Thursday, 19 March 2015

মানুষ নিরাপত্তা, শান্তি ও স্বস্তি চায়

সংবাদপত্রের দিকে চোখ বুলালেই আমরা দেখতে পাই আমাদের সামগ্রিক অবস্থা যেন ভয়াবহ আত্মঘাতী পর্যায়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে অসহায় মানুষও যেন সচেতন হয়ে এখন ঘুরে দাঁড়িয়েছে। মানুষ এখন আর আগের মতো ভয় পায় না। যারা নাশকতা করতে যায় তাদেরও জনরোষে পড়তে হয়। সংবাদপত্রে প্রকাশিত এক সংবাদ থেকে জানা যায় যে, নাশতকার চেষ্টা করতে গিয়ে ধরা খেয়ে গণপিটুনিতে চারজন মারা গেছে। এসব দেখে দুর্বৃত্তরাও আতঙ্কিত হয়ে পড়ছে (যদিও গণপিটুনি কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়)। সঙ্গে সঙ্গে সাধারণ মানুষও দুশ্চিন্তায় আছে কখন পেট্রলবোমাবাজদের আগুনের টার্গেট হয়ে তারা পড়ে। তারপরও মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে পড়ছে বোমাবাজদের ওপর। যারা ধরা পড়ে তারা গরিব সাধারণ মানুষের ঘরের ছেলে। কিন্তু মূল হোতারা পর্দার আড়ালেই থেকে যায়। সরকারের উচিত হবে যারা নাশকতার মূল পরিকল্পনাকারী কিংবা যারা নাশকতা সংঘটনের জন্য অর্থের জোগান দিয়ে থাকে, তাদের আইনের আওতায় এনে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে শাস্তি দেয়া। সরকার যদি মূল পরিকল্পনাকারী কিংবা অর্থ জোগানদাতাদের আইনের আওতায় আনতে পারে তাহলে দেশের মধ্যে পেট্রলবোমার রাজনীতি করার কেউ সাহস পাবে না। অন্যদিকে সরকার যদি বোমাবাজদের এবং তাদের অর্থ জোগানদাতাদের আইনের আওতায় না আনতে পারে, তাহলে বোমার আগুনে মানুষকে পুড়তেই হবে। প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়, চলমান আন্দোলন অর্থাৎ হরতাল-অবরোধকালে ৬০ দিনে প্রাণহানি ঘটেছে একশ’ জনের বেশি মানুষের। তার মধ্যে পেট্রলবোমা মেরে হত্যা করা হয়েছে ৫৭ জনকে। ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন আছেন অনেকেই। প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়, এই সন্ত্রাসের প্রতিবাদ করছে পুরো পৃথিবীর মানুষ। এমন কথাও বলা হচ্ছে যে, হরতাল-অবরোধের নামে পেট্রলবোমা মেরে মানুষ পুড়িয়ে মারছে এমন অভিযোগ যাদের বিরুদ্ধে কিংবা যে দলের বিরুদ্ধে করা হচ্ছে, সেই দলের সিনিয়র নেতারাও নাকি বিব্রতবোধ করছেন। এসব হরতাল-অবরোধ কোথাও পালিত হচ্ছে না। হরতাল-অবরোধে সব কিছুই চলছে। গাড়ি-ঘোড়ায় যানজট লেগে যায়। দূরপাল্লার গাড়িও চলছে। প্রথম প্রথম ভয়ে মানুষ বের হতো না, কিন্তু প্রয়োজনের তাগিদে এখন ঠিকই বের হচ্ছে। গাড়ির মালিক রাস্তায় গাড়ি নামাচ্ছেন। কথায় বলে না ক্ষুধার কাছে ডর-ভয় সব তুচ্ছ হয়ে যায়। মানুষ কত আর ভয়ে ভয়ে থাকবে। তাকে তো বাঁচতে হবে। একদিন ঠিকই মানুষের ভয় ভাঙে। মৃত্যুভয় এক সময় মানুষের কাছে পরাস্ত হয়। তাই হরতাল-অবরোধের মাঝেও মানুষ ডর-ভয়কে তুচ্ছ মনে করে ঘর থেকে বের হচ্ছে। হরতাল-অবরোধে আমাদের কোমলমতি ছাত্রছাত্রীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। হরতাল-অবরোধ আহ্বানকারীরা তা যে বোঝে না তা নয়। তারা তা ঠিকই বোঝে। তারা এ কথাও বোঝে যে, এই হরতাল-অবরোধে জনগণ উপকৃত হচ্ছে না; বরং কোমলমতি ছেলে-মেয়েরাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ওপর যে মানসিক চাপ পড়ছে তা নেতারা কী বুঝতে পারছেন? এক নেতা নাকি বলেছেন কিসের পরীক্ষা! একজন নেতা যদি বলেন কিসের পরীক্ষা, তাহলে