ইসলাম নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলা সমর্থন করে না ইসলাম শান্তি, কল্যাণ ও প্রগতির ধর্ম, সন্ত্রাসের নয়। ইসলাম ধর্মে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের কোনো স্থান নেই। উগ্র জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসী দানবীয় শক্তি সামাজিক পরিমণ্ডলে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির উদ্ভব করে রাজনৈতিক ফায়দা লোটার চেষ্টা করে। দেশে ধর্মীয় মুখোশধারী অপশক্তির অপকর্ম সম্পর্কে সবাইকে সতর্ক ও সজাগ থাকতে হবে। তবে বলাই বাহুল্য, ইসলামী সন্ত্রাসবাদকে যথাসময়ে দমন করতে না পারলে রাষ্ট্রকে এর জন্য বড় রকম খেসারত দিতে হবে। ইসলামী জামায়াত ও সংগঠনগুলোর মধ্যে যেগুলো ধর্ম ও রাজনীতির নামে সন্ত্রাসী কার্যক্রম করে বেড়ায় এবং দেশে অশান্তি সৃষ্টি করে, তাদের নিষিদ্ধ করা দরকার। উগ্রপন্থী জঙ্গিবাদ এবং চরমপন্থী রাজনৈতিক ইসলামী সংগঠনগুলোর রাষ্ট্রদ্রোহিতামূলক কার্যক্রম দেশের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ। যারা রাষ্ট্রে জঙ্গিপনা সৃষ্টি করে, নৈরাজ্য ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে বেড়ায়, তারা কি কখনো গণতান্ত্রিক শক্তি হতে পারে? বস্তুত এ ধরনের অগণতান্ত্রিক অশুভ শক্তি রাষ্ট্রের জন্য কল্যাণ বয়ে আনার পরিবর্তে রাষ্ট্রে গৃহযুদ্ধের সূত্রপাত করে, রাষ্ট্রের শান্তি ও স্থিতিশীলতা বিনষ্ট করে, রাষ্ট্রের ভিতকেই অবশেষে নড়িয়ে দিতে পারে এবং সমগ্র দেশে অশুভ শক্তির মদদে কায়েমি স্বার্থবাদী মহল অশান্তির অনলকুণ্ড প্রজ্বলিত করে জননিরাপত্তা বিঘ্নিত করতে পারে। সমাজের সচেতন শুভ নাগরিক শক্তিকে এখনই অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে রুখে না দাঁড়ালে আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি ঘটতে পারে। রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের নামে বেপরোয়া গাড়ি ভাঙচুর এবং পুলিশের ওপর অতর্কিতে হামলা ও গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে ত্রাস সৃষ্টির অনুমতি শাশ্বত সত্য ধর্ম ইসলাম এবং কোনো সভ্য রাষ্ট্র দেশের নাগরিককে দেয় না। একটি আধুনিক গণতান্ত্রিক কল্যাণ রাষ্ট্র কস্মিনকালেও জঙ্গিবাদকে রাষ্ট্রে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করার সুযোগ দিতে পারে না। সুসভ্য মানুষ অসভ্য বর্বর জঙ্গি সন্ত্রাসী চক্রের উত্থান ঠেকাতে হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকতে পারে না। জঙ্গিবাদ মূলত আইন অমান্যকারী ও রাষ্ট্রদ্রোহী কট্টরপন্থী অপশক্তি। ইসলামী পরিমণ্ডলে যাদের কোনো স্থান নেই। সমাজবিরোধী অপশক্তির কাজই হলো অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা এবং সমাজে মিথ্যাচার করা, অপবাদ ও মিথ্যা দুর্নাম রটনা করে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা এবং জাতিগত অনৈক্য ও বিভক্তি সৃষ্টি করা, ধর্মের নামে সন্ত্রাস ও নাশকতা কাজে লিপ্ত থেকে জাগতিক ফায়দা লোটা। বস্তুত এরা ধর্ম রাজনীতির নামেই মন্দ কর্ম করে থাকে। গায়ের জোরে তারা তাদের ধর্মগুরু মাওলানা মওদুদীর বিকৃত মনগড়া ভ্রান্ত মতবাদ সমাজ ও রাষ্ট্রে কায়েম করতে চায়। প্রশ্ন হলো ইসলাম কি এদের ভ্রান্ত মতবাদকে সমর্থন করে? জবাবে বলা যায়, ইসলাম বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার অনুপম সওগাত নিয়ে এসেছে এবং মুসলমানদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যেন তারা বিশ্বময় শান্তি প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। কাজেই ইসলাম সমাজবিরোধী দুষ্টচক্রের নৈতিকতাবর্জিত এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের শাস্তি ইসলামে ভয়ংকর। রাষ্ট্রদ্রোহিতার জন্যও কঠিন দণ্ডের আদেশ রয়েছে। আজ যারা শান্তির ধর্ম ইসলামের নামে বিভিন্ন ইসলামী জামায়াত, দল ও সংগঠন কায়েম করে রাষ্ট্রদ্রোহিতামূলক অপকর্ম করে বেড়াচ্ছে, তাদের ব্যাপারে এখনই সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এসেছে। আজ যারা রাজনৈতিক অঙ্গনে জঙ্গিপনা করছে এবং নাশকতা করছে, চোরাগোপ্তা হামলা করছে, ছাত্রদের হাত-পায়ের রগ কেটে দিচ্ছে, নিরীহ মানুষের ওপর নির্বিচারে হামলা করছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর চড়াও হচ্ছে, গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে রাষ্ট্র ও জনগণের ক্ষয়ক্ষতি করছে, জনজীবনে অশান্তি ও অস্থিরতা সৃৃষ্টি করে চলছে, তাদের অবদমিত করা সময়ের অনিবার্য দাবি। দেশে জামায়াত-শিবির চক্রকে যারা আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে গৃহযুদ্ধের ইন্ধন জোগাচ্ছে এবং রাষ্ট্রকে অচল করে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করছে এবং হরতালের নামে জঙ্গিপনা, সন্ত্রাস ও নাশকতা করতে সায় দিচ্ছে, তারা উভয়ে সরকার ও রাষ্ট্রবিরোধী অপরাধমূলক কাজে লিপ্ত। কোনো রাজনৈতিক শক্তি দাবি আদায়ের জন্য সন্ত্রাস ও নাশকতামূলক কাজ করে বিভীষিকাময় পরিস্থিতির উদ্ভব করতে পারে না। যদি কেউ অন্যায়ভাবে অগণতান্ত্রিক কর্মকাণ্ড করে দাবি আদায়ের চেষ্টা করে, তাহলে প্রচলিত আইনে এই অন্যায় দুষ্কর্মের বিচার করা জরুরি দরকার। আল্লাহ মানুষকে নির্দেশ দিয়েছেন যেন তারা পৃথিবীতে শান্তি ও নিরাপদে বসবাস করে এবং বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য সৃষ্টি না করে। আল্লাহ বলেন, 'এবং তাদের বলা হয় যে, তোমরা পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করো না, তারা বলে আমরা তো কেবল শান্তি প্রতিষ্ঠাকারী। সতর্ক হও! নিশ্চয়ই তারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী, কিন্তু তারা এটা বোঝে না' (সুরা বাকারা: ১২, ১৩ আয়াত)। ইসলাম তার অভ্যুদয়ের সূচনালগ্ন থেকেই কায়েমি স্বার্থবাদী সমাজবিরোধী দুষ্টচক্র ও সন্ত্রাসী দানবীয় শক্তির প্রচণ্ড বিরোধিতার মোকাবিলা করে এসেছে। ইসলাম বারবার আক্রান্ত হয়েছে, রক্তাক্ত হয়েছে, ইসলামের খাঁটি অনুসারীরা জুলুম-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, গৃহহারা হয়েছেন, সমাজচ্যুত হয়েছেন, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস ও নিপীড়নের শিকার হয়েছেন, তবু সত্যিকারের রসুল (সা.) প্রেমিক মুসলমানগণ রাষ্ট্রের প্রচলিত আইন ও সংবিধান অমান্য করেননি এবং কোনো রাষ্ট্রদ্রোহিতামূলক কাজে লিপ্ত হননি। তাঁরা সরকারবিরোধিতার নামে কখনো হরতাল পালন করেননি এবং জঙ্গি মিছিল বের করেননি, গাড়ি ভাঙচুর ও গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে রাষ্ট্র ও জনগণের সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি সাধন করেননি। কারণ, ইসলাম নিষেধ করেছে এসব অপকর্ম করার জন্য। ইসলামের দৃষ্টিতে স্বদেশপ্রেম ইমান বা বিশ্বাসের অঙ্গ। মুসলমানগণ যে দেশের নাগরিক, সেই দেশকে ভালোবাসতে এবং দেশের প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে