অকল্যাণে বিবেকবান মানুষ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হতে পারে না। মানবতা বিবর্জিত, মায়া-মমতাহীন, দিকভ্রান্ত, জ্ঞানশূন্য মানুষ অসভ্য সমাজের কাজ করে থাকে। যারা এসব কাজে লিপ্ত হয় তারা শান্তিকামী মানুষের শত্রু, মানবতার দুশমন। তাদের কোনো ধর্ম নেই। তাদের জাতীয় ও ধর্মীয় পরিচয় নেই। জঙ্গি ও সন্ত্রাসীরা নিরপরাধ মানুষ হত্যার মহাপাপ সম্পর্কে জানে না। তারা যদি তা জানত তাহলে তারা নিরপরাধ মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করতে পারত না। পবিত্র কুরআনে কারিমে আল্লাহ বলেন ‘আল্লাহ যার হত্যা নিষিদ্ধ করেছেন যথার্থ কারণ ব্যতিরেকে তোমরা তাকে হত্যা করো না। আর যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে নিহত হয়, আমি তার উত্তরাধিকারীকে ক্ষমতা দান করি। অতএব সে যেন হত্যার ব্যাপারে সীমা লঙ্ঘন না করে। নিশ্চয়ই সে সাহায্যপ্রাপ্ত। (সূরা বনী ইসরাঈল : ৩৩)
মহান আল্লাহ মুসলমানদের মধ্যপন্থী জাতি হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। মধ্যমপন্থা, ভারসাম্যপূর্ণ আচরণ মুসলমানদের চরিত্রের বিশেষ দিক। তাই চরমপন্থা, ফেতনা-ফাসাদ, নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলা কোনোভাবেই ইসলাম সমর্থন করে না। এগুলো ইসলামের দৃষ্টিতে হারাম। জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস-বিপর্যয়-অশান্তি সুস্পষ্ট ইসলাম পরিপন্থী। কারণ পবিত্র কুরআন ও হাদিসে এ বিষয়ে চূড়ান্ত নির্দেশনা রয়েছে, যেমন পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে ‘তোমরা এমন ফিতনা বা সন্ত্রাসকে ভয় করো, যা বিশেষ করে তোমাদের মধ্যে যারা জালিম শুধু তাদেরই ক্লিষ্ট করবে না এবং জেনে রাখ যে, আল্লাহ শাস্তিদানে কঠোর।’ সন্ত্রাসীদের লক্ষ করে আল্লাহ তা’আলা অন্যত্র ইরশাদ করেন, : ‘দুনিয়ায় শান্তি স্থাপনের পর সেখানে বিপর্যয় সৃষ্টি করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহর রহমত সত্ কর্মশীলদের অতি নিকটে। তাই তোমরা তাঁকে ডাক ভীত ও প্রত্যাশী হয়ে।’
সন্ত্রাস ও বিপর্যয়মুক্ত পরিবেশ এবং শান্তি ও সম্প্রীতিপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠার তাগিদে সরকারে দোআলম (সা.) বলেছেন, ‘সে ব্যক্তিই প্রকৃত মুসলিম, যার জিহ্বা ও হাতের অনিষ্ট থেকে অন্যরা নিরাপদ থাকে।’
যারা ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে যুব সমাজ ও সাধারণকে বিভ্রান্ত ও পথভ্রষ্ট করছে তাদের বিরুদ্ধে দেশের আলেম সমাজ, ধর্মীয় নেতা, মাদ্রাসার শিক্ষক, মসজিদের ইমাম ও খতিবসহ সর্বস্তরের মানুষের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদ ও বলিষ্ঠ সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
আমরা শান্তিকামী মুসলমান। সুতরাং আমাদের জীবনে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের মতো শান্তি ও মানবতাবিরোধী অপরাধ প্রসার লাভ করুক, তা আমরা কেউ কামনা করতে পারি না। আমরা কোনো গোষ্ঠীকে এরূপ অকল্যাণ ও বিপর্যয় বিস্তার করার সুযোগ করে দিতে পারি না। তাই আসুন, আমরা জাতি-ধর্ম-বর্ণ দলমত নির্বিশেষে সবাই মিলে দেশ ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও বোমাবাজদের নির্মূল করার লক্ষ্যে আল্লাহর মনোনীত মানবতা ও কল্যাণের ধর্ম ইসলামের পরম শান্তি ও সাম্যের বাণী সবার মাঝে ছড়িয়ে দিই।

লেখক : মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মামুন, সহকারী সম্পাদক, ইসলামিক ফাউণ্ডেশন