পড়াই প্রথম বাণী । পড়ার সাথে সখ্যতা গড়ে তুলতে আমার প্রচেষ্টা । কবিতা আমার ভীষণ প্রিয় । Poetry touches my mind, moves me and makes me and forget self. তাই আমার প্রিয় কিছু কবিতা, প্রবন্ধ ও আরো কিছু বিষয় দিয়ে সাজিয়েছি আমার এ বর্ণমালার ঊচ্চারনের ব্লগ । এখানে বেড়াতে এসে যদি আপনার মনে সামান্য প্রশান্তির ছোঁয়া লাগে, তবে ভাববো আমার প্রচেষ্টা সার্থক হয়েছে ।
Tuesday, 24 March 2015
সংঘাত নয়, শান্তি চাই -- মুফতি মুহাম্মদ আবদুল লতিফ শেখ
বাংলাদেশ একটি মুসলিমপ্রধান দেশ। এ দেশের শতকরা ৯০ ভাগ মানুষ মুসলমান এবং ধর্মভীরু। তারা ধর্মকে নিজেদের মাঝে লালন করতে ভালোবাসে। কিন্তু অনেক সময় কুশিক্ষার কারণে অনেকে ইসলামের মূল সৌন্দর্য বুঝতে অক্ষম হয়ে পড়ে। তখন তারা না বুঝে ইসলামবিরোধী কিছু কাজও করে বসে। অনেক সময় না জানার কারণে গর্হিত কাজ করাকে তারা নিজেদের ধর্মের জন্য ক্ষতিকর বলেও মনে করে না। সম্প্রতি আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি মুসলিমপ্রধান বাংলাদেশের রাজনৈতিক সহিংস অবস্থা দেখে কষ্ট হয়।
অথচ মুসলমানদের কথা-কাজ, আচার-ব্যবহার, লেনদেন সবকিছুই হওয়া কর্তব্য বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর আদর্শ অনুযায়ী। বিশ্বনবীর উম্মত দাবি করে তার আদর্শ অনুযায়ী জীবন না গড়া নিজের সঙ্গেই প্রতারণা করার শামিল। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, 'তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসূলের মাঝেই রয়েছে সর্বোত্তম আদর্শ।' (সূরা আহজাব : ২১)। একজন মুসলিমের কর্তব্য হলো, জীবনের সব ক্ষেত্রে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) কে অনুসরণ করা। ব্যক্তিজীবন, পারিবারিক জীবন, সামাজিক জীবন, অর্থনৈতিক জীবন, সাংস্কৃতিক জীবন, রাষ্ট্রীয় জীবন এবং আন্তর্জাতিক জীবন তথা সবক্ষেত্রে নববি আদর্শকে বাস্তবায়ন করাই মুসলিমের একমাত্র লক্ষ্য হওয়া কর্তব্য।
আল্লাহ তায়ালা সর্বশেষ নবী ও রাসূল হজরত মুহাম্মদ (সা.) কে শান্তি ও সম্প্রীতির বাণী শোনাতে সর্বশেষ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ জীবনবিধান তথা ইসলাম দিয়ে আমাদের মাঝে প্রেরণ করেছেন। তাঁর আগমনের আগে এ বিশ্বে ভয়ানক অরাজক পরিস্থিতি বিরাজ করছিল। গোত্রে গোত্রে হিংসা-বিদ্বেষ আর মারামারি-হানাহানি ছিল নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। খুনের বদলা খুন ছিল তখনকার রীতি। নবুয়ত লাভের আগেই মহানবী (সা.) জাতিকে একটি অহিংস এবং সম্প্রীতিপূর্ণ সমাজ উপহার দিতে গঠন করেছিলেন একটি সামাজিক শান্তি সংঘ। যার নাম হিলফুল ফুজুল। এ সংঘের মূল কাজ ছিল সামাজিক জননিরাপত্তার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা। হিজরতের পরে মদিনায় গিয়ে তিনি আউস ও খাজরাজ গোত্রের মাঝে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা যুদ্ধকে বন্ধ করে শান্তি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, যা সর্বজনবিদিত। শুধু তাই নয়, সপ্তম হিজরিতে কোরাইশরা যখন মুসলমানদের মক্কায় ঢুকতে বাধা দিয়েছিল তখন তিনি তাদের সঙ্গে সংঘাতে না গিয়ে বরং সন্ধি করেছিলেন, যা ইসলামের ইতিহাসে হুদাইবিয়ার সন্ধি নামে পরিচিত। আজ আমরা যারা নিজেদের উম্মতে মুহাম্মদি বলে দাবি করছি, মহানবী (সা.) এর জীবন থেকে তাদের শিক্ষা গ্রহণ করা একান্ত জরুরি।