বলা হয়েছে। সরকার ও রাষ্ট্রের প্রতি অবশ্যই আনুগত্য প্রদর্শন করতে হবে। ধর্মীয় আকিদাগত কারণে দমন-পীড়নের শিকার হলেও রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করার সুযোগ নেই। তবে এই এ ক্ষেত্রে দ্বীনকে দুনিয়ার ওপর প্রাধান্য দেওয়ার নীতির প্রতিফলন ঘটবে শান্তিময় পথে আদর্শ উপস্থাপনের মাধ্যমে। কিন্তু কোনোক্রমেই জঙ্গিপনা ও সন্ত্রাসী কাজের অনুমতি ইসলামে নেই। ইসলাম সর্বদা আত্মরক্ষার অনুমতি দেয়, তবে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রেখে এ আদেশ পালন করতে বলা হয়েছে। প্রকৃত কোনো ধর্মভিত্তিক মানবিক চেতনায় উদ্দীপ্ত আধ্যাত্মিক জামায়াত বা সংগঠন রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে পারে না এবং বহিঃশত্রুর সঙ্গে হাত মিলিয়ে সর্বনাশা খেলায় মেতে উঠতে পারে না। এমনকি হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ করে ত্রাস সৃষ্টি করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হতে পারে না। যদি এর বিপরীত সন্ত্রাস ও নাশকতা কাজে কোনো ধর্মভিত্তিক দল ও জামায়াত লিপ্ত হয় এবং এর প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে বুঝতে হবে, এরা ইসলামবিরোধী অপশক্তি। গণতান্ত্রিক সরকার ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনাকে চ্যালেঞ্জ করে বিদ্রোহের দাবানল প্রজ্বলিত করে দেশে অশান্তি ও নৈরাজ্য সৃষ্টির অপতৎপরতায় কেউ লিপ্ত হলে, তাদের সমূলে উচ্ছেদ করা সরকারের দায়িত্ব। নগরভিত্তিক মদিনা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যেসব মুসলিমবিদ্বেষী চরমপন্থী ইহুদি মক্কার কোরাইশদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে মুসলমানদের সমূলে উচ্ছেদ ও নির্বিচারে নিধন করে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়ে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল, তাদের সেদিন মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধের জন্য ইসলাম কঠিন দণ্ডে দণ্ডিত করেছিল। সেদিন মদিনা সনদ (যা লিখিত প্রথম সংবিধান)-এর চুক্তি ভঙ্গ করে ইহুদি সম্প্রদায় বদর যুদ্ধের সূচনা করে, মুসলমানদের অস্তিত্ব বিলোপের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছিল, সেদিন ইহুদি নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি এবং ওলামাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ তদন্তসাপেক্ষে প্রমাণিত হওয়ায় অনেককে কঠিন দণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছিল। স্বাধীনতাবিরোধী রাষ্ট্রদ্রোহী দেশ ও জাতির শত্রু হিসেবে যেসব দল ও সংগঠন চিহ্নিত রাষ্ট্র তাদের বিচার করতে পারে। এখানে আপত্তি তোলার কোনো সুযোগ নেই। মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধের মামলায় আটককৃত জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতাদের মুক্তি ও ট্রাইব্যুনাল বাতিলের দাবিতে হরতাল ও বিক্ষোভ কর্মসূচির নামে সহিংস তৎপরতা চালাতে দেখা গেছে জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরকে। তারা রাস্তায় নেমে পুলিশের ওপর হামলা, গাড়ি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, হাতবোমা নিক্ষেপ করে দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা করেছে। উদ্দেশ্য কেবল একটাই, এদের নাশকতামূলক কাজে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে দেশের