দেশের মানুষের ভবিষ্যৎ কোন পর্যায়ে যাবে তা তো সহজেই বোঝা যায়। অনেকেই বলাবলি করে থাকেন আমাদের দেশের বড় বড় নেতার ছেলে-মেয়েরা আমাদের দেশের স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে লেখাপড়া করে না। তারা দেশের বাইরে উন্নত দেশগুলোতে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে লেখাপড়া করে থাকে। সেখানে হরতাল-অবরোধে নেতাদের ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনার ব্যাঘাত ঘটে না। তাই অহেতুক হরতাল-অবরোধে তাদের ছেলে-মেয়েদের কোনো ক্ষতি হয় না। ক্ষতি হয় দেশের গরিব জনসাধারণের ছেলে-মেয়েদের। গরিব ছেলে-মেয়েদের ক্ষতি হলে নেতাদের কিছু আসে-যায় না। এদেশের অসহায় জনগোষ্ঠীর জš§ই হয়েছে একশ্রেণীর রাজনৈতিক নেতাদের ভোট দেয়ার জন্য। আর আমাদের দেশের একশ্রেণীর নেতারা এতই স্ববিরোধী যে, তারা মানুষের কাছে মিথ্যাচার করতে কিংবা মানুষকে ভুল বুঝিয়ে নিজের স্বার্থ উদ্ধার করতে দ্বিধাবোধ করেন না। দেশের মানুষকে তারা জীবন্ত দগ্ধ করে পুড়িয়ে মেরে বলেন আমরা জনগণের জন্য সংগ্রাম করছি! অথচ তাদের আন্দোলনের আগুনের তাপে এদেশের অসহায় জনগোষ্ঠী যে পুড়ে মরছে তা তারা ভাবার প্রয়োজনবোধ করছেন না। তারা ভাববেনই বা কেন। তারা কী এদেশের খেটে খাওয়া মানুষকে মানুষ মনে করেন। যদি তারা দেশের মানুষের প্রতি দায়িত্ব নিয়ে কথাবার্তা বলতেন কিংবা তাদের কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতেন, তাহলে আর যা-ই করেন না কেন, তারা নিশ্চয়ই দেশের মানুষকে পেট্রলবোমার আগুনে পুড়িয়ে মেরে বলতেন না আমরা গণতন্ত্র ও মানবতা প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন-সংগ্রাম করছি।
আমরা চাইব না এই দেশ বার্ন ইউনিট হয়ে যাক। আমরা চাইব না এদেশের মানুষ কোনো রাজনৈতিক দলের কিংবা জোটের অপরাজনীতির বলি হোক। এদেশের মানুষ সহজ-সরল। তারা কখনো অমানবিক পন্থায় কিছু পেতে চায় না। তারা চায় সমাজ এবং রাষ্ট্রে যেন ন্যায় প্রতিষ্ঠিত হয়। তারা চায় তাদের ছেলে-মেয়েরা যেন দুধে-ভাতে বেঁচে থাকতে পারে এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশে লেখাপড়া করতে পারে। এদেশের মানুষ মন-প্রাণ দিয়েই চায় তাদের ছেলে-মেয়েরা যেন আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে সমাজ এবং রাষ্ট্রের সেবা করতে পারে। অসহায় জনগোষ্ঠী চায় না কোনো দল কিংবা জোটকে ক্ষমতায় নেয়ার জন্য কিংবা কোনো দল কিংবা জোটকে ক্ষমতা থেকে ফেলে দেয়ার জন্য তাদের সন্তানদের কেউ লাশে পরিণত করুক। আমাদের রাজনৈতিক দল কিংবা জোটের নেতারা যেন পেট্রলবোমা মেরে জীবন্ত মানুষকে দগ্ধ করে পুড়িয়ে মেরে ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখা থেকে বিরত থাকেন। মানুষের জন্য যে রাজনীতি সে রাজনীতি গণমানুষকে পুড়িয়ে মেরে কোনো দিন তার গন্তব্যে পৌঁছতে পারবে না এ কথাটা নেতারা ভালো করেই বোঝেন তা বিশ্বাস করি। কিন্তু ক্ষমতার লোভে অন্ধ হয়ে তারা এতটাই নিচে নেমেছেন যে, তারা নিজেদের স্বার্থে মানুষকে পুড়িয়ে মারতে দ্বিধা করছেন না। আমরা এই রাজনীতি চাই না। আমরা শান্তিমতো থাকতে চাই। রাজনীতির শ্রী যেভাবে হারিয়ে যাচ্ছে তা কোনোভাবেই সামগ্রিক অর্থে সুসংবাদ নয়।

লেখক: শরদিন্দু ভট্টাচার্য্য টুটুল, আইজীবি
www.manobkantha.com/2015/03/18/20469.php#sthash.MuodTs25.dpuf