আমরা নিজেদের পরিচয় দিচ্ছি মুসলিম বলে। অথচ কাজ করছি ইসলামের সুমহান আদর্শের সম্পূর্ণ বিপরীত। ইসলাম মানে আল্লাহর কাছে আত্মসমপর্ণ করা, ইসলাম মানে শান্তি। ইসলাম এসেছে শান্তির মহান বার্তা নিয়ে। আল কোরআনে বলা হয়েছে, 'আর তোমরা স্মরণ করো আল্লাহর নেয়ামতের কথা, তোমরা ছিলে পরস্পর পরস্পরের শত্রু। অতঃপর আল্লাহ তায়ালা স্বীয় নেয়ামত ইসলামের মাধ্যমে তোমাদের ভাই ভাই বানিয়ে দিলেন।' (সূরা আলে ইমরান : ১০৩)। শান্তির ধর্মের অনুসারী মুসলিমরা কখনও শান্তি বিনষ্ট করে এমন কাজ করতে পারে না। আল্লাহ তায়ালা বলেন, 'তোমরা জমিনে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরে তাতে বিশৃংখলা সৃষ্টি করো না।' (সূরা আরাফ : ৫৬)। তাই তো ইসলামে অরাজকতা বা নৈরাজ্য সৃষ্টি করাকে হারাম বলা হয়েছে। এমনকি সামাজিক কোন্দল ও বিশৃঙ্খলাকে হত্যার চেয়ে বড় অপরাধ বলা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, 'ফেতনা বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হত্যার চেয়ে জঘন্য অপরাধ।' (সূরা বাকারা : ১৯১)। মানুষ হত্যার অপরাধের শাস্তি বড় ভয়াবহভাবে কোরআনে প্রকাশ করা হয়েছে। যেমন_ আল্লাহ তায়ালা বলেন, 'যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো মোমিনকে হত্যা করবে তার পরিণতি হলো স্থায়ীভাবে জাহান্নাম। আল্লাহ তায়ালা তার প্রতি ক্রোধান্বিত থাকবেন, তার প্রতি অভিসম্পাত করবেন এবং তার জন্য প্রস্তুত করে রাখবেন ভয়ানক শাস্তি।' (সূরা নিসা : ৯৩)। অন্য এক আয়াতে বলা হয়েছে, 'যে ব্যক্তি কোনো মানুষের হত্যার বিনিময় ছাড়া বা জমিনে ফ্যাসাদ সৃষ্টির অপরাধ ছাড়া হত্যা করল সে যেন সব মানুষকেই হত্যা করল।' (সূরা মায়েদা : ৩২)। মহানবী (সা.) বিদায় হজে মানুষের জান, মাল ও ইজ্জতের নিরাপত্তার ঘোষণা দিয়ে বলেন, 'এই পবিত্র নগরীতে, এই পবিত্র মাসে, এই দিন (কোরবানির দিন) যেমন পবিত্র, তোমাদের একের কাছে অন্যের জান, মাল ও ইজ্জত ঠিক তদ্রূপ পবিত্র।' (বোখারি : ৬৭)। এক হাদিসে মহানবী (সা.) বলেন, 'মুসলমানকে গালি দেয়া পাপের কাজ আর তাকে হত্যা করা কুফরি।' (বোখারি : ৪৮)। অন্য এক হাদিসে বলা হয়েছে, 'প্রকৃত মুসলিম ওই ব্যক্তি, যার হাত ও জবানের কষ্ট থেকে অন্য মুসলিমরা নিরাপদ থাকে।' (বোখাার : ১০)।
ইসলাম বলে, 'ফরজ কাজের পরে সর্বোত্তম কাজ হলো একজন মোমিনের হৃদয়ে আনন্দ প্রবেশ করানো।' (তাবরানি : ৭৯১১)। তাই জনগণের স্বার্থ ও শান্তির কথা মাথায় রেখে দেশের চলমান পরিস্থিতি বন্ধ করা দেশের নেতাদের চলমান সময়ের প্রথম ও প্রধান দায়িত্ব। গুটি কয়েক মানুষের স্বার্থ রক্ষার জন্য সাধারণ মানুষ কেন প্রাণ দেবে? আমি মনে করি, শাসকগোষ্ঠী ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের উদ্দেশ্য যখন সাধারণ জনগণের মনে শান্তি দেয়া, তাদের মুখে হাসি ফোটানো তবে কেন এ পরিস্থিতি এতদিন বিরাজ করছে। এমতাবস্থায় দেশের রাজনৈতিক নেতাদের উচিত জ্ঞানী-গুণীদের সঙ্গে নিয়ে আলোচনায় বসে পরামর্শের ভিত্তিতে এ সঙ্কটের সমাধান করা এবং দেশে একটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ফিরিয়ে আনা। যদি জনগণের শান্তির জন্য কেউ ব্যক্তিস্বার্থ বিসর্জন দিতে না পারে তবে সে রাজনীতি করবে কেন? তাই সহিংসতা নয়, বরং আলোচনার টেবিলে বসে মতবিরোধপূর্ণ ইস্যুগুলো সমাধান করা কর্তব্য। কেননা, জরুরি মুহূর্তে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা ইসলামের আদেশ। মুসলিম হিসেবে এ আদেশ আমাদের পালন করা কর্তব্য। আল্লাহ তায়ালা বলেন, মুসলিমদের কাজগুলো পরামর্শের ভিত্তিতে হয়ে থাকে। (সূরা শুরা : ৩৮)।
মনে রাখা দরকার, ইসলামের কিছু বিধান মান্য করা আর কিছু বিধান অমান্য করা কখনোই কাম্য হতে পারে না। বরং এরূপ যারা করে তাদের প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন, 'তোমরা কি কেতাবের কিছু বিধান বিশ্বাস করছো আর কিছু বিধানকে অস্বীকার করছো? তোমাদের মধ্যে যে এরূপ করবে তার পরিণতি দুনিয়ায় লাঞ্ছনা এবং আখেরাতে তাকে কঠিন আজাবে নিপতিত করা হবে।' (সূরা বাকারা : ৮৫)। তাই রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টির মতো ইসলামবিরোধী কাজ থেকে বিরত থাকা
লেখক : মুফতি মুহাম্মদ আবদুল লতিফ শেখ, প্রধান মোহাদ্দেস, দারুননাজাত সিদ্দিকীয়া কামিল মাদরাসা, ঢাকা