জনগণ ও বিচারসংশ্লিষ্টরা এ বিচার থেকে পিছ পা হয়ে পড়বে। কিন্তু এদের আশায় গুড়ে বালি। এমনটি কখনো হবার নয়। তবে জামায়াত-শিবির দেশব্যাপী নৈরাজ্য সৃষ্টি করে বিচার বানচাল বা বাধাগ্রস্ত করার পরিস্থিতি তৈরি করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। জামায়াত-শিবির যে হামলা ও নাশকতা চালাচ্ছে, তা জননিরাপত্তাকে বিঘ্নিত করছে, যা চলতে দেওয়া সংগত হবে না। রাষ্ট্র যখন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আটককৃত জামায়াতে ইসলামী নেতাদের বিচার কাজ সম্পন্ন করতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত, তখন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারকাজ বানচালের চেষ্টা করা এবং বিচার বন্ধের অন্যায় দাবি তোলা কি রাষ্ট্রদ্রোহিতামূলক অপরাধজনক কাজ নয়? বস্তুত ইসলাম ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার ওপর জোর দেয়। আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যক্রম যেন ধর্ম নির্দেশিত ও আন্তর্জাতিক মানের হয়, সেদিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখতে হবে। রাষ্ট্র বিচার বানচাল ও বাধাগ্রস্ত করার অপচেষ্টা থেকে সংশ্লিষ্ট সব মহলকে দূরে থাকতে নির্দেশ দিয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে রাস্তায় নেমে হরতাল ও বিক্ষোভ কর্মসূচির নামে সহিংস তৎপরতা চালানো এবং নাশকতা কাজ করে বিভীষিকাময় পরিস্থিতির উদ্ভব করা অন্যায় গর্হিত কাজ। জামায়াত-শিবিরের কর্মসূচিতে একটি বড় দল প্রকাশ্যে সমর্থন জুুগিয়ে প্রকারান্তরে এটাই প্রমাণ করছে যে তারা আসলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায় না। জামায়াত-শিবিরের ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের জন্য নিন্দা না জানিয়ে তাদের রাজনৈতিক হরতাল কর্মসূচিতে সমর্থন জানিয়ে বড় একটি দল আবারও প্রমাণ করল, তারা জামায়াত নেতাদের বিচার ট্রাইব্যুনালে হোক, এটা চায় না। অতীত ভুলের জন্য যখন জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়া হয় না এবং রাষ্ট্র ও সরকারের প্রতি আনুগত্য স্বীকার করতে গড়িমসি করা হয়, তখন রাষ্ট্র মানবতাবিরোধী অপরাধীদের ধরে আইনের কাঠগড়ায় দণ্ডায়মান করে কঠিন দণ্ডাদেশ দিলে অবাক হওয়ার কিছুই নেই। জামায়াত-শিবিরের ন্যায় কোনো উগ্রবাদী চরমপন্থী সংগঠনের দ্বারাই কেবল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর ঘৃণ্যতম নৃশংস ও বর্বরোচিত হামলা এবং গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটতে পারে। বস্তুত পুলিশ বাহিনীর ওপর হামলা করে আতংক ছড়িয়ে দেওয়া এবং তাদের প্রকারান্তরে দুর্বল ও অবদমিত করার জন্যই এই পরিকল্পিত হামলা। জনগণের জানমালের নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব রাষ্ট্র যাদের ওপর ন্যস্ত করেছে, তাদের ওপর হামলা করে মনোবল ভেঙে দেওয়া হলে রাষ্ট্রে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটতে পারে। আর এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করবে জামায়াত-শিবির। একমাত্র জঙ্গি সংগঠন ছাড়া অন্য দল ও সংগঠন রাষ্ট্র ও সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে আইনের বারোটা বাজাতে পারে না। জঙ্গিবাদ ও উগ্রমৌলবাদ আইন ও সংবিধানবিরোধী বলেই প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী পুলিশের ওপর হামলা করার দুঃসাহস দেখাতে পারছে। পুলিশভ্যানসহ সরকারি গাড়ি, যাত্রিবাহী গাড়ি, নির্বিচারে সব কিছুর ওপর শিবির হামলা চালিয়ে ত্রাস সৃষ্টি করছে। রাজনৈতিক দলগুলোর বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচি থাকতে পারে, শান্তিপূর্ণভাবে নানা কর্মসূচি তারা পালন করছে এবং করবে। এতে কারো আপত্তি থাকতে পারে না। তবে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার সুযোগ রাষ্ট্র কোনো নাগরিককেই দেয় না। রাষ্ট্র ও সরকারের অনুগত্যের বিষয়ে ইসলাম কী বলে? ইসলামের শিক্ষা হলো 'উলিল আমর' বা আদেশ দেওয়ার অধিকারী শাসককে মানতে হবে। আল্লাহ বলেন, 'হে যারা ইমান এনেছ! তোমরা আল্লাহর আনুগত্য করো, তার রাসুলের আনুগত্য করো এবং তোমাদের কর্তৃপক্ষেরও (আনুগত্য) করো। কিন্তু (কর্তৃপক্ষের সঙ্গে) কোনো বিষয়ে তোমরা মতভেদ করলে এ বিষয়টি আল্লাহ ও রাসুলের সমীপে উপস্থাপন করো, তোমরা যদি (সত্যিকার অর্থে) আল্লাহ ও পরকালে ইমান রাখো (সুরা নিসা: ৪:৬০) কিন্তু সরকার ও রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণার কোনো সুযোগ ইসলাম কাউকে দেয় না। আল্লাহ বলেন, 'ওয়া ইয়ানহা আনিল ফাহশায়ি ওয়াল মুনকারি ওয়াল বাগয়ি' অর্থাৎ_'আল্লাহ নিষেধ করেন অশ্লীল কথা বলতে, অসংগত কাজ ও বিদ্রোহ করতে।' ইসলাম ন্যায়বিচারের মানদণ্ডকে সমুন্নত করতে আদেশ দিয়েছে এবং কারো প্রতি অবিচার করতে নিষেধ করে। আসলে বিদ্রোহের সুর ধ্বনিত হওয়ার কারণগুলো চিহ্নিত করে তা সুরাহা করার ব্যবস্থা করা হলে কোনো অপশক্তি বিশৃংখলা সৃষ্টি করার সুযোগ পায় না।গৃহযুদ্ধের আশঙ্কা যারা করছেন, তা অমূলক নয়। যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে দেশকে গৃহযুদ্ধের দিকে চিহ্নিত যে মহল ঠেলে দিতে চাচ্ছে, এদের অপতৎপরতা রুখতে হবে।যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে রাজধানীর শাহবাগে গত ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে গড়ে ওঠা প্রজন্ম চত্বরে তারুণ্যের বান ডেকেছে। প্রথম দিকে ব্লগার আর ফেইসবুক বন্ধুরা এ আন্দোলন শুরু করলেও যৌবনের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসের সঙ্গে দলীয় খোলস ছেড়ে স্বাধীনতার পক্ষের সব শুভ শক্তি একাত্তরের চেতনা নিয়ে যুক্ত হয়ে এক নবজাগরণ সৃষ্টি করেছে। এই গণজাগরণ ও গণ-আন্দোলনের উত্তাল ঢেউ ছড়িয়ে পড়েছে সমগ্র বাংলাদেশে। শান্তিপূর্ণ এই আন্দোলনে দেশের সমগ্র শান্তিকামী মানুষের সমর্থন রয়েছে। ইসলাম গণতান্ত্রিক শান্তিপূর্ণ অহিংস আন্দোলনকে শান্তিময় সমাজ বিনির্মাণের জন্য সমর্থন করে। ধর্মীয় ও রাজনৈতিক সন্ত্রাসবাদ উচ্ছেদ করে শান্তি স্থাপনের শিক্ষা ইসলামই প্রদান করেছে। ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টিকারী জঙ্গি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আজ তরুণ প্রজন্মকেই রুখে দাঁড়াতে হবে। শান্তির ধর্ম ইসলাম শুভ ও কল্যাণমণ্ডিত যেকোনো মানবকল্যাণপ্রদ শান্তিময় আন্দোলন কর্মসূচি প্রতি সমর্থন জানাতে তার অনুসারীদের নির্দেশ প্রদান করেছে। অশুভ শক্তিকে রুখতে যে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে, তা আরো ত্বরান্বিত ও বেগবান হোক। প্রবল আন্দোলনের উত্তাল ঢেউয়ে মানবতার শত্রু মওদুদী জামায়াত-শিবির চক্র তলিয়ে যাক এবং নিশ্চিহ্ন হোক_এটাই শুভশক্তির প্রত্যাশা। বাংলার পলি মাটিতে স্বাধীনতাবিরোধী জঙ্গি সন্ত্রাসবাদের স্থান হতে পারে না।
লেখক : আমীর মাহমুদ ভূঁইয়া, সাংবাদিক ও কলামিস্ট
protapanws@yahoo.com