Tuesday, 24 March 2015

মহাসৃষ্টির মহাবিস্ময় 

আসমান আল্লাহর এক অপরূপ ও মহৎ সৃষ্টি। কোনো স্তম্ভ ছাড়া বিশাল এ আসমানকে আল্লাহ তায়ালা দাঁড় করিয়ে রেখেছেন। তিনি আসমান ও জমিন এবং এর মধ্যবর্তী সব কিছুকে ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, আল্লাহ যিনি আকাশম-লী ও পৃথিবী এবং এর অন্তর্বর্তী সব কিছু ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। (আল কোরআন : ৩২:৪)।

ছয় দিনে সৃষ্টির মধ্যে আল্লাহর রহস্য বিদ্যমান। কারণ আল্লাহ তায়ালা চাইলে এক নিমিষে সৃষ্টি করতে পারেন। তিনি কুন (হও) বললেই সব হয়ে যায়। তাফসিরকারদের অনেকেই মনে করেন, আল্লাহ তার বান্দাদের স্থিরতা শিক্ষা দেয়ার জন্যই ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। মোট সাতটি আসমানকে আল্লাহ তায়ালা সব স্তরে স্তরে সাজিয়েছেন। আল্লাহ বলেন, তোমরা কী লক্ষ্য করো না যে, আল্লাহ কীভাবে আসমানকে স্তরে স্তরে সৃষ্টি করেছেন এবং সেখানে চাঁদকে রেখেছেন আলোকরূপে আর সূর্যকে রেখেছেন প্রদীপরূপে। (আল কোরআন : ৭১:১৫-১৫)। সাত আসমানের মধ্যে প্রথম আসমানকে বিভিন্ন জিনিস দিয়ে বৈচিত্র্যময় করেছেন। চাঁদ, সূর্য, গ্রহ, নক্ষত্র ও অসংখ্য তারকা দ্বারা প্রথম আসমান সুসজ্জিত। কল্যাণময় তিনি, যিনি আসমানে রাশিচক্র সৃষ্টি করেছেন এবং তাতে রেখেছেন সূর্য ও দীপ্তিময় চন্দ্র। (আল কোরআন : ২৫:৬১)।

এই সুসজ্জিত স্তম্ভবিহীন সুবিশাল আসমান আল্লাহর কুদরতের এক বিশেষ নিদর্শন। সত্যসন্ধানী মানুষ এগুলো থেকে আল্লাহর সর্বময় ক্ষমতা ও একত্ববাদের প্রমাণাদি সংগ্রহ করতে পারে। আর কৃতজ্ঞশীল বান্দারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশের সুযোগ লাভ করতে পারে। নিশ্চয়ই আসমানগুলো ও পৃথিবীর সৃষ্টিতে রাত এবং দিনের পরিবর্তনে, যা মানুষের হিত সাধন করে তাসহ সমুদ্রে বিচরণশীল নৌযানসমূহে, আল্লাহ আকাশ থেকে যে বারিবর্ষণ দ্বারা পৃথিবীকে তার মৃত্যুর পর পুনরুজ্জীবিত করেন তাতে এবং তার মধ্যে যাবতীয় জীবজন্তুর বিস্তারে, বায়ুর দিকপরিবর্তনে, আকাশ ও পৃথিবীর মধ্যে নিয়ন্ত্রিত মেঘমালায় জ্ঞানবান জাতির জন্য নিদর্শন রয়েছে। (আল কোরআন : ২:১৬৪)।

এই নিদর্শন হওয়ার অর্থ হলো এগুলোর বিস্ময়কর নির্মাণ কৌশল ও অলৌকিক প্রতিক্রিয়া প্রত্যক্ষ করে মানুষ বিশ্বাস করে যে, এগুলো আপনা-আপনি তৈরি হয়ে যায়নি। এগুলোর সৃষ্টিকর্তা আছেন। যিনি সর্বশ্রেষ্ঠ প্রজ্ঞাময়। সর্বাধিক বিজ্ঞ ও সর্বোপরি ক্ষমতাশীল ও শক্তিধর। এই বিশ্বাস অর্জনের জন্য আকাশম-লী ও গ্রহ-নক্ষত্রের স্বরূপ উন্মোচন বা গোটা ব্যবস্থাপনার সম্পূর্ণ অবস্থা জানা কস্মিনকালেও জরুরি নয়। বরং যতটুক নিজের চোখে দেখে বোঝে, এতটুকই যথেষ্ট। সত্যানুরাগী এতেই সত্য উদ্ঘাটন করতে পারবে। আল্লাহর পরিচয় ও একত্ববাদে বিশ্বাসী হয়ে যাবে। পক্ষান্তরে সত্যানুরাগী না হলে মহাশূন্যে ভ্রমণ, চন্দ্র ভ্রমণ ও মঙ্গলগ্রহ আবিষ্কার করলেও আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাসী হওয়া যাবে না। আসমানকে আল্লাহ তায়ালা স্তম্ভ¢হীন সৃষ্টি করলেও অনেক তাফসিরকার মনে করেন, আসলে আসমানেরও স্তম্ভ রয়েছে, তবে তা দৃশ্যমান নয়। তা হলো একত্ববাদে বিশ্বাসী মানুষের অস্তিত্ব। কারণ হাদিসে রাসূল (সা.) বলেন, ততক্ষণ পর্যন্ত কেয়ামত বা মহাপ্রলয় সংঘটিত হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত পৃথিবীতে আল্লাহ আল্লাহ বলার মানুষ থাকবে। (মিশকাত)।

অর্থাৎ আল্লাহ বিশ্বাসী মানুষ থাকা পর্যন্ত কেয়ামত সংঘটিত হবে না। ঈমানদার মানুষের শক্তিতে আসমান টিকে থাকবে, পৃথিবীও থাকবে। যখন এমন মানুষ থাকবে না, তখন আসমান ধ্বংস হবে, পৃথিবী নিঃশেষ হবে। কাজেই ঈমানদার মানুষই আসমানকে অদৃশ্য খুঁটি হয়ে টিকিয়ে রেখেছে।

© ড. আবু সালেহ তোহা